মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

অ্যান্টিগায় ৭ উইকেটে হারল টাইগাররা

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অ্যান্টিগায় বাংলাদেশ হারবে, এটা যেন নিয়তি হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের প্রথম দিনের কয়েক ঘণ্টার ভেতরই। গতকাল চতুর্থ দিনে এসে কেবল ব্যবধানটাই নিশ্চিত হলো, ৭ উইকেটে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১০৩ রানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ২৬৫ রান। এরপর বাংলাদেশ আবার ২৪৫ রান করেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেটা ছুঁয়েছে ২২ ওভারে। চতুর্থ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান, বাংলাদেশের ৭ উইকেট। সিরিজে পিছিয়ে পড়া আটকাতে সাকিব আল হাসানের দলকে করতে হতো অসম্ভব কিছুই। এমনিতেও ৮৪ বা এর কম রানের লক্ষ্য নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা কোনো দলই এর আগে হারেনি কখনো। শেষ পর্যন্ত অসম্ভব কিছু হয়নি, গতকাল চতুর্থ দিন সকালেই জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্ট ৭ উইকেটে জিতে ২ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে গতকাল ৭ ওভার ও প্রায় ২৬ মিনিট লাগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। জন ক্যাম্পবেল অপরাজিত থাকেন ৫৮ রানে, জার্মেইন ব্ল্যাকউড ২৬ রানে। দুজনের জুটিতে আসে ৭৯ রান।
পরাজয়টা তো অবধারিতই ছিল, তবে সেটা কত দ্রুত আসে, তা ছিল দেখার বিষয়। তৃতীয় দিনই ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৯ রান তুলে ফেলেছিল স্বাগতিকরা। শেষ দুই দিনে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল কেবল ৩৫ রান। গতকাল চতুর্থ দিন মাঠে নেমে মাত্র ৭ ওভার খেলেছেন ক্যারিবীয় দুই অপরাজিত ব্যাটার জন ক্যাম্পবেল এবং জার্মেইন ব্ল্যাকউড। তাতে আর কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খালেদ আহমেদ আগের দিন যেভাবে আতঙ্ক ছড়াতে পেরেছিলেন ক্যারিবীয় শিবিরে, গতকাল সেটা আর পারেননি। তৃতীয় দিনই পরাজয় ঘটে যেতে পারত টাইগারদের। মিডল অর্ডারে যদি সাকিব আল হাসান আর নুরুল হাসান সোহান ঘুরে না দাঁড়াতেন, তাহলে ইনিংস পরাজয়ের সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু সাকিব-সোহানের জুটিতে ইনিংস হার এড়িয়ে ক্যারিবীয়দের সামনে লিডও এনে দিয়েছিল ৮৩ রানের। সাকিব ৬৩ এবং সোহান করেছিলেন ৬৪ রান।
৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর পেসার খালেদ আহমেদের তোপের মুখে পড়ে ক্যারিবীয়রা। ১ রানে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট, ২ রানে রেমন রেইফার এবং কোনো রান না করেই ফিরে যান এনক্রুমাহ বোনার। এরপরই দাঁড়িয়ে যান ক্যাম্পবেল আর ব্ল্যাকউড। জন ক্যাম্পবেল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৬৭ বলে ৫৮ রান করে এবং জার্মেইন ব্ল্যাকউড ৫৩ বলে অপরাজিত থাকেন ২৬ রান করে। ক্যারিবীয়দের ৩ উইকেট একাই নেন খালেদ।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সাকিবের ৫১ রান সত্ত্বেও বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১০৩ রানে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয় ২৬৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৫ রান করে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ৮৪ রানের লক্ষ্য পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ লক্ষ্য তারা তাড়া করে ২২ ওভারে।
প্রত্যেকের জীবনেই সংগ্রাম থাকে। সেই গল্পগুলো একেকজনের একেক রকম। তবে সাফল্যের জন্য প্রত্যেককেই ঘাম ঝরাতে হয়। কষ্টের পর মেলে সাফল্য। তাইতো কষ্টের ফল হয় শ্রেষ্ঠ। টাইগার পেসার খালেদ আহমেদ সেই কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে এখন স্বর্ণসময় পার করছেন। অ্যান্টিগায় সাকিব বাহিনী নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে খানিক লড়াই করে উইন্ডিজের সামনে ৮৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছে। অথচ এমন ম্যাচও শেষদিকে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বেশ। তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে স্বাগতিকদের এক পাশ থেকে চেপে ধরেন মোস্তাফিজুর রহমান। অন্য পাশ দিয়ে টপ অর্ডার ধসিয়ে দেন খালেদ আহমেদ। অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের আশায় ৮৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে গতকাল খালেদের তোপের মুখে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৯ রান তুলতেই তারা হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে জোড়া শিকার করেন খালেদ আহমেদ। নিজের পরের ওভারে তুলে নিয়েছেন আরো এক উইকেট।
ডানহাতি এই পেসারের প্রথম শিকার ক্রেইগ ব্রেথওয়েট। লেগসাইডে বেরিয়ে যেতে থাকা বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের দুর্দান্ত এক ডাইভিং ক্যাচ হয়েছেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক (১)। তিন বল পর রেইমন রেইফারকে (২) সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন খালেদ। বল ছাড়তে গেলে শেষ মুহূর্তে গøাভসে লেগে যায়, উইকেটের পেছনে ক্যাচটি লুফে নিতে ভুল করেননি সোহান। পরের ওভারে এসে এনক্রুমাহ বোনারকে (০) দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন খালেদ। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক খালেদের। মিরপুরে দুই ইনিংসে ৩০ ওভার বল করে উইকেট শূন্য ছিলেন। পরের বছর নিউজিল্যান্ডে হ্যামিল্টন টেস্টে সুযোগ পান, এক ইনিংসেই করেছেন ৩০ ওভার, ১৪৯ রান খরচায় ছিলেন উইকেটহীন।
এরপর চোটের কারণে লম্বা সময় দূরে। চোটটাও ছিল রহস্যময়। নিজের ড্রয়িংরুমে বসে ছিলেন। পা হালকা টান লাগায় নিজেই জোরে ঝাঁকি দেন। তাতে ছিঁড়ে যায় লিগামেন্ট। পরে অস্ত্রোপচার করিয়ে মাঠে ফিরতে ফিরতে দুই বছর শেষ হয়ে যায়।
ডানহাতি এ পেসার গত বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ফিরে আসেন। বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হারা ম্যাচে এক ইনিংসে বল করার সুযোগ পান। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট উইকেটটি পেয়ে যান ওই ম্যাচেই। কিন্তু দলে তার জায়গা পাকাপাকি ছিল না। বাড়তি বা ব্যাকআপ বোলার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শরীফুল ও তাসকিনের অবর্তমানে হঠাৎই খেলার সুযোগ পেয়ে যান।
সেই খালেদই ডারবান ও পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে বাংলাদেশ দলের সেরা পেসার ছিলেন। দুই ম্যাচে ৩২.৮৭ গড়ে নিয়েছেন ৮ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার এই পারফরম্যান্সের সৌজন্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দলেও খালেদকে দলে রাখা হয়। খেলেন ঢাকাতেও। কোনো উইকেট না পেলেও তার পারফরম্যান্স, নিবেদনে কোনো ঘাটতি পায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট।তাইতো ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাকে খেলাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয়নি। দলের নিয়মিত এ পেসার প্রথম ইনিংসে ২ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে যে আগুনঝরা বোলিংয়ে ঝলক দেখালেন, তাকে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
ডানহাতি পেসারের বোলিংয়ে গতির পাশাপাশি আছে বৈচিত্র্য। স্পট বোলিংই তার মূল ভরসার জায়গা। আর উইকেটে সামান্যতম সাহায্য থাকলে বল হয়ে উঠে আরো আক্রমণাত্মক। তার বোলিংয়ে পাল্টে যাওয়া শুরু সাবেক বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের হাত ধরে। এখন অ্যালান ডোনাল্ড সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তাতে খালেদ হয়ে উঠেছেন আরো ক্ষুরধার। নতুন বলে নিজের শক্তি, সামর্থ্য দিয়ে গতি ও সুইং আদায় করে ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন খালেদ। বল পুরনো হলে ভিন্ন কিছু চেষ্টা করতে হয়। বোলিংয়ে বাউন্স খুব একটা দিতে পারেন না তিনি। এজন্য নাকাল বল আয়ত্তে এনেছেন। পুরনো বল যখন কোনো কাজে আসে না, ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে ভিন্ন কিছু চেষ্টাতেই নাকাল বল করেন খালেদ।
ঘরোয়া ক্রিকেটে সফলভাবে এই বল ব্যবহারের পর আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। তাতে সফলও হয়েছেন একাধিকবার।
উইকেট যে সোনার হরিণ, সেটি ডানহাতি পেসার খালেদ আহমেদের থেকে ভালো আর কারো বোঝার কথা নয়। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের জন্য কতটা সময় অপেক্ষা করা যায়? খালেদ আহমেদ অপেক্ষা করেছিলেন অভিষেকের পর ১১২২ দিন। এজন্য বল করেছেন ৪১৮টি। এরপর মিলেছে প্রথম টেস্ট উইকেট। সেটাও পাকিস্তানের মাস্টারক্লাস ব্যাটসম্যান বাবর আজমের। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বোলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে ডমিঙ্গো বলছিলেন, বোলাররা সবাই দুই ইনিংসেই দারুণ বোলিং করেছে। প্রথম ইনিংসে আমার দেখা ওদের সেরা বোলিংটাই করেছে। এই উইকেটে ২৬০ রানে আটকে রাখা সহজ কথা নয়। গত দুদিন বোলাররা যেমন পারফর্ম করেছে, তাতে আমি খুবই গর্বিত।

প্রথম ইনিংসে উইন্ডিজের মূল দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরান খালেদ। সেঞ্চুরির পথে ছোটা ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোকা বানিয়ে আউট করেন ৯৪ রানে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ রান করা জার্মেইন ব্ল্যাকউডকেও নিজের শিকার বানান তিনি। সব মিলিয়ে ২২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৫৯ রান দিয়ে নেন মূল্যবান ২ উইকেট। যেখানে মেডেন ৪টি।
দ্বিতীয় ইনিংসে আরো বিধ্বংসী খালেদ। নিজের করা প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে তুলে নেন ৩ উইকেট। এতে ধসিয়ে দেন প্রতিপক্ষের টপ অর্ডার। মরা ম্যাচেও প্রাণের সঞ্চার ঘটান তিনি। তবুও খালেদের পারফরম্যান্সে পুরোপুরি তৃপ্ত নন ডমিঙ্গো।
ডমিঙ্গো বললেন, সে তিন উইকেট পেয়েছে। কিন্তু তার উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। মাঝে মাঝে ভালো বল করেও উইকেট পাবেন না। আবার খুব ভালো না করেও উইকেট পাবেন। এটাই ক্রিকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো বল করেছে, ভালো কিছু উইকেট নিয়েছে। তবে তার উন্নতির অনেক জায়গা আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়