বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ : সরকারের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ বাম জোটের

আগের সংবাদ

ত্রাণ পৌঁছেনি প্রত্যন্ত জনপদে : এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ, সিলেট বিভাগে বন্যায় ২২ জনের মৃত্যু

পরের সংবাদ

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা : বছর শেষের আগে তেলের দাম হবে ১৫০ ডলার

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বে নতুন জ্বালানি সংকট তৈরি করেছে। তেলের দাম বাড়ছে। এটা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম গ্যালন প্রতি পাঁচ ডলার ওঠানামা করছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা তেল বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে জরুরি সময়ের জন্য সংরক্ষিত রিজার্ভ থেকে সরাসরি সরবরাহ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে তেল উত্তোলন বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে। রিয়াদ জানিয়েছে, জুলাই বা আগস্ট আগ পর্যন্ত উত্তোলন বাড়ানো হবে না। বিষয়টি ক্রেতাদের জন্য একটি সান্ত¡না হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের দাম কমছে না। মূল্যবৃদ্ধির এই ধারা চলতে থাকলে বছর শেষ হওয়ার আগেই তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৫০ ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও তেমনটি ঘটেনি। ওই বছর তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৪৫ ডলারে পৌঁছেছিল। তেলের মূল্যের এই যে ঊর্ধ্বগতি বিশেষজ্ঞরা তার জন্য মোটামুটি চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথম কারণ তেলের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও তেল ও তেলজাত সামগ্রীর ব্যবহার কমেনি। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন সত্ত্বেও ২০২২ সালের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে তেলের চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে। একদিকে ক্রেতাদের আস্থা পড়ে গেছে অন্যদিকে মার্কিন ক্রেতারাও বেশি করে কেনাকাটা করেছে। অর্থনীতির ভাষায় একে বলা হয় স্ট্যাগফ্ল্যাশন। যার অর্থ একদিকে জিনিসের দাম বাড়ছে অন্যদিকে চাহিদা না কমে বেড়েছে। জুলাই-আগস্ট মাসে পরিবহন জ্বালানির চাহিদা বাড়বে। করোনার জন্য দুই বছরের বেশি পর্যটন খাত থমকে থাকার পর এখন চাঙ্গা হচ্ছে। চীনের বিশাল পরিমাণে জ্বালানি মজুত রাখার সামর্থ্য আছে এবং এই মজুত থেকে মহামারিকালে চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। সেই মজুত এখন ফুরিয়ে এসেছে, স্বাভাবিকভাবেই আগামী মাসগুলোতে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা যায়, অশোধিত তেল উত্তোলনের পর তা শোধনের পর ব্যবহার উপযোগী করা কিছুটা সময় সাপেক্ষ। জ্বালানি তেল ছাড়াও অশোধিত তেলের বহু উপজাত রয়েছে, অনেক পণ্যসামগ্রী এ থেকে তৈরি হয় যার জন্য দরকার হয় বিভিন্ন রকম রাসায়নিক দ্রব্য ও প্রক্রিয়া। শোধনাগারগুলো চাইলেই দ্রুত তা করতে পারে না। তাছাড়া একেকটি শোধনাগার একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি তেলজাত পণ্য শোধন করে। রাতারাতি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা যায় না। মহামারির আগে ২০১৯ সাল থেকেই তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক তেল শোধনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এখন ওইসব শোধনাগার পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা সঙ্গত কারণেই একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হবে।
তেলের মূল্য বৈশ্বিক অর্থনীতিকে কতটা নাড়া দিতে পারে ১৯৭০-এর দশকের তেল সংকট সেটি দেখিয়ে দিয়েছে। ওই সংকট শিখিয়েছে কীভাবে তেল ও তেলজাত পণ্য ভবিষ্যৎ প্রয়োজন পূরণের জন্য মজুত করে রাখতে হয়। তবে অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে তেল মজুত খুব দ্রুতই ফুরিয়ে আসে। এই বিষয়টিকে তেলের মূল্যবৃদ্ধির তৃতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত কর যায়। ভবিষ্যৎ ক্রেতাদের আগাম অনুমান তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাজ করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
তেল শিল্পের অচলাবস্থা কাটাতে সবার আগে দরকার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। মহামারির সময় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ২০ লাখ ব্যারেল ছিল। তবে এই জোট বর্তমানে প্রতিদিন ৬ লাখ ব্যারেল উৎপাদন করছে। জুলাই-আগস্টে উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হলেও সেটি ২০ লাখ ব্যারেলে যাবে না বলেই মনে হয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি তেলের দাম বাড়ার দিকেই ইঙ্গিত করে। প্রশ্ন হলো এটি কতদূর উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এটি ব্যারেল প্রতি ১৩০-১৫০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়