বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ : সরকারের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ বাম জোটের

আগের সংবাদ

ত্রাণ পৌঁছেনি প্রত্যন্ত জনপদে : এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ, সিলেট বিভাগে বন্যায় ২২ জনের মৃত্যু

পরের সংবাদ

মালয়েশিয়াকে রুখতে প্রস্তুত সাবিনারা

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক নারী ফুটবলাররা অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও সিনিয়র দল সেভাবে পায় না। নারী ফুটবল দলের সাফল্যটা মূলত বয়সভিত্তিক পর্যায়ে। গত ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। যদিও জাতীয় দলের ম্যাচ তেমন আয়োজন হয় না। আগামী আগস্টে ভারতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। তাই সাফ সামনে রেখে প্রস্তুতি হিসেবে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ২৩ ও ২৬ জুন ফিফা উইন্ডোর দুটি প্রীতিম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। নারী ফুটবলে বাংলাদেশের পথচলা শুরু ২০০৫ সালে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেয়েদের অভিষেক ঘটে। ২০০৩ সালে চালু হয় প্রথম ঘরোয়া নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট। এর প্রায় দুই বছর পর এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এ টুর্নামেন্টে। ওই সময়ে মেয়েদের ফুটবলে টেনে আনা দুষ্করই ছিল। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ১১ মেয়েকে নিয়ে ২৩ সদস্যের ফুটবল দল গড়ে ফেডারেশন তখন কোরিয়ায় পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ দলকে। মাত্র তিন মাসের অনুশীলন। এরপর ভারতে গিয়ে শুধু চারটি প্রস্তুতি ম্যাচ। এমন অল্প অনুশীলনে কি আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করা যায়? ফলও তাই হলো খারাপ। এএফসির ওই টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে গুয়ামের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে হারে ২৪-০ গোলে! গ্রুপের শেষ ম্যাচে হংকংয়ের সঙ্গে যদিও লড়াই করে হেরেছিল ২-৩ গোলের ব্যবধানে। অথচ সেই হংকংকেই চলতি বছরের মার্চে জকি ক্লাব অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্টে ৬-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। মালয়েশিয়া, ইরান, হংকং ও বাংলাদেশকে নিয়ে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিপক্ষের জালে গোল দিয়েছিল ২৪টি! হয়েছিল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।
বাংলাদেশের মেয়েদের এমন বদলে যাওয়ার রহস্য একটাই দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলন। পাশাপাশি বেশি বেশি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া। এমনিতেই বয়সভিত্তিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে কয়েক বছর ধরে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১৪ সালে নেপালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে শুরু। এরপর তাজিকিস্তানে একই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন, ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাইপর্বেও সেরা। এরপর গত বছর ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টের পর মার্চে হংকংয়ে চার জাতি জকি কাপেও হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের মেয়েরা এবার ঘরের মাঠে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ভালো ফলাফল পেতে মরিয়া। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচে মালয়েশিয়ার কাছে যাচ্ছেতাইভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়াদের সেই হারের প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ এখন সাবিনাদের। গতকাল ঢাকায় পৌঁছেছে মালয়েশিয়া নারী ফুটবল দল। আগামী ২৩ ও ২৬ জুন কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতিম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া নারী ফুটবল দল। ম্যাচ দুটি হওয়ার কথা ছিল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে, কিন্তু ওই জেলার বন্যার ভয়াবহতার কারণে ম্যাচ দুটি ঢাকায় নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে বাফুফে। ম্যাচ দুটি খেলার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ মাস পর জাতীয় নারী ফুটবল দল আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামছে। এই ম্যাচ দুটি আগামী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য সাবিনাদের দারুণ প্রস্তুতি হবে বলেই মনে করছেন দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন।
শক্তিমত্তা কিংবা র‌্যাঙ্কিং বিবেচনায় বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে মালয়েশিয়া। তারপরও ঘরের মাঠের সুবিধা শতভাগ কাজে লাগিয়ে, দলের ফুটবলাররা ইতিবাচক ফুটবল উপহার দেবে বলে বিশ্বাস গোলাম রব্বানী ছোটনের।
বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ভালো দিক হচ্ছে, মেয়েরা নিয়মিত অনুশীলনের মধ্যে আছে এবং তারা অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। এখন তারা অভিজ্ঞও হয়েছে। আমি মনে করি, এই ম্যাচটা অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে। আর দেশের মাটিতে যখনই মেয়েরা ফুটবল খেলেছে, তখনই ভালো ফুটবল উপহার দিয়েছে।
বড় টুর্নামেন্ট কিংবা আন্তর্জাতিক পরিসরে ফল পেতে বেশি বেশি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার বিকল্প নেই বলে মনে করেন কোচ ছোটন। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ বলেন, মেয়েরা যত বেশি আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলবে তত বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। শুধু তাই নয়, এতে তাদের ভুলত্রæটি নিয়েও কাজ করা যাবে।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এখন আর অপরিণত নয়। আর তাই অজুহাত দেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। এমন মন্তব্য স্ট্রাইকার সাবিনা খাতুনের। সে তাড়না থেকেই মালয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করে র‌্যাঙ্কিংয়ে ফেরার লক্ষ্য ফুটবলারদের। কমলাপুরে ম্যাচ হওয়ায় বাড়তি অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন মারিয়া মান্ডারা। এদিকে লক্ষ্য পূরণে প্রস্তুতি যথেষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন।
কজনারই-বা ভাগ্যে জোটে প্রধানমন্ত্রীর সম্মাননা। আমাদের নারী ফুটবলাররা তা পেয়েছেন একাধিকবার। সরকারপ্রধানের কাছ থেকে পাওয়া উপহার অবশ্যই বড় প্রাপ্তি, যা অনুপ্রেরণা জোগাবে আরো ভালো করতে। তবে প্রাপ্তির আনন্দে অলস সময় কাটানোর উপলক্ষ নেই। তাই নারীদের প্রস্তুতি চলছে পরবর্তী মিশনের জন্য।
দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে থাকায় র‌্যাঙ্কিংয়ে নেই নারী দল। অবশ্য ইচ্ছে করে ছিল না এই নির্বাসন। করোনার ধাক্কা সামলে আবার যখন মাঠে ফেরার উপলক্ষ, তখন বেজায় সিরিয়াস ফুটবলাররা। কারণ খুদে ফুটবলাররা যে এখন আরো পরিণত। সে তাড়না থেকেই ভালো করার তীব্র আকাক্সক্ষা।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, আগে আমাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও এখন সেটা নেই। খেলোয়াড়রা দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে। বয়সভিত্তিক দল থেকে আসা মারিয়া, কৃষ্ণাদেরও জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ফলে মালয়েশিয়া যদিও ভালো টিম, ভালো করলে আমাদের জন্য সুযোগ থাকছে র‌্যাঙ্কিংয়ে ফেরার।
বন্যার কবলে পড়ে সিলেটের ম্যাচ এখন কমলাপুরে। তাতে অবশ্য সুবিধাই হয়েছে নারী দলের। কারণ এ ভেন্যুতে বাংলাদেশের আছে বহু আনন্দের উপলক্ষ। র‌্যাঙ্কিংয়ে ফেরার মুহূর্তটা তেমনই উপলক্ষে সাজাতে চান মারিয়া মান্ডারা
মারিয়া বলেন, টার্ফ মাঠে খেলা হবে। এটা আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধা। কারণ এখানে আমরা নিয়মিত অনুশীলন করছি। তাই আমরা চেষ্টা করব কমলাপুরে দর্শককে ভালো খেলাটা উপহার দিতে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়