উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

প্রস্তুতি থাকলেও বন্যার্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ : সারাদেশে ১৪০ মেডিকেল টিম গঠন

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : টানা বর্ষণ ও অব্যাহত পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যার পানি বেড়েই চলছে। পানি বাড়তে থাকায় অন্যসব স্থাপনার পাশাপাশি হাসপাতালগুলোও তলিয়ে গেছে। সংকটাপন্ন এ সময়ে এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা চরম ব্যাহত হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় পানিতে ডুবে মৃত্যু, সাপের কামড়ে মৃত্যু এবং বন্যাপরবর্তী সময়ে ডায়রিয়ার সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে প্রস্তুতি থাকার পরও দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না স্বাস্থ্যসেবায়।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলা তলিয়ে গেছে পানিতে। চিকিৎসকরা সেবা দিতে প্রস্তুত থাকলেও বড় সমস্যা হিসেবে দেখা গিয়েছে রোগীদের খাবার সরবরাহের বিষয়টি। এছাড়া হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রোগীদের সেবা দেয়ার বিষয়টি নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বানভাসি মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ইমার্জেন্সি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে একটি সেন্ট্রাল মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৩ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডকে গতকাল শনিবার সিলেটে পাঠানো হয়েছে। এই ৩ সদস্যের বোর্ডের সদস্য হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ক্লিনিক শাখার পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক। তারা সরজমিন বন্যার সার্বিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল শনিবার বলেন, বন্যাকবলিত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে সারাদেশে ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে ডাক্তার, নার্স, সিভিল সার্জন, এসপি, ডিসি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও আছেন। তারা প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে সেবা দেবে। সিলেটের জেলা ও উপজেলা নিয়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকায় একটি সমন্বয় কমিটি গঠন হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সিলেটে বন্যার পাশাপাশি অনেক জেলা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে প্রত্যেক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। পানি ঢুকে গেছে প্রতিটি হাসপাতালে এবং যাওয়া-আসার রাস্তা ডুবে গেছে। চিকিৎসা দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজেও বন্যার পানি ঢুকেছে, সেখানে বিদ্যুৎ নেই। জেনারেটরের মাধ্যমে সেই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।
এদিকে ৩ সদস্যের দলটি বিভিন্ন দিক দিয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান দলের একজন সদস্য, অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সিলেটে আমরা ঢুকতে পারিনি। আব্দুস সামাদ আজাদ চত্বর পর্যন্ত আমরা

যেতে পেরেছি। স্থানীয় লোকজন জানালেন সেখানে বন্যার পানি এতটা বেশি যে, যাওয়া সম্ভব নয়। বাসস্ট্যান্ড দিয়েও বানভাসী এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেতে পারিনি। ৮০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে অস্বাভাবিক একটি অবস্থা বিরাজ করছে।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের নিচতলা ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে। চিকিৎসকদের সেবা দিতে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে খাবারের। রোগীর খাবার সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। বাজার, ঘাট, দোকান-পাট সবইতো তলিয়ে গেছে। আইসিইউতে রোগী আছে। সেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। জেনারেটর দিয়ে কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেটি সচল রাখতে তেলের প্রয়োজন। সেটি পেট্রোল পাম্প থেকে আনতে হবে। কিন্তু সেখানোতো পানিতে তলিয়ে গেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আছে। সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ সবাই মিলে কাজ করলে আশা করি সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে আমরা যে প্রস্তুতি সেটি কিন্তু এই দুর্যোগে পর্যাপ্ত নয়। পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইনের মজুত আছে। তবে মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সুনামগঞ্জে সেবা পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে নজরদারি বাড়ানো, সাপে কাটার রোগীর চিকিৎসায় সাপের বিষক্ষয়ের ওষুধ (এন্টিভেনম) মজুত আছে। সময়মতো রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে এন্টিভেনমের সংকট হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে এখন স্বাভাবিক সময় নয়। আর বন্যাকবলিত এলাকায় এই মুহূর্তে নয়; পানি নেমে গেলে ডায়রিয়া দেখা দেবে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ইউএইচএফপিও (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা), আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তাদের (আরএমও) মোবাইলে চার্জ নেই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটি চ্যালেঞ্জিং অবস্থা। আমারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, অধিদপ্তরসহ বিভিন্নভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, এই মুহূর্তে মেডিকেল টিমের চেয়ে উদ্ধার কাজটাই বেশি জরুরি। মানুষকে পানি থেকে আগে উদ্ধার করতে হবে, তারপর চিকিৎসা। আপাতত কাজ হলো মানুষকে উদ্ধার করা এবং শুকনা খাবার দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবায় যাতে কোনো সংকট তৈরি না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা।
এর আগে ১৭ জুন বিকাল সাড়ে ৪টায় সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে ভার্চুয়ালি জরুরি সভা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন যুক্ত ছিলেন।
এদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় বিষাক্ত সাপের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে একটি সতর্কতা বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। সেখানে বিষাক্ত সাপের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে শয়ন কক্ষে অথবা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে লাল রঙের লাইফবয় সাবান টুকরা টুকরা করে চারপাশে ছিটিয়ে রাখতে বলা হচ্ছে। কারণ, লাইফবয় সাবানে কার্বক্সালিক এসিড/কার্বনিল এসিড থাকায় সাপ কাছে আসতে পারে না। অথবা কার্বলিক এসিডের ছিপি খুলে ঘরের কোণে রাখতে হবে। কার্বলিক সাবান অথবা কার্বলিক এসিড পাওয়া না গেলে শজিনার ডাল অথবা রসুন কেটে টুকরো টুকরো করে ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে রাখলেও ঘরে সাপ ঢুকবে না। অথবা লাল মরিচ পুড়িয়ে দিলে ঘরে সাপ থাকলে বেরিয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়