দৈনিক ওঠানামার মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

আগের সংবাদ

জনগণের সাহসেই পদ্মা সেতু : বন্যার দুর্ভোগ ও ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার > বিএনপির নেতা কে? সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

আসামে বন্যায় মৃত ৮২ : থইথই জল, তবু খাবার জন্য নেই এক ফোঁটাও

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : প্রবল বন্যায় ভারতের আসামের ৩২টি জেলার প্রায় ৪৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চলতি বছর আসামে বন্যা পরিস্থিতি ও ধসে মোট ৮২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এখনো নিখোঁজ সাতজন। এদিকে যত দিন গড়াচ্ছে, আসামে বন্যা পরিস্থিতির ততই অবনতির ছবি সামনে আসছে। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতিতে আরো ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একাধিক নদীর জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে ফোন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর আগে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সূত্রে প্রকাশ, ভারতের উত্তর-পূর্বের এ রাজ্যটি ভয়াবহ বন্যায় তুমুল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারানো লাখ লাখ মানুষ স্বপ্ন দেখার জোরটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন।
প্রত্যন্ত গ্রাম উদিয়ানার রঞ্জু চৌধুরী বলেন, চারদিকে থইথই পানি অথচ পান করার জন্য নেই এক ফোঁটাও। তিনি জানান, কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণের পর পানি হুট করে এত বেড়ে যায় যে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সড়কগুলো পুরোপুরি ডুবে যায়। পানি যখন তাদের ঘরে ঢুকে, নিজেদের নিরাপদ রাখার চেষ্টায় পরিবারের সদস্যরা তখন হুড়োহুড়ি করে অন্ধকারের মধ্যেই বাড়ির এক জায়গায় চলে আসেন। এরপর থেকে দুই দিন ধরে সেই বাড়িতেই পড়ে আছেন তারা, যেটিকে মনে হচ্ছে সমুদ্রের মধ্যে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। গ্রামের পর গ্রাম ডুবিয়ে, বিপুল পরিমাণ জমির ফসল নষ্ট এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস করে এবারের নজিরবিহীন বৃষ্টিপাত ও বন্যা আসামজুড়ে ধ্বংসের চিহ্ন রেখে যাচ্ছে।
আসামের পাশাপাশি প্রতিবেশী মেঘালয়ও তুমুল বৃষ্টি দেখেছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে রাজ্যটির অন্তত ১৮ জনের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসামের সরকার উদ্বাস্তুদের জন্য ১ হাজার ৪২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খুললেও বিপর্যয়ের মাত্রা এমনই যে তাতেও কাজ হচ্ছে না। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অবস্থাও বেহাল। চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হলো আসাম। এর আগে মের বন্যা রাজ্যটির অন্তত ৩৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। কামরূপ জেলার পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক, সেখানে কয়েকশ লোক এখনো তাদের ঘরেই

আটকা পড়ে আছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ৬৪ বছর বয়সি সিরাজ আলী জানান, যখন পানি তাদের গ্রামে ঢুকে পড়ে এবং সবকিছু ধ্বংস করতে থাকে, তখন নিজের জীবন নিয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তারপরও নিজেদের জিনিসপত্র ও ‘আজীবনের স্মৃতি’ পাহারা দিতে তিনি বাড়িতে থাকারই সিদ্ধান্ত নেন, যার একাংশ এখন পানির নিচে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা মোকাবিলায় অগ্রগতির ক্ষেত্রে রাজ্যের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাহত হলেও এই দুর্যোগের পেছনে আরো অনেক ‘ফ্যাক্টর’ও আছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জয়শ্রী রাউত বলেন, এবারের বন্যা পরিস্থিতি যে মারাত্মক এবং বৃষ্টির পুনরাবৃত্তি যে ক্রমশ বাড়ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে একে পুরোপুরি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার আগে আমাদের বন ধ্বংসের মতো মানবসৃষ্ট ফ্যাক্টরগুলোকেও বিবেচনায় নেয়া দরকার। তার মতে, বড় বড় গাছ, বিশেষ করে নদীর কাছে থাকা গাছ, যেগুলোর শেকড় পানি ধরে রাখতে পারে, সেগুলো কেটে ফেলা বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। তবে এ ধরনের কারণ বিশ্লেষণের সময় নেই রঞ্জু চৌধুরীদের। গত শনিবার উদিয়ানার মেঘলা দিগন্তে যখন সূর্য ডুবছে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, সে সময় তিনি তার অর্ধনিমজ্জিত বাড়ির বাইরে উদ্বিগ্ন মুখে বসেছিলেন। অন্ধকার হয়ে আসা অনিশ্চিত আকাশের দিকে তাকিয়ে তার আকুল জিজ্ঞাসা, এখন পর্যন্ত ত্রাণের নামে কেউ আমাদের কিছু দেয়নি। কেউ কি আদৌ আসছে?

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়