উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে ২০ হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নন্দন দেবনাথ, রাঙ্গামাটি থেকে : রাঙ্গামাটির পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী সব জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে মাঠে কাজ শুরু করেছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের ৪টি টিম। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের এডিসি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, রেড ক্রিসেন্ট, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা এই টিমে থাকবে বলে জানিয়েছেন। গত শুক্রবার পুরোদিন ও গতকাল সকাল পর্যন্ত রাঙ্গামাটিতে থেমে

থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকি নিয়ে ৬০টি পয়েন্টে প্রায় ২০ হাজার মানুষের দিন কাটছে। প্রাথমিকভাবে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র। গতকাল শনিবার বিকাল থেকে জেলা প্রশাসনের ৪টি টিম মাঠে কাজ শুরু করেছে।
সকাল থেকে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা শহরের শিমুলতলী, রূপনগর, লোকনাথ আশ্রম, ভেদভেদি, মনোঘরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা বলেন, বৃষ্টি হচ্ছে জানি তারপরও বাড়িঘর ছেড়ে কোথায় যাব? সরকারতো আমাদের কথা চিন্তা করে না। আমরা দিনমজুর, দিনে এনে দিনে খাই। বেশি ভাড়া দিয়ে বাসায় থাকতে পারি না। তাই খাস জায়গা কিনে কোনোমতে বাড়িঘর তৈরি করে থাকার চেষ্ট করি। বৃষ্টি বেশি এলে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাই। তারা বলেন, কীভাবে কী করব। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল সব রয়েছে আমাদের। এগুলো ফেলেও যেতে পারি না। তাছাড়া বাড়িঘর তালা মেরে চলে যাব এ উপায়ও নেই। চোরের দল এসে সবকিছু নিয়ে যাবে এই ভয়ও রয়েছে।
গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের টিম, রেড ক্রিসেন্ট, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করে সেখান থেকে সাধারণ মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে নির্দেশনা প্রদান করেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বেশ কিছু লোকদের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভারি বর্ষণের ফলে সম্ভাব্য সমস্যা ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জরুরি সভা করেছি এবং রাঙ্গামাটি শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবার সমন্বয়ে টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে এবং বৃষ্টি হলেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টরা এলাকায় যাচ্ছেন।
এদিকে ভারি বর্ষণের কারণে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত রাঙ্গামাটি শহরের লোকনাথ মন্দির, শিমুলতলী, রূপনগর, মোনঘর এলাকাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরো জানান, প্রাথমিকভাবে রাঙ্গামাটি শহরে ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। পাহাড় ধসের ফলে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দীর্ঘ ৯ দিন পর সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগের কর্মীরা কাজ করে সংযোগ সড়ক ঠিক করে। দীর্ঘ ৪ দিন রাঙ্গামাটি ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে প্রতি বছর জুন মাস এলেই পাহাড়ের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায় প্রচারাভিযানও চালানো হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়