আরো ৩১ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

জলে ভাসা সিলেট এক বিচ্ছিন্ন জনপদ : ১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা > আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ > বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌবাহিনী, যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার-ক্রুজ

পরের সংবাদ

ফুটবলার থেকে যেভাবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে মুসা

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : রাজধানীর মিরপুরের কালাপানি এলাকায় জন্ম মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৫) হত্যার সমন্বয়কারী সুমন মোহাম্মদ ওরফে মুসার। শৈশব থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি তার টান ছিল। কালাপানি এলাকার ঈদগাহ মাঠে নিয়মিত ফুটবল খেলতেন তিনি। দিন দিন খেলায় উন্নতি করেন। ভালো খেলোয়াড় হিসেবে এলাকায় খ্যাতি অর্জন করেন। এক সময় বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মিরপুর থেকে ক্লাবপাড়া মতিঝিলে যাতায়াত শুরু করেন। সুযোগও পেয়ে যান প্রথম ডিভিশনে খেলা পিডব্লিউডি স্পোর্টিং ক্লাবে। নিয়মিত প্রাকটিস করতে থাকেন মতিঝিল এজিবি কলোনি এলাকার টিএন্ডটি মাঠ ও ঈদগাহ মাঠে।
সুঠামদেহী এবং তুলনামূলক ভালো খেলোয়াড় হওয়ায় এজিবি কলোনির সমবয়সি অনেকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে মুসার।

এদের মধ্যে পিডব্লিউডির বরখাস্ত হওয়া স্টাফ আমিনুল ইসলাম (যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যা মামলার আসামি) ও মতিঝিল থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক (তৎকালীন ছাত্রলীগ কর্মী) অন্যতম। এরই মধ্যে দেশের ফুটবলে ধস নামা শুরু হলে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যায় মুসার।
ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পেছনে ফেলে মুসা নাম লেখান সন্ত্রাসীদের তালিকায়। চাঁদাবাজি, খুন, মাদক ব্যবসা, বিহারি ক্যাম্পের জমি দখল, কালাপানি এলাকার বস্তিতে ঘর ভাড়া দেয়াসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে থাকেন। কালাপানি এলাকার ত্রাসে পরিণত হওয়ার পর তালিকাভুক্ত শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর দুজন বিকাশ প্রকাশের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার।
পরে বিএনপি সরকারের আমলে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্য ভাইদের নিয়ে মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় একচেটিয়া রাজত্ব করতে থাকেন। তবে ফুটবল খেলার সূত্রে মতিঝিল এলাকার পরিচিতিজনদের সঙ্গে আড্ডা দিতে প্রায়ই ছুটে যেতেন মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায়। সেই সূত্রে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ওমর ফারুক। আর টিপু হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চালক কমলাপুর এলাকার মোল্লা শামীমের সঙ্গে মুসার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আমিনুল। ২০১৬ সালে বোঁচা বাবু হত্যাকাণ্ডে মুসার নাম আসলে মতিঝিল এলাকায় প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি। এরইমধ্যে ফ্রিডম মানিকের মাধ্যমে আরেক পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে পরিচয় হয় মুসার। তখন থেকেই মতিঝিল এলাকায় অদৃশ্য প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন তিনি।
মতিঝিল থানা যুবলীগের এক নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, ২০১৩ সাল পর্যন্ত ফ্রিডম মানিকের কথামতো চলতেন নিহত টিপু ও কারাগারে থাকা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ। পরে তারা ক্যাসিনোকাণ্ডে কারাগারে যাওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ছাঁয়াতলে গেলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় ফ্রিডম মানিকের। স¤্রাটের তোপে ধীরে ধীরে প্রভাব কমতে থাকে জিসান ও ফ্রিডম মানিকের। প্রভাব ফেরাতে এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড ধামাকা দেখাতে মুসার মাধ্যমে কিলার ভাড়া করে টিপুকে হত্যা করা হয়।
এদিকে, পল্লবীর কালাপানি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ডি-ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর দোতলা বাড়িটি মুসাদের। শৈশবে এই বাড়িতেই বেড়ে ওঠেন তিনি। মালিকানা থাকলেও বর্তমানে সেখানে মুসাদের পরিবারের কেউ থাকেন না। বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বেকারির কারখানা করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মুসারা ৬ ভাই। ভাইদের মধ্যে বড় হচ্ছেন তৈয়্যেব শিকদার। অন্য ভাইদের মধ্যে রয়েছেন তালেব, আবুল হোসেন কালা, জাফর শিকদার ও শুটার সালেহ। মুসা যখন অপরাধ কর্মকাণ্ডে নাম লেখায়নি তখন তার অন্য ভাইয়েরা কালাপানি এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিল। ফুটবলে মনোযোগ থাকায় এলাকাবাসী বলত, ৬ ভাইয়ের মধ্যে একমাত্র মুসাই ভালো হয়েছে। সেই মুসাই একসময় ছাড়িয়ে যায় অন্য ভাইদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালাপানি এলাকার মুসার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভোরের কাগজকে বলেন, ওদের নিয়ে কিছু বললেই বিপদ। যদি জামিনে বের হয়, তাহলে আমাদের ক্ষতি করতে পারে। শুধু এই কারণে কিছু বলতে চাই না। এই এলাকার কেউ ওদের পরিবারের কাউকে দেখতে পারত না। কোনো ভাই চাকরি বা বৈধ উপার্জন না করে, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে টাকা উপার্জন করতো।
তিনি জানান, ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ভালোর পথেই ছিলেন মুসা। তাজকে হত্যার মাধ্যমে প্রথম অপরাধ জগতে যাত্রা শুরু হয় মুসার। প্রতিবেশীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করে বলেন, মুসার ভয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকেন তারা। মুসা যখন সন্ত্রাসীদের খাতায় নাম লেখায়নি তখন তার অন্য ৫ ভাই এলাকার ত্রাস ছিল। ফুটবলার থাকা অবস্থায় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এলাকার মানুষদের সঙ্গে প্রভাব খাটাতেন মুসা। এমনকি ফুটবল মাঠেও কারো সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি হলে মারধর করতেন।
মুসাদের বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বেকারীর কারখানা বসানো মো. আলমগীর ভোরের কাগজকে জানান, মুসাকে কখনো তিনি দেখেননি। তার ৪ ভাইকে চেনেন। তারাই ভাড়ার টাকা নিয়ে যান। তবে, মাঝেমধ্যেই পুলিশ এসে মুসা ও পরিবার সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইতো বলে জানান বেকারির কর্মচারীরা।
সূত্র জানায়, মুসার ২ ভাই তৈয়্যেব ও জাফর এখনো কালাপানি এলাকাতেই থাকেন। পরে তাদের সঙ্গে ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা কেউই কথা বলতে রাজি হননি। তৈয়্যেবের স্ত্রী মুঠোফোনে জানান, মুসার বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নন তারা।
জানা গেছে, মুসার স্ত্রী, ১১ বছর বয়সি মেয়ে ও ৫ বছর বয়সি ছেলে মুসাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে থাকেন। পল্লবী থানা সূত্র জানা গেছে, খুন, চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ, জমি দখলসহ মুসার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে পল্লবী থানায়। যার মধ্যে বর্তমানে ৩টি ওয়ারেন্ট রয়েছে মুসার নামে। ২০১২ সালের একটি হত্যাকান্ডের পর পল্লবী এলাকায় ধীরে ধীরে নিজের প্রভাব কমিয়ে আনতে শুরু করে মুসা। এজন্য থানা পুলিশ তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন গাড়িতে থাকা টিপু। এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হন প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার ১২ দিন আগে দুবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন মুসা। সেখান থেকে ওমানে মাজার জিয়ারতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। পরে গত ৯ জুন ওমান থেকে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনে ডিবি পুলিশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়