মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ওজন স্কেলে কারচুপি : ক্ষতির মুখে সিএন্ডএফ এজেন্টরা

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ডিজিটাল ওজন স্কেলে অভিনব কায়দায় ওজন কম-বেশি করার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৩ জুনের এ ঘটনায় দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্থলবন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে ওজন স্কেলে পণ্য ও পরিবহনের মাপ কম-বেশি করছেন। এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি সিএন্ডএফ এজেন্টরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে তিনটি ডিজিটাল ওজন স্কেল থাকলেও দুটিতে ওজন পরিমাপ করা হয়। অন্যটি বজ্রপাতে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। ভারত, নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর পণ্য এবং গাড়ির ওজন এই দুই স্কেলেই পরিমাপ করা হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতিদিন ৫ শতাধিক ট্রাকে হাজার হাজার টন পণ্য পরিমাপের দায়িত্বে আছেন নির্ধারিত কর্মচারীরা।
অভিযোগ উঠেছে, ঘুষের বিনিময়ে ওজন স্কেলে পরিমাপ কম-বেশি করেন ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সম্প্রতি সিএন্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা হাতেনাতে ধরেন আরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান নামে দুই স্কেল অপারেটরকে। পরে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ব্যবসায়ী এবং সিএন্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, বন্দরে দীর্ঘদিন ধরেই এই ডিজিটাল কারচুপি চলছে। ভারত, নেপাল, ভুটান থেকে আমদানি করা কোনো কোনো ট্রাকের পণ্য ওজন স্কেলে পরিমাপে কম হয়। কিন্তু ওজন স্কেলে কম পাওয়া পণ্যের পরিমাণ গাড়ির ওজন বাড়িয়ে ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে সমান করে দেয়া হয়।
এই মালামাল যখন আমদানিকারকদের নিজস্ব স্কেলে পরিমাপ করা হয় তখন কয়েক টন পর্যন্ত ওজন কম হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও কেউই ধরতে পারছিলেন না। চোখে ধুলা দেয়ার এ ঘটনা হঠাৎ ফাঁস হয় ভারতের আসামের এক ট্রাক ড্রাইভারের মাধ্যমে। ওই ড্রাইভার জানান, তার ট্রাকে আমদানি করা পণ্য ওজনে কম হলেও ওজন স্কেলের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মচারী যান্ত্রিকভাবে তা ঠিক করে দেয়ার বিনিময়ে ঘুষ দাবি করলে তিনি তাকে ঘুষ দিয়ে ওজনে কমের বিষয়টি সমাধান করে নেন।
ভারতের আসাম থেকে ভুট্টা নিয়ে আসা ট্রাকচালক আব্দুল মোতালেব জানান, গত ১৩ জুন বন্দরের গাড়ি নিয়ে প্রবেশের পরে ২নং ওজন স্কেলে তার গাড়িটি ওজন করা হলে ২২০ কেজি ভুট্টা পরিমাণে কম মেলে। পরে স্কেল অপারেটর তাকে বলেন, টাকা দিলে ওজনে কমের বিষয়টি সমাধান করে দেয়া যাবে। পরে তিনি টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধান করে নেন।
সিএন্ডএফ এজেন্ট ও স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১৩ জুন ভারতীয় একটি ট্রাকে করে ভুট্টা আসার পরে প্রায় ২২০ কেজি ওজনে কম পাওয়া যায়। বিষয়টি সিএন্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীদের হাতে ধরা পড়ে। এভাবে ওজন কম হলে তার লোকসান সিএন্ডএফ এজেন্টদের গুনতে হয়। আমদানিকারক কিংবা রপ্তানিকারক কেউই লোকসানে পড়েন না। এভাবে আমি গত ৬ মাস আগে প্রায় ৭ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাণে বেঁচে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে ফিরেছি। এভাবে আর কত ঠকব আমরা।
সিএন্ডএফ এজেন্ট ও স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমদানি করা পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার আগেই পাঠানো হয়। না হলে পণ্য আসে না। কিন্তু ওজনে কম আসলে এর দায়ভার আমাদেরই বহন করতে হয়। ফলে লাভ পাওয়ার বদলে সিএন্ডএফ এজেন্টদের লোকসান গুনতে হয় আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন বলেন, ওজনে কম হওয়ার বিষয়টি অনেক আগে থেকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ করেও কাক্সিক্ষত সুরাহা মেলেনি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি সমাধান না করলে আমরা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেব।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার ও পোর্ট ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসলে সেদিন ট্রাকে পণ্যের পরিমাণ কম হয়নি। ট্রাকের ওজন কম-বেশি হয়। আপাতত জড়িত দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়