বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ : সরকারের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ বাম জোটের

আগের সংবাদ

ত্রাণ পৌঁছেনি প্রত্যন্ত জনপদে : এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ, সিলেট বিভাগে বন্যায় ২২ জনের মৃত্যু

পরের সংবাদ

ডিসি-ইউএনও ত্রাণ কাজে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা দূরে

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমেদ ও জাহিদুল ইসলাম, সিলেট অফিস : সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় দুই লাখের বেশি লোক বন্যাকবলিত হলেও তাদের সবার কপালে এখনো জোটেনি সরকারি ত্রাণ। তারা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকলেও না খেয়ে আছেন। এদিকে ত্রাণ কাজে ডিসি-ইউএনওরা সম্পৃক্ত হলেও এ ক্ষেত্রে দূরে রয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। আর এতে জনপ্রতিনিধিদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বন্যার্তরা।
গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত না করায় তারা বন্যার্তদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, বন্যায় এ পর্যন্ত যা ত্রাণ দেয়া হচ্ছে সবই ডিসি, ইউএনওদের তত্ত্বাবধানে। এর ফলে সবাই ত্রাণ পাচ্ছেন না। কিন্তু আমরা জনপ্রতিনিধিরা বন্যার্তদের ক্ষোভের মুখে পড়ছি। একই অবস্থা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়ও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেটের আরেকজন উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ডিসি, ইউএনওদের দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং তাতে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত না করায় বহু চেয়ারম্যান, মেম্বার দূরে সরে আছেন। এই সমন্বয়হীনতার কারণে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দুর্গতরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জফির সেতু বলেন, সিলেট শহরের কাছে হলেও এসব এলাকার বন্যার্তদের খবর নিতে কেউ আসছেন না। পানি নামার সঙ্গে মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে তারা অভুক্ত ও নির্ঘুম ছিলেন। তাদের দেখার কেউ নেই। এদিকে সিলেটে বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ১৪ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। সিলেট নগরীতে এই সংখ্যাও অর্ধলাখের কাছাকাছি। তবে সবখানেই ত্রাণের জন্য এক রকম হাহাকার চলছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর মতো সিলেট মহানগরীতেও সরকারি ত্রাণ একেবারেই অপ্রতুল। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি বা সংগঠনের দেয়া ত্রাণের ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে হচ্ছে বানভাসিদের।
সিলেট সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, সিলেট নগরীতে মোট আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৬টি। এতে আশ্রয় নিয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে এসব মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দে এসেছে ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৩০ টন চাল, যা বন্যার্তদের চাহিদা পূরণে

একেবারেই অপ্রতুল। শুধু তাই নয়, আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে যারা এখনো বাসাবাড়িতে পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছেন তাদের খোঁজখবরও নিচ্ছেন না জনপ্রতিনিধি বা রাজনৈতিক নেতারা। এ অবস্থায় দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন বেশির ভাগ বানভাসি মানুষ।
নগরীর বন্দরবাজারের দুর্গাকুমার পাঠশালায় বন্যাকবলিত প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, গত তিন দিনে কাউন্সিলর, মেয়র বা সরকারি কর্মকর্তারা কেউ-ই আসেননি তাদের দেখতে। কোনো সরকারি ত্রাণ সহায়তাও পাননি তারা। তবে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রান্না করা খাবার বা শুকনো খাবার দিয়েছে কয়েক বেলা। তাই নিয়ে কোনো মতে টিকে আছেন।
নগরীর মাছিমপুর এলাকার মণিপুরীপাড়ায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবারের অন্তত আড়াইশ মানুষ পানি ভেঙে আশ্রয় কেন্দ্রেই যেতে পারেননি। এই চার দিনে একবারের জন্যও কেউ দেখতে যাননি তাদের। কোমর পানিতে বিছানার উপর টেবিল তুলে কোনোমতে মাথা গুঁজে আছেন অনেকে। কথা হয় পানিবন্দি প্রশান্ত সিংহের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেয়র কাউন্সিলর কারো দেখা নেই। ঘরে থাকা শুকনো খাবারে কোনোমতে প্রাণে বেঁচে আছি। এক ফোঁটা পানি নেই খাওয়ার জন্য।
এ সময় ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করতে আসেন একদল যুবক। তাদের একজন বিনয় ভদ্র বলেন, এই এলাকায় অন্তত ৮০টি পরিবার রয়েছেন পানিবন্দি অবস্থায়। আমরা আমাদের সাধ্যমতো খাবার পানি, চিড়া-মুড়ি দিয়ে যাচ্ছি। এতে হয়তো আজ রাত চলবে, তবে কাল কীভাবে চলবে তা কেউ-ই জানেন না। তিনি বলেন, আমরা অন্তত আড়াইশ পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছি। আর সব জায়গায় একটাই কথা, এখন পর্যন্ত কেউ তাদের ত্রাণ দিতে আসেনি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেননি সিলেট সিটি করপোরেশনের ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আলম। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ টন চাল এবং ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কোনো নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তাই আমাদের এই সীমিত ব্যবস্থায় আসলেই কিছু করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যাতে বরাদ্দ বাড়ানো যায়। তবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে এতে কিছুটা স্বস্তি।
তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্রাণের জন্য বরাদ্দ নেই কেন এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার সিটি মেয়র আরিফুল হকের মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়