আরো ৩১ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

জলে ভাসা সিলেট এক বিচ্ছিন্ন জনপদ : ১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা > আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ > বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌবাহিনী, যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার-ক্রুজ

পরের সংবাদ

বান্দরবানে ভূমিধসের আতঙ্কে পাহাড়ের ৩০ হাজার পরিবার

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবান প্রতিনিধি : ভারি বর্ষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পাদদেশ। ফলে যে কোনো মুহূর্তে পাহাড়ধসে ঘটতে পারে প্রাণহানির ঘটনা। এ অবস্থায় আতঙ্কে দিন পার করছেন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ৩০ হাজার পরিবার।
স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবানে প্রায় প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের রক্ষায় প্রতি বছর নানা উদ্যোগ নিলেও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বসবাসকারীদের সরিয়ে আনতে পারেনি। শহরের ইসলামপুর, লাঙ্গিপাড়া, হাফেজ ঘোনা, কালাঘাটা, বনরূপা, ক্যাচিং ঘাটাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে পাহাড় কেটে পাদদেশে নতুন নতুন বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি জমির মূল্যে সমতলের তুলনায় কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষজন পাহাড় কেটে সেখানে বসতি নির্মাণ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। আর বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান সদর ছাড়াও লামা, আজিজনগর, ফাসিয়াখালী, ফাইতং, গজালিয়া, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে হাজার হাজার পরিবার। ফলে সেখানে পাহাড় ধসের ঝুঁকি ও মৃত্যুর আশঙ্কা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে ৩০ হাজারের বেশি পরিবার। এ বছর পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড় ওঠায় গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও পরিবারের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তাদের তথ্যমতে, শুষ্ক মৌসুমে উন্নয়নের নামে পাহাড় কেটে সেই মাটি দিয়ে বিভিন্ন এলাকার সড়কে সৃষ্ট গর্ত ভরাট ও নতুন সড়কে মাটি দেয়াসহ নানা কাজ করা হয়। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। বর্ষাকালে টানা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে সেই পাহাড়ের কাটা অংশ ধসে ঘরের ওপর পড়ে। এতে মাটি চাপা পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বিগত বছরগুলোয় এভাবেই পাহাড়ধসের

ঘটনা ঘটেছিল।
তবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা জানিয়েছেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। তাদের ভাষ্যমতে, বেঁচে থাকার তাগিদে কয়েক বছর ধরে তারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন। সরকার প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি শুরু হলেই মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলে। তখন পুনর্বাসনের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনা কেটে গেলে আশ্বাস বাস্তবায়ন হয় না। প্রতি বছর বলা হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাসেম পাড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমার বাড়িটি পাহাড়ের পাদদেশে। যারা নিচে থাকে তারা প্রভাব দেখিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে ফেলায় আমার বাড়ি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো মুহূর্তে আমার বাড়িটি ধসে পড়তে পারে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারি সহায়তা চেয়েছি, কিন্তু পাইনি।
কালাঘাটায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মনোয়ারা বেগম বলেন, সরকার আমাদের নিরাপদে রাখতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে থাকতাম না। আমরা বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছি। এছাড়া আমাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।
বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক

কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, বেশি বেশি পাহাড় কাটলে পাহাড়ের উপরের আস্তর সরে গিয়ে ভেতরের নরম অংশ বেরিয়ে আসে। এতে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়। এ অবস্থায় ভারি বর্ষণে পাহাড়ধস হয়। পাহাড়ধসের প্রধান কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা, প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকম্প ও অতিবৃষ্টি। এসব কারণে পাহাড়ের মাটির গঠন দুর্বল হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কায়েসুর রহমান বলেন, বান্দরবানে এখন প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। তাই পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন পাদদেশে বসবাসকারীরা। তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে এরই মধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা নিজ নিজ উপজেলায় ঝুঁকিতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাবেন। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে।
সরকারি তথ্যমতে, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০, ২০১৫ সালে লামায় ৪, সিদ্দিকনগরে ১ ও সদরের বনরূপা পাড়ায় ২, ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় ৭ ও রুমা সড়কে ২৩ জুলাই ৫, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কালাঘাটায় ১ ও লামায় ৩, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামাতে ১, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ ও ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইঙ্গ্যা ঝিরিতে এক পরিবারের ৩ জন পাহাড়ধসে নিহত হন। এ অবস্থায় এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে না নিলে পাহাড়ধসে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়