উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

করোনা পরিস্থিতি : স্বস্তির খবর নেই, নতুন ঢেউ শুরু সংক্রমণ ঢাকা কেন্দ্রিক বাড়ছে

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্বস্তির সময় কাটিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের গ্রাফ আবারো ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। দীর্ঘ ৩ মাস পর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। গত ৬ জুন দৈনিক শনাক্তের হার ১ শতাংশ অতিক্রম করেছে। ১২ জুন ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে দাঁড়ায়। এরপর এই হার বাড়তে বাড়তে ১৭ জুন ৬ দশমিক ২৭ শতাংশে পৌঁছায়। ওই দিন ৪৩৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের বেশির ভাগই ঢাকা (মহানগরসহ) জেলার। এছাড়া সারাদেশের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।
গতকাল শনিবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারোর মৃত্যু হয়নি। ৮৮০টি পরীক্ষাগারে ৫ হাজার ১২২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। শনাক্ত হয় ৩০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪৭ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। মোট শনাক্ত ৩০৪ জনের মধ্যে ২৮২ জনই ঢাকা বিভাগের। এর মধ্যে ২৮০ জন ঢাকা (মহানগরসহ) জেলায় শনাক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই করোনা সংক্রমণ নিয়ে কোনো স্বস্তির খবর মিলবে না। সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান এই ধারা বজায় থাকলে জুন মাস শেষ হওয়ার আগেই শনাক্তের হার ১০ শতাংশ অতিক্রম করতে পারে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাট, গাদাগাদি করে মানুষের বাড়ি ফেরা, মানুষের অসচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে যাওয়া- এসব কারণে করোনার সংক্রমণ নিয়ে আপাতত কোনো স্বস্তি নেই। তারা সংক্রমণের এই বৃদ্ধির বিষয়টিকে আরেকটি নতুন ওয়েভ (ঢেউ) বলে আখ্যায়িত করেছেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই নতুন এই ঢেউ শুরু হয়েছে বলে জানান কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, চলতি মাসের ৫/৬ তারিখেও সংক্রমণের হার ছিল ১ শতাংশের নিচে। ক্রমান্বয়ে এই হার বাড়ছে। বাড়তে বাড়তে এটি এখন ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ বাড়ার এই প্রবণতা দেখে মনে হচ্ছে এটি বাড়তেই থাকবে।
আগের বছরের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে বিশিষ্ট এই রোগতত্ত্ববিদ বলেন, গত বছর এমন সময় সংক্রমণের হারটা আরো অনেক বেশি ছিল। এ বছর তা একটু কম। এর কারণ হচ্ছে টিকা। গত বছরের তুলনায় এ বছর বড় পার্থক্য হলো টিকা কার্যক্রম চলমান থাকায় এবং অধিক সংখ্যক মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। ফলে সংক্রমণ আগের বছরের তুলনায় কম। ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাট, মানুষের বাড়ি যাওয়াকে কেন্দ্র করে যে সমাগম হবে তাতে সংক্রমণ বাড়বে।
গতকাল মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনা আবার বাড়ছে। এ বিষয়ে আমাদের সজাগ হতে হবে। মাস্ক পরতে হবে এবং টিকা না নিলে অবশ্যই বুস্টার ডোজ নিতে হবে। যতটুকু সম্ভব সাবধানে থাকতে হবে। এখন দেশে ভাইরাসটির কোন ধরনে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এখন ‘বি এ ৪’ এবং ‘বি এ ৫’ এই ২টি ওমিক্রনের নতুন উপধরন দিয়েই বেশি সংক্রমণ হচ্ছে বলে আমি মনে করি। যারা একবার সংক্রমিত হয়, তারা সাধারণত পুনরায় সংক্রমিত হতে পারে ৩ মাস পর, যদি নতুন ধরন না আসে। এখন ওমিক্রন ধরন কিন্তু টিকা নিলেও সংক্রমিত করছে। সাধারণত টিকা নেয়ার ৩-৬ মাস পর্যন্ত একটা সুরক্ষা পাওয়া যায়। টিকা নিলে রোগীর অবস্থার অবনতি থেকে রোধ করে। কিন্তু সংক্রমিত হওয়া থেকে বাদ যায় না। তবে ভাইরাসের কোন ধরনে সংক্রমণ হচ্ছে এর জন্য আরো বেশি জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন। ডা. মুশতাক হোসেনও মনে করেন দেশে ভাইরাসটির নতুন ঢেউ দেখা যাচ্ছে।
পরামর্শক কমিটির ৬ সুপারিশ : করোনার সংক্রমণ বাড়ায় ১৫ জুন রাতে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় ৬টি পরামর্শ দেয়া হয়। পরামর্শগুলোর মধ্যে আছে- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে পুনরায় উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের গণমাধ্যমে অনুরোধ জানানো; সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও জনসমাগম বর্জন করা। ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান (যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জায় ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। যাদের জ্বর, সর্দি, কাশি হচ্ছে তারাও অনেকে করোনা পরীক্ষা করছেন না, এতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। এজন্য যাদের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে এবং যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসছেন তাদের পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করা; যেসব দেশে কোভিড-১৯ জীবাণুর ধরন ও উপধরনে সংক্রমণের হার বেশি, সেই দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা আক্রান্ত মানুষের মাধ্যমে ঢুকছে বলে মনে করা হয়। এজন্য বিমান, স্থল ও নৌবন্দরগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ, টিকা সনদ আবশ্যক করা। বিশেষত বেশি আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য সন্দেহজনক ব্যক্তিদের র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করার ব্যবস্থা করা, সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকার ২য় ও ৩য় ডোজ যারা এখনো নিতে পারেননি তাদের এটা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করতে হবে। ৫-১২ বছরের শিশুদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে নাইট্যাগের পরামর্শ অনুসরণ করা দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চতুর্থ ডোজ অনুমোদন করলে তা বিবেচনা করা। কোভিড-১৯ এর ধরন শনাক্তের জন্য সম্ভাব্যতা বিবেচনা করা। টিকা-পরবর্তী প্রতিরাধ ক্ষমতা কত দিন বজায় থাকছে সে বিষয়ে গবেষণা করা; করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য যে বিশেষ শয্যা, আইসিইউ ব্যবস্থা ও জনবল ছিল, তা বর্ধিত হারে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত রাখা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়