উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল : অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দাবি রিহ্যাবের

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত নির্দেশনার আদলে প্রস্তাবিত আগামী অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। প্রস্তাবিত বাজেট দেশের নির্মাণ তথা আবাসন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ সম্পর্কিত রিহ্যাবের প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংগঠনটির সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘হাউজিং লোন’ নামে ২০ হাজার কোটি টাকার রিফিন্যান্সিং তহবিল গঠনসহ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য কমানোরও দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইন্তেখাবুল হামিদ, সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ, সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম দুলাল, লায়ন শরীফ আলী খান এবং প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আমাদের দাবিগুলো সম্পৃক্ত করা হলে এ খাত সরকারের রাজস্ব আয়ে ভূমিকা রাখবে এবং সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ঝুঁকিমুক্ত হবে। কারণ নতুন সম্পদ সৃষ্টি প্রবৃদ্ধিকে সরাসরি ধনাত্মক করে। অন্যথায় এ খাতের সঙ্গে যুক্ত সব ব্যবসায়ী মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হবেন। সর্বোপরি দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতোপূর্বে আবাসন শিল্পের সব সমস্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাশে থেকেছেন, নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছেন। এই শিল্পের বর্তমান সংকটেও তিনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা এ খাতের বিনিয়োগকারীদের।
তিনি বলেন, রিহ্যাবের বাজেট প্রস্তাবনায় আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলাম স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনাপ্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখতে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিনাপ্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় এসেছে। সরকার ২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পেয়েছে। এই টাকা দেশে বিনিয়োগ না হলে তার গন্তব্য কোথায় তা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। বর্তমানে ডলারের সংকট কেন তৈরি হয়েছে সেটাও আপনারা জানেন। গত বাজেট অনুমোদনের পর অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যার অভাবে বিনিয়োগ কম হয়েছে।
আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, নানাবিধ কারণে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতি টালমাটাল। আগামীতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরো বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। সেটির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মানি ট্রাফিকিং রোধ করার চেষ্টা করছে। স্ব-স্ব দেশ বৈদেশিক মুদ্রা কীভাবে দেশের ভেতরে রাখা যায় তার ব্যবস্থা করছে। কাজেই আমরা এই অবস্থায় যদি অপ্রদর্শিত অর্থপাচারের সুযোগ না রেখে মূলধারার অর্থনীতিতে নিয়ে আসতে পারি তবে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং আসন্ন সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, অর্থমন্ত্রী গত ১৫ জুন সরকারি অর্থনৈতিক ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বলেছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ উৎপাদনের জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থাটাই দায়ী। হঠাৎ করে বা রাতারাতি সিস্টেম পরিবর্তন করা সম্ভব না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, নিবন্ধন ব্যয় ১২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২-৩ শতাংশে নিয়ে এসে ধীরে ধীরে সিস্টেম পরিবর্তন করলে তবেই সঠিক মূল্যে রেজিস্ট্রেশন হবে এবং সার্বিক অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ বলে গণ্য করা যাবে। ঘোষিত বাজেটে পাচার করা টাকা দেশে আনার বিষয়ে আইন করা হয়েছে, এটি সাহসী পদক্ষেপ কিন্তু দেশ থেকে যাতে টাকা পাচার না হয় সেদিকেই আমাদের বিশেষ নজর দেয়া উচিত।
কাজল বলেন, নির্মাণ ব্যয় ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেলে প্রতি বর্গফুটের জন্য গ্রাহককে বাড়তি বহন করতে হবে প্রায় ১ হাজার টাকা। কারণ আমরা ডেভেলপাররা অধিকাংশ জমিগ্রহণ করি ৫০:৫০ রেশিওতে (অনুপাতে)। বাড়তি এই দাম ‘সবার জন্য আবাসন’ এই সেøাগানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং অনেকের আবাসনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে লিফটের কর ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫ শতাংশ ও অগ্রিম কর (এটি) ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে লিফট আমদানিতে শুল্ক কর ১১ থেকে এক লাফে ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩০ শতাংশে উঠেছে। হঠাৎ করে এই মূল্যবৃদ্ধি ফ্ল্যাটের দাম আরো বাড়িয়ে দেবে বলেও জানান তারা।
রিহ্যাব জানায়, আবাসন খাতের অন্যতম প্রধান উপকরণ এমএস (নরম ইস্পাতের) রড। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ইস্পাতের কাঁচামালের ওপর শুল্ক কর না কমিয়ে উল্টো বিক্রয় পর্যায়ে প্রতি টন বিলেট (রড-ইস্পাত উৎপাদনের কাঁচামাল) ও রডের ওপর ২০০ টাকা করে মূসক বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে রডের দাম আরো বাড়বে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের তারের বিদ্যমান শুল্ক ৫ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার বিভিন্ন ধরনের পাইপের ক্ষেত্রে শুল্ক ১৫ থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, জিআই ফিটিংসের বিপরীতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে।
অন্যদিকে টিউবসহ একই জাতীয় অন্যান্য পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পণ্যটির ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপিত ছিল না। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে এর ওপরও ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কারোপ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়