বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ : সরকারের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ বাম জোটের

আগের সংবাদ

ত্রাণ পৌঁছেনি প্রত্যন্ত জনপদে : এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ, সিলেট বিভাগে বন্যায় ২২ জনের মৃত্যু

পরের সংবাদ

জলমগ্ন চট্টগ্রামে ডুবেছে মেয়রের বাড়িও

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : টানা বৃষ্টিপাতে বন্দরনগরীর শুধু নিচু এলাকাই নয়, পানি উঠেছে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িতেও। নগরীর বহদ্দারহাটের বহদ্দার বাড়ির (মেয়রের বাড়ি) সামনের সড়ক থেকে বাড়ির উঠান পর্যন্ত কোমরসমান পানি। আর সেই পানি মেয়রের বাসায় ঢুকে নিচতলায় হাঁটুপানি। জলাবদ্ধতার কারণে ঘরে আটকে পড়া মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল সোমবার নগরের টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে যেতে পারেননি। গলিতেও ছিল কোমরসমান পানি। নগরীর তুলনামূলক উঁচু এলাকা ছাড়া বন্দরনগরী এখনো বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত।
জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিটি করপোরেশন পরিচালিত সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের পৃথক পৃথক সভা ছিল। কিন্তু পানির কারণে মেয়র ঘর থেকেই বের হতে না পারায় সভাগুলো স্থগিত করা হয় বলে জানান মেয়রের একান্ত সচিব (পিএস) মুহাম্মদ আবুল হাশেম। মেয়রের বাসার নিরাপত্তা কর্মী মাসুদ রানা জানিয়েছেন, মেয়র দোতলায় থাকেন। মেয়রের গাড়িটি বাসার সামনেই পানিতে রয়েছে। বাড়ির উঠান ও সামনের রাস্তায় পানি জমে আছে। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় মেয়রের বাসভবনসহ আশপাশের বাড়িঘরেও পানিতে থইথই করছে।
পানি ডিঙিয়ে দুপুর ১টায় বাড়ি থেকে বের হন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাসার নিচতলায় পানি ঢুকেছে। আমার শয়নকক্ষেও পানি প্রবেশ করেছে। যে কারণে উপরের তলায় যে দুটি ঘর আছে, সেখানে থাকতে হচ্ছে আমাদের। মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছে। খালের কিছু কিছু বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে। তবে খালের বাঁধ কাটলেও মাটিগুলো সরানো হয়নি। যে কারণে খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না।
খালের মাটি পরিষ্কার করার দায়িত্ব কার? এমন প্রশ্নে সিটি মেয়র বলেন, যারা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছেন, খাল থেকে মাটি সরিয়ে নেয়ার দায়িত্বও তাদের। মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় নগরবাসীকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাবেন নগরবাসী।
গত রবিবারের সারা রাতের বিরামহীন ভারি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভয়াবহ জলজটে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলি। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পানি এখন সড়কে। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ সড়ক ডুবে যাওয়ায় যাতায়াতে ব্যবহার করতে হচ্ছে নৌকা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল থাকায় পানি সরতে না পেরে অনেক ঘর ও দোকানপাটের ভেতর পানি ঢুকে গেছে। এতে আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হচ্ছে। জ্বলছে না চুলা। বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভিজে গেছে বেশ কিছু পণ্য।
রাতভর টানা বৃষ্টিতে নগরীর মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, ছোট পুল-বড় পুল, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর, মোহরা, হামিদচর, চর রাঙামাটিয়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, বাস টার্মিনাল, খাজা রোড, মিয়াখান নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যরাতের টানা বর্ষণে বাসায় পানি ঢুকে অনেকের ফার্নিচার, আসবাবপত্র, ফ্রিজ, পানির পাম্প, বালিশ, তোশকসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানিতে তলিয়ে গেছে। রিকশা-ভ্যানে চড়ে নারী-শিশুসহ সব বয়সী মানুষ চলাচল করছেন। সড়ক জলমগ্ন হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এমনকি জলমগ্ন পানিতে অনেককে জাল দিয়ে মাছ ধরতেও দেখা গেছে।
জলাবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজনের মৃত্যু :
টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন নগরীর একটি ভবনের নিচতলায় জমা পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার কাতালগঞ্জ আব্দুল্লাহ খান লেইনের ‘খান হাউস’ নামে একটি ভবনের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ওই ভবনের তত্ত্বাবধায়ক আবু তাহের (৬৫) ও গাড়িচালক মো. আবুল হোসেন (৩৮)। পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান জানান, টানা বৃষ্টিতে তিনতলা ভবনটির নিচতলা জলমগ্ন ছিল। নিচতলায় কেউ ছিলেন না। সকালে তাহের ও হোসেন আইপিএসের সংযোগ খুলতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিসের চন্দনপুরা স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ভবনের সিঁড়ির নিচে ছিল আইপিএস। পানির নিচে থাকা আইপিএসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছিলেন তারা। সংযোগ খোলার পর পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে যায়। তবে এর আগেই ভবনের বাসিন্দারা হোসেনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের টিম পুরো ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাহেরকে সিঁড়ির নিচ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬২ দশমিক ৮ মিলিমিটার, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৭০ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং এর আগে সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেকটা কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়