মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

বন্যার আরো অবনতি : উত্তরাঞ্চলে নদনদীর পানি বাড়ছে

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও যমুনাসহ সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব নদনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরসহ উত্তরাঞ্চলে। এসব এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। অনেকে বাস করছেন নৌকায়। সংকট রয়েছে তাদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। ভাঙনের আশঙ্কায় দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদী অববাহিকার বিস্তীর্ণ এলাকা ছাড়িয়ে লোকালয়ের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
গতকাল রবিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা এখনো বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ক্রমাগত নতুন নতুন এলাকা জলমগ্ন হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন।
এদিকে জেলার রৌমারী, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার বন্যাকবলিত চর ও নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ সপ্তাহজুড়ে পানিবন্দি থাকায় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে রয়েছেন। এসব এলাকা গত এক সপ্তাহ ধরে জলমগ্ন থাকায় ঘরবাড়িগুলো এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। অধিকাংশ বাড়ির বাঁশের খুঁটি নষ্ট হয়ে ঘর ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সহসাই এসব বাড়িঘরে ফিরতে পারবেন না মানুষজন।
উঁচু বাঁধ, সড়ক, টিলা, আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু ভিটায় আশ্রিত মানুষজন কয়েকদিন ধরে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। বন্যাকবলিত এসব এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ, শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি ওঠায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর পার্বতীপুরের জহুর উদ্দিন বলেন, পানি বাড়তেই আছে এখন আর ঘরে থাকার উপায় নাই। বর্তমানে নৌকায় অবস্থান করছি। একই অবস্থা দেখা গেল ফজলুল হক, শুক্কুর আলী, বোরহান ও জরিপ উদ্দিনের। সাত দিনের বেশি হলো তারা সবাই নৌকায় বসবাস করছেন। তারা জানান, সহায়-সম্বল যা ছিল সব কিছুই পানিতে তলিয়ে গেছে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে আগামীতে কীভাবে থাকব তা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ৪ দিন আগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের জন্য ২৯৫ টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৭ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ১৯ লাখ টাকার গো-খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বন্যাকবলিত অধিকাংশ দুর্গম এলাকায় সরকারি কিংবা বেসরকারি ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। এ অবস্থায় সর্বস্ব হারিয়ে সহায়-সম্বলহীন মানুষ চরম দুরবস্থায় রয়েছেন।
লালমনিরহাট : কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে ফের বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটে বন্যা দেখা দিয়েছে।
রবিবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ০৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দিয়েছে ব্যারাজ

কর্তৃপক্ষ। ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় উজানের ঢল এসে ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। এদিকে ভারি বৃষ্টির কারণে জেলার ছোট ছোট নদী ও খাল ভরে গেছে পানিতে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি।
নদীপাড়ের মানুষজন জানান, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।
পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। তিস্তার বাম তীরের প্রায় ৭-৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানিপ্রবাহ বেড়েছে। সব জলকপাট খুলে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ পয়েন্টে তিস্তার পানি রবিবার সকাল ৯টায় বিপদসীমার ০৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গঙ্গাচড়া (রংপুর) : তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা তীরবর্তী বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার ভাঙনে ২০টি পরিবারের বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন হুমকিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। বন্যার পানিতে ব্যাপক আমন বীজতলা, মরিচ ও বেগুনক্ষেত, পুকুরসহ, বিভিন্ন সবজি ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
নেত্রকোনা : খালিয়াজুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, গতকালই সেনাবাহিনীর ১৯ পদাতিক ডিভিশনের ১৩০ জনের একটি দল মদন এসে অবস্থান নিয়েছে। তারা দুর্গত এলাকাগুলোতে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে।
জেলার ৬টি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব এলাকায় পুকুর তালিয়ে ভেসে গেছে মাছ। কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টায় নদনদীর পানি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বন্যাদুর্গতদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দিয়েছে।
শেরপুর : শেরপুরে বন্যার উজানে উন্নতি হলেও ভাটি এলাকায় অবনতি ঘটেছে। শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের।
গত শুক্রবার নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী, ভোগাভ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঢলের পানির তোড়ে নদীর পাড় ভেঙে ৩টি ইউনিয়নের ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়। ২টি বেইলি সেতু ভেঙে যায় ঢলের পানির তোড়ে। রাস্তাঘাট ভেঙে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
জামালপুর : জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রবিবার সকাল ৯টায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে বন্যার পানি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, জেলার ৭ উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে ৭০টি গ্রামের ১ হাজার ৬৭১টি পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে।
এছাড়া দেওয়ানগঞ্জের গুজিমারী গুচ্ছগ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ওই গ্রামের লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
কিশোরগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী এবং উজানের করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও বাজিতপুর এ ছয় উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি উঠছে হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবরস্থান ও শ্মশানসহ সর্বত্র। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বন্যার্তরা। নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছেন। নলকূপগুলো ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যার্তরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়