উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী : জরাজীর্ণ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে বাড়ছে গ্রাহক ভোগান্তি ও দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নাজমুল হক, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) থেকে : সোনাইমুড়ীর দক্ষিণাঞ্চলীয় ৪ ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুৎ সবরাহের কোনো প্রকার ঘাটতি না থাকলেও সঞ্চালন লাইনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ার ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন-নিবেদন করেও প্রতিকার মিলছে না। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সঞ্চালন লাইনে প্রতিনিয়ত বৈদুতিক শর্ট সার্কিটের ফলে অগ্নিদুর্ঘটনার ফলে বিনষ্ট হয় সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। বিদ্যুতায়িত হয়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারানোর ঘটনাও বিস্তর রয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার ফলে এলাকাবাসীর বিদ্যুতে ভোগান্তি নিত্যদিনের সঙ্গী।
উপজেলার ২ নম্বর নদনা ৭ নম্বর বজরা, ৮ নম্বর সোনাপুর ৯ নম্বর দেওটি ইউনিয়ন ঘুরে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া যায়। যুগের পর যুগ ধরে সমিতির কর্তা ব্যক্তিরা নিয়ম মাফিক চাকরি করে গেলেও কেউ এই এলাকার সঞ্চালন লাইনগুলো নবায়নের কোনো উদ্যাগ গ্রহণ করেননি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৪০ বছর আগের নির্মিত সঞ্চালন লাইনে কোনো মতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চলে আসছে। আট নম্বর সোনাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর নাপিতবাড়ী থেকে দুই নম্বর নদনা ইউনিয়নের পশ্চিম কালুয়াই গ্রাম পর্যন্ত একটি সরবরাহ লাইন রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৮০ দশকের দিকে এই লাইটি বেগমগঞ্জ প্রধান সাব-স্টেশন লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে নির্মাণ করা হয়। এই লাইটির নির্মাণের পর থেকে শুধু নতুন গ্রাহক বর্ধিত করে বিদ্যুৎ বিল আদায় করে আসছে। কিন্তু এটি তার, খুঁটি, ট্রান্সফরমাগুলোর অবস্থা খারাপ। লাইনটি নবায়ন করার জন্য স্থানীয় গজারিয়া জামে মসজিদের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মর্তুজা আরইবি চেয়ারম্যান নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) নোয়াখালী বরাবরে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনের একটি তদন্ত পর্যন্ত হয়নি। তিন গ্রামজুড়ে বিস্তৃত এই লাইটির কোথাও খুঁটি হেলে পড়ে আছে, কোথাও তার ঝুলে আছে, কোথাও গাছের লতাপাতা জড়িয়ে রয়েছে সঞ্চালন লাইনে। একটু ঝিরি বৃষ্টি হলে হয়তো তার ছিঁড়ে নয়তো খুঁটি ভেঙে অথবা গাছের ঢাল পড়ে ২-৩ দিনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। সোনাইমুড়ী বিদ্যুৎ অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লাইন টেকনিশিয়ান জানান, বাংলাদেশের অনেক দুর্গম অঞ্চলে চাকরি করেছি কিন্তু এমন ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন কোথাও পাইনি। বজরা সোনাপুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমিশাপাড়ায় একটি সাব-স্টেশন স্থাপন করা হলেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নতি নেই সরবরাহ লাইন মেরামত না হওয়ার ফলে। সঞ্চালন লাইনে দুর্গতির ফলে ঘটেছে অসংখ্য মৃত্যুর ঘটনাও। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বিকালে বজরা ইউনিয়নের শীলমুদ গ্রামের শহীদ মাওলানা বাড়ির আব্দুর রহিম (৫৫) ধানের জমিতে যান। ঘটনাস্থলে প্রায় ৪২ বছর আগে স্থাপিত একটি স্টিল পিলারের কাছে এলে তিনি ছটফট করতে থাকেন। এ সময় তাকে উদ্ধার করতে এসে এ কে এ কে ইউসুফ (৪৮), সুমন (২৮), জুয়েল (১৬) বিদ্যুৎতায়িত হয়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান।
আব্দুর রহিম জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের এক যুগ্ম সচিবের আত্মীয় হওয়ার সে সময় সমিতির কর্তারা শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে সমিতির তহবিল থেকে চার লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও একজন করে সমিতিতে চাকরি দিয়ে রক্ষা পান। এ ঘটনার এক বছর অতিবাহিত হলেও লাইন সংস্কারের উদ্যাগ নেয়া হয়নি। প্রায় ১৫ কিমিজুড়ে বিস্তৃত এই লাইনটির আওতায় বজরা এলাকায় রয়েছে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে হাসপাতালের সব কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে এসব জরাজীর্ণ লাইন নবায়ন করার দাবি উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে কথা হলে সোনাইমুড়ী জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, ডিজিএম আলতাফ গহর চৌধুরী হজে যাওয়ার কারণে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। লাইন সম্পর্কে তিনি বিশেষ অবগত নন। তবে একে এক সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়