উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

বুকে আগলে যমজ সন্তানকে বাঁচিয়ে চলে গেলেন মা

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : অভাব অনটনের সংসারে কিছুটা বাড়তি আয়ের পোশাক কারখানায় কাজ নেন শাহীনুর আকতার (৩২)। ছয় মাস বয়সি যমজ কন্যা শিশু সন্তান তান্না ও তিন্নিকে নিয়ে নগরীর ফিরোজ শাহর বরিশাল ঘোনা ঝিলের পাহাড়ের কোলে গড়ে ওঠা একটি ছোট ঘরে থাকতেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তার বোন মাইনুর আকতার (২০) ও তাদের মা-বাবা।
অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার রাতে দুই শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন শাহীনুর। মাঝরাতে ভারি বর্ষণে হঠাৎ পাহাড়ে ধসে পড়ল তাদের ঘরে। ঘর ভেঙে পড়ার মূহূর্তে মা শাহীনুর টের পেয়ে বুকে আগলে ধরেন সন্তানদের। এ ঘটনায় যমজ সন্তান বেঁচে গেলেও বাঁচতে পারেননি সেই মা শাহীনুর ও তার বোন মাইনুর। শুক্রবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে নগরের আকবর শাহ থানার ফিরোজ শাহ কলোনির ঝিল-১ এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হৈ চৈ শুরু হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শাহীনুর আকতার (৩২) ও তার বোন মাইনুর আকতারকে (২০) মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। শিশু দুটিসহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন শাহীনুরের বাবা ফজলুল হক (৭০) ও মা রানু বেগম (৬০)।
প্রতিবেশীরা জানান, শাহিনুর তার ৬ মাস বয়সি ২ সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন। পাহাড় ধসে তার পিঠে পড়ে। নিজে মারা গেলেও সন্তানদের কোনো ক্ষতি হতে দেননি তিনি। শাহিনুরের স্বামী দিনমজুর জয়নাল আবেদীন সে সময় বড় বোনের বাড়িতে ছিলেন। পাহাড় ধসের খবর শুনে ভোরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়ি ফিরে জানতে পারেন দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী ও শ্যালিকা মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন তার শ্বশুর ও শাশুড়ি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কাঁদতে কাঁদতে জয়নাল বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রশাসনের লোকজন মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলছিল। আমরা এখানে বসবাস করছি প্রায় ১০ বছর। কখনো কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হইনি। ভেবেছিলাম এবারেও কিছুই হবে না। তাই আমরা বাড়ি ছেড়ে যাইনি। আমি বুঝতে পারিনি যে, সিদ্ধান্তটি আমার পরিবারের জন্য এমন মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসবে।
চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ফজলুল বলেন, রাত পৌনে ৩টার দিকে দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। বিকট শব্দে ঘুম ভাঙার পর অনুভব করি আমার ওপর ভারি কোনো কিছু চেপে বসেছে। আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। প্রতিবেশী এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
শাহীনুরের ফুফাতো বোন রেশমা আক্তার বলেন, দুই বোন ও তাদের মা-বাবা একসঙ্গে ১ নম্বর ঝিলের বাসায় থাকতেন। পাহাড়ধসে শাহীনুরের ছয় মাস বয়সি দুটি মেয়ে বেঁচে যায়। তারা মায়ের বুকে ছিল। নিজের জীবন উৎসর্গ করে তান্না ও তিন্নিকে বাঁচিয়েছে শাহীনুর। চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. অং শুই প্রæ মারমা বলেন, রানু বেগম মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। বর্তমানে তিনি নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় দোকানদার ফারুক বলেন, এখানে যারা থাকেন, তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল নয়। না হলে, ঝুঁকি জেনেও এখানে থাকার অন্য কোনো কারণ নেই। কম দামে ঘর ভাড়া তো কোথাও নেই। এছাড়া দুর্ঘটনা হলে এখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই আসেন। অন্যসময় এখানে কেউ আসেন না। ঝুঁকিপূর্ণ ঘর থেকে সরে যাওয়ার জন্যও কেউ কাউকে বলে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়