উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

হাওরের সড়কই কাল হলো

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কুড়িগ্রামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় বন্যার পেছনে হাওরের সড়কই কী শেষ পর্যন্ত কাল হলো? এ প্রশ্ন এখন সর্বত্র। অনেকেই মনে করছেন ইটনা, মিঠামইন সড়ক ভয়াবহ এ বন্যার দায় এড়াতে পারে না। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বারবার বন্যার জন্য এ সড়ককে দায়ী করে আসছেন। অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়াকেই বন্যার অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করে নানান মন্তব্য করছেন তারা। যদিও এ সড়কই একমাত্র কারণ নয় বলেও উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওই জেলাগুলো এ নিয়ে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ল। এসব জেলার বাসিন্দারা বলছেন, বহু বছরের মধ্যে এত মারাত্মক বন্যার মুখোমুখি হননি তারা। সব মিলিয়ে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়েও বন্যা ঠেকানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বন্যার পানি অপসারণে রাস্তা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর মিন্টু রোডে সরকারি বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কোথাও রাস্তার কারণে পানি অপসারণে বাধা পেলে সেই রাস্তা যেন কেটে ফেলা হয়।
অবশ্য নদী গবেষকরা বলছেন, এবারের বন্যার পেছনে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ। এর বাইরে আরো কিছু উপাদান কাজ করেছে। আগে এসব এলাকার নদীতে নাব্য ছিল, এত রাস্তাঘাট ছিল না বা স্থাপনা তৈরি হয়নি। ফলে বন্যার পানি এখন নেমে যেতেও সময় লাগে। আগে জলাভূমি, ডোবা থাকায় অনেক স্থানে বন্যার পানি থেকে যেতে পারত। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। হাওরের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক নির্মাণ হয়েছে। ফলে পানিপ্রবাহে বাধার তৈরি হচ্ছে। শহর এলাকায় বাড়িঘর তৈরির ফলে পানি আর গ্রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। যার ফলে বন্যার তীব্রতা টের পাচ্ছেন এ এলাকাবাসী।
এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে যখন বৃষ্টি হয়, সেটা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার ভেতরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে চলে আসে। সেখানে এসে পানি দ্রুত নামতে পারে না। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা তৈরির কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। তার মতে, উজান থেকে পানি নামে উত্তর থেকে দক্ষিণে। ইটনা-মিঠামইন সড়কটিও উত্তর থেকে দক্ষিণে তৈরি। ফলে এটা হয়তো হাওরের পানিপ্রবাহের কিছুটা বাধার তৈরি করছে, কিন্তু বন্যার এটাই একমাত্র কারণ নয়। কিন্তু নদী গবেষক মমিনুল হক সরকারের মতে, হাওরে যেসব রাস্তা পূর্ব-পশ্চিমে তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোই হাওরের পানি চলাচলে মূল বাধার তৈরি করছে। এ রকম অনেক রাস্তা কোনো রকম পরিকল্পনা ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে। এ কারণেই বন্যা এ রকম তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, বন্যার এমন ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত কয়েকটি একনেক বৈঠকে হাওর অঞ্চলে উড়ন্ত সড়ক ছাড়া আর কোনো সড়ক না বানানোর অনুশাসন দিয়ে আসছেন। এমনকি পানি যাতে দ্রুত নেমে যেতে পারে এ জন্য রাস্তাগুলোতে বড় বড় ব্রিজ নির্মাণেরও নির্দেশ দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়