মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

পানিবন্দি ২ লাখ : মৌলভীবাজারে বন্যার অবনতি

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, মৌলভীবাজার থেকে: অতি ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলায় ৩০০ গ্রামের ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ইতোমধ্যে কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গতকাল থেকে গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখেছে বিদুৎ অফিস। বাড়িঘরে পানি ওঠায় বিভিন্ন স্কুলে কয়েকশত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তবে তারা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছেন।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওরের পানি বেড়েছে। এতে ১০টি ইউনিয়নের ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড় ধসে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নদনদীসহ হাকালুকি হাওরের পানি বাড়ায় ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চণ্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, ও কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন।
জুড়ী উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি। এসব গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ী পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউপি (আংশিক) প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা কয়েক হাজার।
রাজনগর উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। নদী ও হাকালুকি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার হাওর অঞ্চল ও কুশিয়ারাপাড়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। এর মধ্যে উত্তরভাগ ইউনিয়নের ওয়াবদা বেড়িবাঁধের উত্তর পাশে কুশিয়ারা নদীর তীরের রামপুর, সুরিখালসহ অন্তত বিশটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি বন্দি। এদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা কয়েক হাজার। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়েছে একাধিক আশ্রয় কেন্দ্র।
উত্তরভাগ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার মজনু মিয়া বলেন, গত ৩ দিন ধরে আমরা পানি বন্দি হয়ে পড়েছি। গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। এতে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে পড়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার কারণে আমাদের দিকে কেউ নজর দিচ্ছেন না। উত্তরভাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইউসুফ চৌধুরী বলেন, আমাদের এলাকার বন্যার বিষয়ে এমপি নেছার আহমদকে জানিয়েছি। তিনি ঢাকায় আছেন, তাই প্রশাসনকে বলেছেন ত্রাণ বিতরণ করার জন্য। আশা করছি, আমরা সরকারি ত্রাণ মানুষের কাছে দ্রুত সময়ে পৌঁছে দিতে পারব।
উত্তরভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিগেন্দ্র সরকার চঞ্চল বলেন, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। আমরা বন্যার কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি। যে পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ভোরের কাগজকে বলেন, সারা জেলায় বন্যাদুর্গত প্রায় দুই লাখ মানুষ। ভানবাসী মানুষজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়