মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

বীজ কোম্পানির প্রতারণায় নিঃস্ব ২০ কৃষক : পীরগাছায় ৫০ হেক্টর জমিতে ধানও নেই, খড়ও নেই!

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহ কামাল ফারুক লাবু, পীরগাছা (রংপুর) থেকে : মাঠজুড়ে ধানগাছ থাকলেও তাতে ধান নেই। একটি থোকায় ২-৩টি ধানের শীষ থাকলেও সব চিটা হয়ে গেছে। কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে অন্য অঞ্চলের বীজ দেয়ায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমির ধানে ফলন না থাকায় বিপাকে পড়েছেন পীরগাছা উপজেলার ২০ জন কৃষক। দুটি নামিদামি কোম্পানির বীজ নিয়ে চারা রোপণ করে তারা এখন নিঃস্ব। ধান তো দূরের কথা খড়ও হয়নি জমিগুলোতে। ব্র্যাক সিড ও মেটাল সিড কোম্পানির ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে অভিযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে।
সরজমিন গিয়ে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার তালুক ইসাদ (নয়াটারী) গ্রামে প্রায় ৫০ হেক্টর আলুর জমিতে দেউতি বাজারের ব্র্যাক সিডস ডিলার ‘মেসার্স শামীম সিডস স্টোর’ থেকে চলতি বোরো মৌসুমের জন্য ব্র্যাক সিড কোম্পানির ৪৪৪ ও মেটাল সিড কোম্পানির এমএস-১ হাইব্রিড জাতের ধান কিনে বীজ করে লাগান ওই গ্রামের ২০ জন কৃষক। প্রথমদিকে ধানের চারা ভালো মনে হলেও বয়স বাড়তে থাকলে ঘটে চরম বিপত্তি। ধানের গাছ ছোট-বড় হয়ে বাড়তে থাকে। এরপর শেষ সময়ে জমিগুলোতে ২-১টি করে ধানের শীষ বের হলেও তাতে ধান নেই। সব চিটা হয়ে গেছে। ওই জমিগুলোর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সাড়ে ১২ একর জমিতে ধান রোপণ করেন দেউতি গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে কৃষক হাসান আলী। তার মতো মৌসুমভিত্তিক চুক্তি নিয়ে ধান চাষ করেন কৃষক নাজমুল ইসলাম, আলাল মিয়া, জহির উদ্দিন, আউয়াল মিয়া, খোরশেদ আলম, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, মোজাফ্ফর হোসেন ও আবুল হোসেনসহ প্রায় ২০ জন কৃষক। সবার জমির একই চিত্র। কৃষক খোরশেদ আলম, নাজমুল ইসলাম বলেন, জমি চুক্তি নিয়ে ধারদেনা করে ধান লাগিয়েছি। যাতে কিছু দিন ভালো চলতে পারি। সেই আশা আমাদের ধূলিসাৎ করে দিয়েছে এই দুটি কোম্পানির বীজ। অন্য অঞ্চলের জন্য তৈরি বীজ আমাদের দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার ওই জমিগুলো পরিদর্শন করেন রংপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাকিবুল আলম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামানসহ বীজ কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
ব্র্যাক ও মেটাল সিড কোম্পানির ডিলার মেসার্স শামীম সিডস স্টোরের স্বত্বাধিকারী শামীম হোসেন বলেন, বিরূপ আবহাওয়া ও দেরিতে চারা রোপণ করায় এমন হয়েছে। তবুও আমরা কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জমিগুলো পরিদর্শন করে গেছেন। ব্র্যাক সিড কোম্পানির রংপুরের মনিটরিং কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হাসান বলেন, বীজের কারণে এমন হওয়ার কথা নয়। অতিবৃষ্টিতে আবহাওয়াগত কারণে এবং দেরিতে চারা রোপণের কারণে এমনটি হয়েছে। একই সমস্যা বেশ কিছু জায়গায় হয়েছে।
একই ধরনের সমস্যার কথা বলেন মেটাল সিড কোম্পানির উৎপাদন ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার। তিনি বলেন, একই বীজ কোথায় ভালো হয়েছে, আবার কোথায় একই সমস্যা।
এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল আলম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা জমিগুলো পরিদর্শন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে এনেছি। দ্রুত আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেব। এ ব্যাপারে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাকিবুল আলম বলেন, ক্ষতির পরিমাণটা অনেক বেশি। আমি মাঠে গিয়ে কৃষক ও বীজ কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে এসেছি। চলতি সপ্তাহে কৃষি অধিদপ্তর থেকে একটি প্রতিনিধিদল আসবে। তারা পরিদর্শন করে গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়