উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে দাবি : সিন্ডিকেটে প্রবাসী সচিবের পুত্র মন্ত্রীপতœী এমপির নাম!

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোয় সিন্ডিকেট ঠেকাতে সরব রয়েছে বায়রার সিন্ডিকেটবিরোধী মহাজোট। তারপরও সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) উল্লেখিত ফাঁকফোকরের সুযোগ নিচ্ছে সিন্ডিকেট। বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমীন স্বপন ও মালয়েশিয়ায় তার সহযোগী দাতু আমিন ইতোমধ্যে তাদের পছন্দের ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি দিয়ে গড়েছেন সিন্ডিকেট। এতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের ছেলে, মন্ত্রীর স্ত্রী, তিন এমপির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে অভিযোগ তুলে সচিবের পদত্যাগ দাবি করেছেন মহাজোট নেতারা। গতকাল শনিবার দুপুরে বনানীর হোটেল শেরাটনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। অবশ্য ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার ছেলে এর সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি ইম্পেরিয়াল রিসোর্টের আরেকটি সিস্টার কনসার্নে কাজ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বায়রার সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর আলী, আবুল বাশার, সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী, শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন, সাবেক অর্থসচিব ফখরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি টিপু সুলতান উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যোগ দেন মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠনের মহাসচিব ড. সুকুমার নায়েক। তিনি সিন্ডিকেটের বিরোধিতা করেন। খবর পাওয়া গেছে, মালয়েশিয়ায় এই সিন্ডিকেটের হোতা দাতু আমিন সেখানকার সরকারের সমর্থন হারিয়েছেন।
বক্তারা বলেন, সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, দেশ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ইচ্ছেমতো বাছাই করে রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা চূড়ান্ত করবে মালয়েশিয়া। সিন্ডিকেট এই সুযোগ নিচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব সরাসরি জড়িত থাকায় সমঝোতা স্মারকে এভাবে লেখা হয়েছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে তা সংশোধনের সুযোগ থাকলেও তা করা হয়নি। সমঝোতা স্মারক সংশোধন না করলে সিন্ডিকেট বন্ধ করার সুযোগ নেই। সরকারকে এটা করতেই হবে।
নূর আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী সিন্ডিকেটের কথা না বললেও মালয়েশিয়া থেকে সমঝোতা স্মারকের সুযোগে সিন্ডিকেটের কথা বলা হচ্ছে। মেডিকেল সেন্টারের নামেও শত শত কোটি টাকা হাতানোর চেষ্টা করছে ২৫ জনের সিন্ডিকেট। আবুল বাশার বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কর্মী পাচ্ছে না মালয়েশিয়া। নেপাল ও ইন্দোনেশিয়াও কর্মী পাঠাচ্ছে না। ফখরুল বলেন, স্বপন ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন। টিপু সুলতান বলেন, সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতরা দেশের শত্রæ। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
বায়রা নেতারা জানিয়েছেন, ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ে গড়া নতুন সিন্ডিকেট রয়েছে ফেনী-২ আসনের

সরকারদলীয় এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রতিষ্ঠান স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড (আরএল-১৫৫১)। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত মাত্র ৯১ জন কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। ঢাকা-২০ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ও বায়রার সাবেক সভাপতি বেনজির আহমদের প্রতিষ্ঠান আহমদ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১১৪৬), যেটি সাত বছরে মাত্র ৩৮৭ জন কর্মী বিদেশ পাঠিয়েছে। তালিকায় রয়েছে ফেনী-৩ আসনের এমপি ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (আরএল-১৩২৭)। তার আরো দুটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে এতে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটাল ইন্টারন্যাশনালও (আরএল-১১৩) রয়েছে। জনশক্তি ব্যবসায় অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৮৮৫ জন কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। সচিবপুত্র রাফিতের প্রতিষ্ঠান ইম্পেরিয়াল রিসোর্টও আছে। সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রক রুহুল আমীন স্বপনের ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৫৪৯) এবারো রয়েছে শীর্ষে। তার আরো তিনটি প্রতিষ্ঠান এতে আছে ভিন্ন নামে।
জানা গেছে, এর আগে ১০ জনের সিন্ডিকেটে ছিল আল ইসলাম ওভারসিজ (আরএল-১০৬)। প্রতিষ্ঠানটির মালিক জয়নাল আবেদিন জাফরের ছেলে রাশাদ আবেদিনের প্রতিষ্ঠান এসওএস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস (আরএল-১৫৩০) এবারের সিন্ডিকেটেও রয়েছে। আগের সিন্ডিকেটে ছিল শানজারি ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৭৪২)। তার বদলে এবার আছে নিজাম হাজারীর স্নিগ্ধা ওভারসিজ। প্যাসেজ এসোসিয়েটসের (আরএল-৪৬৮) বদলে এসেছে অর্থমন্ত্রীর স্ত্রীর প্রতিষ্ঠান। সিন্ডিকেটের বাকি এজেন্সিগুলো হচ্ছে- আবেদ এয়ার ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস (আরএল-১০২৪), আকাশ ভ্রমণ (আরএল-৩৮৪), আল রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৩৫৪), আল বুখারি ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৩০১), অ্যামিয়াল ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৩২৬), বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৩৫১), বিএম ট্রাভেলস (আরএল-১৪২১), ব্রাদার্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৫৭১), গ্রীনল্যান্ড ওভারসিজ (আরএল-৪০), ইম্পেরিয়াল রিসোর্স (আরএল-১৮৭৪), আরভিং এন্টারপ্রাইজ (আরএল-২১৫), ঐচি ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১১৪১), পাথ ফাইন্ডার (আরএল-১২৯৮), সরকার ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৭১৫), শাহীন ট্রাভেলস (আরএল-২১৪), সাউথ পয়েন্ট ওভারসিজ (আরএল-৬২২), ইউনাইটেড ম্যানপাওয়ার (আরএল-১২১৬), জাহারাত এসোসিয়েট (আরএল-২৮৫) এবং নিউএজ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৭০৩)। সিন্ডিকেটের তালিকায় রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম বাছেকের প্রতিষ্ঠা বিএম ট্রাভেলস লিমিটেড। তালিকায় থাকা ব্রাদার্স ইন্টারন্যাশনাল এখন পর্যন্ত মাত্র ৫২ জন এবং ইম্পেরিয়াল রিসোর্স মাত্র ৩২৪ জন কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগেও মালয়েশিয়ার ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (এফডব্লিওসিএমএস) এই তালিকাটি ছিল। সম্প্রতি তা মুছে ফেলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অনিয়মের অভিযোগে ২০০৯ সালে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। ২০১৫ সালে সমঝোতা স্মারক সই করে। জিটুজি প্লাস নামে পরিচিত ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দফায় ৯৩০টি এজেন্সির তালিকা পাঠায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ১০ প্রতিষ্ঠানকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয় দেশটি। কীসের ভিত্তিতে কোন মানদণ্ডে এজেন্সি বাছাই করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা কখনো দেয়নি মালয়েশিয়া। দেশটির তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ছিল বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনলাইন সিস্টেম নিয়ন্ত্রক। তার অংশীদার ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয় নাগরিক দাতু আমিন। ২০১৮ সালে মাহাথির মুহাম্মদ ক্ষমতায় ফিরে জিটুজি প্লাস বাতিল করেন।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শ্রমবাজার খুলতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর নতুন সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুদেশ। আবারো সিন্ডিকেটের প্রস্তাব আসে মালয়েশিয়া থেকে। গত ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভান প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদকে চিঠিতে জানান, ২৫ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করবে তার দেশ। প্রতিটি এজেন্সির অধীনে ১০টি করে সাব-এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারবে। এজেন্সি বাছাই করবে মালয়েশিয়ার সরকার। ১৭ জানুয়ারি ফিরতি চিঠিতে বাংলাদেশ জানায়, প্রতিযোগিতা আইনের কারণে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে পারে না বাংলাদেশ। সব প্রতিষ্ঠানকে সমান সুযোগ দিতে হবে। সম্প্রতি দুদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে বাংলাদেশ রাজি হয়, এজেন্সি বাছাই করবে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, এজেন্সি বাছাই বাংলাদেশ নয়, মালয়েশিয়ার সরকারের বিষয়। যদিও অন্য ১৩টি দেশ থেকে সব এজেন্সিই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়