মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

মানুষের পাশে মানুষ : স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চাওয়া হবে হেলিকপ্টার ও জলযান

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : মানুষ মানুষের জন্য- প্রচলিত এই কথাকে মূলমন্ত্র মেনে সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অব্দি সময়ে-অসময়ে মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাড়িয়ে দেয়া সহায়তার হাতের ওপর ভর করে নিঃস্ব মানুষও উঠে দাঁড়িয়েছে। সাজিয়েছে আগামীর স্বপ্ন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া সেসব মানুষ ও সংগঠনগুলোই বিপদগ্রস্ত মানুষের কাছে হয়ে ওঠে মানবতার প্রতীক, সাহসের উৎস। যা এই মুহূর্তে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য ভীষণ জরুরি। ইতোমধ্যেই বানভাসি মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে পানিবন্দি অসহায় মানুষের দিকে বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাত।
নৌকা নেই, নেই বিদ্যুৎ, খাবার। এমন পরিস্থিতিতেও গলাপানি অতিক্রম করে সেখানে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। পানি পেরিয়ে বানভাসি মানুষগুলোর কাছে পৌঁছানোই যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গলাপানি অতিক্রম করে খাবার হাতে বানভাসি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা। শনিবার রাত থেকেই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না করা খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু করেছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা সালমান খান ইয়াসিন ভোরের কাগজকে বলেন, শনিবার থেকেই সিলেটে আমরা কাজ শুরু করেছি। শুরুতে শুকনা খাবার দেয়া হলেও রাত থেকেই রান্না করা খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গলা সমান পানি পাড়ি দিয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। পানি বেশি থাকায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে পারেনি। তবে গতকাল সকালে আমাদের টিম সুনামগঞ্জে গিয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকে বিনামূল্যে নৌকা দেয়ার কথা বলেছেন। সিলেটের পোকের বাজার এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারের মালিক বিনামূল্যে আমাদের ক্যাম্পের জন্য সেটি ছেড়ে দিয়েছেন। রান্নার কাজটি সেখানেই করা হচ্ছে।
সালমান জানান, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও নেত্রকোনা- বন্যাকবলিত এই ৪ এলাকায় বিদ্যানন্দের ৪টি টিম কাজ করছে। রান্না করা খাবারের পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী (শুনকা খাবার যেমন-চিড়া, মুড়ি, গুঁড় ইত্যাদি, মোমবাতি, দিয়াশলাই, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন) দেয়া হচ্ছে। যতদিন পানি থাকবে ততদিনই বন্যার্তদের সহায়তার কাজ করে যাবে সংগঠনটি। বন্যার পানি নেমে গেলে পুনর্বাসন কার্যক্রমও চালাবে। তিনি বলেন, যাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, ভেঙে গেছে তাদের নতুন করে ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। যেসব পরিবারের গবাদিপশু মারা গেছে সেই পরিবারটি যদি অস্বচ্ছল থাকে তাহলে ওই পরিবারকে গবাদিপশু কিনে দেয়া হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ইতোমধ্যেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাস্তুল ফাউন্ডেশনও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বন্যাকবলিত মানুষের দিকে। ফাউন্ডেশনের হেড অব পার্টনারশিপ মৌসুমী আক্তার মৌ ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের ছোট ছোট কয়েকটি টিম ইতোমধ্যেই বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করা শুরু করেছে। পানিবন্দি মানুষের কাছে এখন আমরা রান্না করা এবং শুকনা খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। পরিস্থিতি যতদিন উন্নতি না হচ্ছে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পরিস্থিতি ভালো হলে আমরা পুনর্বাসন কাজ এবং আমাদের যাকাত প্রজেক্টের মাধ্যমে সাবলম্বী প্রজেক্টের কাজ শুরু করব। এ বছর কুরবানির ঈদে আমরা সিলেটের বন্যাকবলিত বিভিন্ন জায়গাকে লক্ষ্য করেই কাজ করব। এই দুর্যোগকালে আমরা ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবাও দিচ্ছি।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে বন্যাকবলিত এলাকায় ঋণ বিতরণ বাড়ানোর পাশাপাশি বন্যার্তদের জন্য সিএসআর (ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা) খাত থেকে ব্যয়ের পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা দিতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। বন্যায় জরুরি সহায়তায় নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সংগঠনটি। বিদ্যান্দন ফাউন্ডেশনে সহায়তা পাঠানো যাবে সংগঠনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। এছাড়া ০১৮৭৮১১৬২৩০ (বিকাশ মার্চেন্ট), ০১৭০৮৫২১৯৫৫ (বিকাশ ব্যক্তিগত), ০১৭৬৬৬৮৫৬৮৬৯ (রকেট), ০১৬৩১৫৫৪৬৪৬ (নগদ) এই নম্বরে।
এদিকে বন্যাকবলিত মানুষের সহায়তায় টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। টোল ফ্রি নম্বরগুলো হলো-০১৭৬৯১৭৭২৬৬, ০১৭৬৯১৭৭২৬৭, ০১৭৬৯১৭৭২৬৮, ০১৮৫২৭৮৮০০০, ০১৮৫২৭৯৮৮০০, ০১৮৫২৮০৪৪৭৭, ০১৯৮৭৭৮১১৪৪, ০১৯৯৩৭৮১১৪৪, ০১৯৯৫৭৮১১৪৪, ০১৫১৩৯১৮০৯৬, ০১৫১৩৯১৮০৯৭, ০১৫১৩৯১৮০৯৮। বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নোত্থানের সদস্যরা। ‘বন্যার্তদের পাশে স্বপ্নোত্থান’ শীর্ষক এই কর্মসূচির জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সবার প্রতি সাহায্যেরও অনুরোধ করা হয়েছে। নি¤েœাল্লিখিত মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সহায়তা পৌঁছে দেয়া যাবে বলে বলা হচ্ছে। এই সংগঠনে অনুদান পাঠানো যাবে ০১৭০১০২৫৪২৬ (বিকাশ), ০১৭০১০২৫৪২৬৪ (রকেট), ০১৭০১০২৫৪২৬ (নগদ) এই নাম্বারে।
এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ফাউন্ডেশন ৩০ হাজার মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর কথা জানিয়েছে। বানভাসি মানুষের পাশে সবাইকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, তারকারা। অনেক তারকা ব্যক্তি উদ্যোগেও বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর ঘোষণা করেছেন। বন্যার্তদের সাহায্যে কাজ করছে এমন আরো কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অনুদান পাঠানোর আবেদন জানিয়েছেন। এর মধ্যে আছে বেসরফ ফাউন্ডেশনে ০১৩০৬৯১৫১৯৩ (বিকাশ ও উপায়), ০১৩০৬৯১৫১৯৩৪ (রকেট), ০১৭৫৫৯২১২৫১ (নগদ)। সোশ্যাল এইডার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে ০১৭২৫৮৯৬০৫৩ (বিকাশ), ০১৭৭৮৪৩৯০০৬ (নগদ), ০১৭৪৪৩১০০৮৯৩ (রকেট) এই নম্বরে সাহায্য পাঠানো যাবে।
এদিকে গতকাল রবিবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের কাছে হেলিকপ্টার ও জলযান চাওয়া হবে। তিনি বলেন, যেসব দেশে সব সময় বন্যাকবলিত হয়, সেখানে এ ধরনের ব্যবস্থা থাকে। আমাদের তেমন নেই। অন্য মন্ত্রণালয়ের থাকতে পারে। আমরা সরকারের কাছে এ সহযোগিতার জন্য আহ্বান করব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়