আরো ৩১ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

জলে ভাসা সিলেট এক বিচ্ছিন্ন জনপদ : ১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা > আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ > বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌবাহিনী, যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার-ক্রুজ

পরের সংবাদ

বন্যার কারণে লোকসানের আশঙ্কায় গৃহস্থ ও খামারিরা

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : কুরবানির ঈদের বাকি এক মাসেরও কম সময়। এর মধ্যে অনেক খামারে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। দেশি গরুর চাহিদা সব সময় বেশি থাকলেও শঙ্কর জাতের গরুও আছে খামারে। গৃহস্থের গোয়ালেও এবার অনেক গরু। গ্রামগঞ্জে কৃষক ও গৃহস্থদের সংগ্রহ এবার ভালো। বেড়েছে খামারের সংখ্যাও। সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, গৃহস্থ ও খামারিরা মনে করছেন দেশি গরুতেই মিটবে কুরবানির পশুর চাহিদা। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গবাদি পশুর দাম বাড়তে পারে বলে সাধারণ মানুষ মনে করলেও দেশের অনেক জেলায় বন্যার পদধ্বনিতে গৃহস্থ ও খামারিরা আছেন দুশ্চিন্তায়। অবশ্য কিছু কিছু খামারে এবারো প্রায় অর্ধ লাখ টাকা মূল্যের গরু উঠানো হয়েছে। আছে বাহারি নামের ফ্রিজিয়ান, ব্রাহামা জাতের গরুও। আছে দেশীয় ষাড়ও।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, কুরবানির পশু নিয়ে সংশয়ের কোনো কারণ নেই। দেশে উৎপাদিত পশুই কুরবানির জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে বাংলাদেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কুরবানির জন্য ভারত, মিয়ানমার বা অন্য কোনো দেশ থেকে একটা পশুও আনার দরকার নেই। দেশে পর্যাপ্ত পশু আছে। বিদেশ থেকে অবৈধপথে যাতে পশু আসতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ গবাদি পশু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান বলেছেন, এবারো কুরবানির জন্য দেশে পর্যাপ্ত গরু, মহিষ ও ছাগল রয়েছে। গৃহস্থ ও বেপারিরা পুরো শ্রমের দাম পাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতবার অনেক পশু বিক্রি হয়নি। করোনার কারণে কুরবানি কম হয়েছে। এবার কুরবানি বেশি হবে আশা করে তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। অর্থমন্ত্রী বাজেটে গো-খাদ্যের দাম কমানোর কথা বললেও বাস্তবে চিত্র উল্টো। বন্যার পদধ্বনির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এতদিন কষ্ট করে যারা গবাদিপশু পালন করেছেন, তারা পানি উঠলেও ঈদের আগে গরু বিক্রি করবেন না। এর প্রভাব পড়বে বাজারে। চোরাই পথে কিছু গরু আসছে বলেও দাবি করেন তিনি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে দেশে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪

হাজার ৩৮৯টি কুরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৩৮৩টি গরু ও মহিষ এবং ৭৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭টি ছাগল ও ভেড়া বাজারে বিক্রির জন্য উঠতে পারে। গত বছর কুরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কুরবানি হয়েছে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু। পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পশু কুরবানি হয় গত বছর। ২০১৬ সালে ৯৮ লাখ ১৩ হাজার পশু কুরবানি হয়। তারপর থেকে ক্রমাগত বেড়ে ২০১৭ সালে ১ কোটি ৪ লাখ, ২০১৮ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ও ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার পশু কুরবানি হয়। ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ওই বছর ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু কুরবানি হয়। গত দুই বছর করোনা ও বন্যার কারণে চাহিদা কম ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৭ সাল থেকে ছাগল ও ভেড়ার চেয়ে গরু-মহিষ কুরবানি দেয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। গত বছর ছাগল ও ভেড়া কুরবানি হয়েছে ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি; গরু-মহিষ কুরবানি হয়েছে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি। যেখানে করোনার আগে ২০১৯ সালে ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৪৩৪টি গরু-মহিষ কুরবানি হয়েছিল এবং ছাগল ও ভেড়া হয়েছিল ৪৯ লাখ ১ হাজার ১৮৮টি।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রো বড় বড় পশু বিক্রি করে আলোচিত। এই ফার্মের ইনচার্জ মাইদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেছেন, এবার তাদের সংগ্রহে ১৮শ গরু এবং মহিষ, ছাগলসহ কুরবানির আরো দুইশ পশু রয়েছে। এর মধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। আলাল-দুলাল নামে দুটি গরু ২৫ লাখ টাকা দাম চাওয়া হলে বিক্রি হয়েছে ২২ লাখ টাকায়। ব্রাহামা জাতের রোজো-২ এবং পুষ্পা নামের গরু দুটির প্রতিটির দাম ৪০ লাখ টাকা করে চাওয়া হচ্ছে। বাহাদুরের দাম ১৫ লাখ টাকা। এক হাজার কেজির ওজনের দেশাল কালো মানিকের দাম ১৮ লাখ টাকা। গর্জিলা সাড়ে ৯ লাখ টাকা। সংগ্রহে আছে ভুট্রি টুনটুনি ও বাহারি রংয়ের মহিষ। বিক্রি হয়েছে ১১শ কেজি ওজনের একটি মহিষ। এছাড়া তুফান, জেমস বন্ড, কেনেডি, র‌্যাম্বো ও প্রেসিডেন্ট নামে আরো ৫ টি বিশাল আকৃতির গরু রয়েছে তাদের সংগ্রহে।
মাইদুল জানান, এবারো প্রচুর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তাদের নির্দিষ্ট ক্রেতা রয়েছে। ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়া, পাবনা এবং কুমিল্লায় তাদের শাখা রয়েছে। সেখানেও অনেক পশু কুরবানির জন্য তৈরি করা হয়েছে। তাদের কাছে গরু ছাড়াও ছাগল, মহিষ, উঠ, গারল, দুম্বা রয়েছে। বেশ কয়েকটি উন্নত জাতের গরু এবার ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখানে শাহী ওয়াল, অস্ট্রাল, বীর, হাসা, মীরকাদিম, দামুসসহ আরো বেশ কয়েক জাতের গরু লালন-পালন করা হয়েছে। প্রতিদিন পশুগুলোকে গমের ভুষি, ভুট্টা দানা, ছোলা, ঘাস, খড়, খুদ ইত্যাদি খাওয়ানো হয়েছে। নিয়মিত পশু ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। পশুগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন গোসল করানো হয়। জায়গা পরিষ্কার রাখা হয়। এছাড়া সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে পরিবেশ ঠিক রাখা হয়। সাদেক এগ্রোর এই ইনচার্জ জানান, ৫০০ কেজির নিচে যে গরুগুলোর ওজন সেগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি করা হবে। তবে এখনো সেগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়নি। আর বড় সাইজের গরুগুলো দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করা হবে।
মোহাম্মদপুরে বেড়িবাঁধ এলাকায় ওয়েলথটেক এগ্রো নামের খামারের ম্যানেজার মো. নাঈম হোসাইন বলেন, কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছি। আমাদের সোনারগাঁওয়ে একটা শাখা আছে। দুই জায়গায় মিলে তিনশর মতো পশু রেডি আছে। অলরেডি অনেক পশু ক্রেতা স্বচক্ষে দেখে বুকিং করে রেখেছেন। পশুগুলোকে প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে বড় করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিকর কোনো ইনজেকশন না দিয়ে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে পশুগুলো বড় করা হয়েছে। দানাদার খাবার, গম, ভুট্টা, ঘাস ও সয়ামিল খাওয়ানো হয়েছে পশুগুলোকে। এছাড়া নিয়মিত ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়েছে। বেড়িবাঁধে আল-মদিনা ক্যাটেল ফার্ম নামে খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারাও কুরবানির ঈদের জন্য পশু প্রস্তুত করে রেখেছে। ফার্মের কর্মী নাহিদ খান জানান, এখানে চারশর মতো পশু এখন প্রস্তুত আছে। ঢাকার বাইরে থেকে আরো আসবে। বিভিন্ন জাতের গরু আমরা লালন-পালন করেছি। ছোট-বড় গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া চাহিদা অনুযায়ী তারা আছে তাদের সংগ্রহে।
ঢাকার বাইরে সিরাজগঞ্জে আছে অনেক গরুর ফার্ম। চট্টগ্রাম ও সিলেটেও আছে চাহিদা মতো পশু। সাতক্ষীরার কুবরানির হাটে মাঠ কাঁপাবে এবার ‘সম্রাট’। যার ওজন প্রায় ১৪শ কেজি। মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার চৌগাছা গ্রামের প্রান্তিক খামারি আব্দুল আলিম দীর্ঘ তিন বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড়টি নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করেছেন। আদর করে ষাড়টির নাম দিয়েছেন সম্রাট। সুঠাম দেহের অধিকারি সুউচ্চ এই ষাড়টিকে কুরবানির হাটে তোলার জন্য গোয়াল থেকে বের করতে হয়েছে গোয়াল ঘরের দেয়াল কেটে। প্রতিদিন উৎসুক মানুষ ‘সম্রাট’কে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন ষাড়টির মালিক হতদরিদ্র কৃষক আব্দুল আলিমের বাড়িতে। রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী জেলায় এবার ১৬ হাজার ৭৯ জন খামারি ও কৃষকের কাছে আছে এক লাখ ২১ হাজার ৩৭২টি গরু, দুই লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫টি ছাগল, ৩৮ হাজার ২৪৫টি ভেড়া ও তিন হাজার ২১১টি মহিষ। জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, জেলায় এবার কুরবানির জন্য সম্ভাব্য চাহিদা তিন লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার পশু বেশি আছে খামারিদের হাতে। দাম ভালো থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়