বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ : সরকারের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ বাম জোটের

আগের সংবাদ

ত্রাণ পৌঁছেনি প্রত্যন্ত জনপদে : এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ, সিলেট বিভাগে বন্যায় ২২ জনের মৃত্যু

পরের সংবাদ

বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ান

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিশাল এলাকা এখন বন্যাকবলিত। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম থেকে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আসায় সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ভরাট হওয়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে শুধু থৈথৈ পানি আর পানি। এ বন্যার কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ অঞ্চলের সব স্তরের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শহর অঞ্চলের সব রাস্তাঘাট। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ, রাস্তাঘাট, বাসস্থান, পুকুরের মাছ। গোলা ভরা ধান, গোয়ালের গরু, বসবাসের শেষ আশ্রয়স্থলও এখন পানির নিচে। এসব অঞ্চলের মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে হাঁটু পানি, দাঁড়ানোর মতো এক টুকরো জায়গা অবশিষ্ট নেই। বন্যার ভয়াবহ প্রকোপের কারণে অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাসায় অবস্থান নিয়েছেন। শিশু, বয়োবৃদ্ধরা এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কষ্ট পাচ্ছেন বেশি। সিলেট, সুনামগঞ্জের অধিকাংশ অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া নেটওয়ার্ক না থাকার ফলে তারা বাইরের কোনো জেলার সঙ্গে সংযোগ করতে পারছেন না। রান্নাবান্না বন্ধ, সব নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনোমতে শুকনো রুটি, বিস্কুট, গুড় ও চিড়া-মুড়ি খেয়ে বেঁচে আছেন তারা। অনেকে তাও খেতে পারছেন না। পানির স্রোতের তীব্রতায় এসব এলাকায় লোকজন তাদের বাড়িঘরে আটকা পড়েছেন।
অনেকে যোগাযোগ করে উদ্ধারের জন্য আহ্বান করলেও নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। তারা অসহায়ত্ব নিয়ে অপেক্ষা করছেন উদ্ধার অভিযানের আশায়। তারা অপেক্ষা করছেন বাঁচার। অসহায়ত্ব কাকে বলে তা এসব অঞ্চলের মানুষ সাম্প্রতিক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনুভব করছেন। গত ১৭ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় যে, জুমার নামাজ পানিতে দাঁড়িয়ে আদায় করেছেন বন্যাকবলিত লোকজন। পানির প্রবল বেগে এখন সেই দাঁড়ানোর মতো জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেই। এখন প্রয়োজন এই অসহায় বানভাসি মানুষদের ত্রাণ সহায়তা দেয়া ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা। শিগগিরই সরকারি-বেসরকারি সহায়তার পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
এমতাবস্থায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব ভেদাভেদ ভুলে বন্যার্তদের রক্ষায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এখন দরকার বন্যার্তদের সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করা। সারাদেশের সামর্থ্যবান মানুষজন তাদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ান। সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। কুরবানির বরাদ্দকৃত অংশ থেকে বন্যার্তদের জন্য কিছু ব্যয় করে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। এতে অপেক্ষাকৃত ছোট পশু কুরবানিও করা হবে আবার অসহায়, দুস্থ মানুষের কল্যাণও হলো। কুরবানির চামড়া বিক্রির টাকাও তাদের জন্য সাহায্য পাঠাতে পারি। সুতরাং আজ এসব বন্যার্ত, অসহায় মানুষের জন্য কাজ করা উচিত।
বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় আশ্রয়স্থলের পাশাপাশি খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী পাঠিয়ে সাহায্য করতে পারি। ত্রাণ সহায়তার কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বড় বড় করপোরেট কোম্পানি, বেসরকারি ব্যাংক, পত্রিকাগুলো ত্রাণ তহবিল গঠন করে সাহায্য করতে পারেন। এ রকম জাতীয় সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আজ শুধু প্রয়োজন উদ্যোগের এবং উদ্যোক্তার। তবেই বন্যার্ত ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। তাদের দুর্যোগ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব। বন্যাকবলিত অঞ্চলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সরকার পাশে দাঁড়াবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বানভাসি মানুষ মুক্ত হবে এই প্রত্যাশা করি। ্ইতোমধ্যেই বানভাসি মানুষের মাঝে স্বেচ্ছাসেবী, নিজ উদ্যোগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাই আমাদের এখন প্রয়োজন সর্বস্তরের মানুষ একযোগে সিলেটবাসীর পাশে দাঁড়ানো।

আশিকুর রহমান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়