আরো ৩১ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

জলে ভাসা সিলেট এক বিচ্ছিন্ন জনপদ : ১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা > আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ > বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌবাহিনী, যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার-ক্রুজ

পরের সংবাদ

প্রাক নির্বাচন বুচার রিপোর্ট ১৯৭০

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

১৯৭০ সালের জুন-জুলাই মাসের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঢাকায় আমেরিকান কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল উইলিয়াম স্কট বুচার পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে যে প্রাক নির্বাচন প্রতিবেদন স্টেট ডিপার্টমেন্টের জন্য প্রস্তুত করেছেন রাষ্ট্রদূত তা অনুমোদন করে ওয়াশিংটন পাঠিয়ে দেন। ঈষৎ সংক্ষেপে রিপোর্টটি উপস্থাপন করা হচ্ছে :

আওয়ামী লীগ
পশ্চিম পাকিস্তান সফরে গেলে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবকে উচ্ছ¡সিত অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং তিনিও তার ৬ দফা তাদের সামনে ব্যাখ্যা করার সুযোগ পান। যদিও ঝটিকা সফরে পশ্চিম পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের সম্ভাবনার তেমন হেরফের ঘটবে না, তবুও জনসভায় বিপুল উপস্থিতিতে তার বক্তৃতা পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি জানাতে এবং অগ্রগামী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ইমেজ বৃদ্ধি করতে বিশেষ সহায়ক হবে। এই মুহূর্তে এই দলের সামনে বড় কাজ হচ্ছে জাতীয় পরিষদের আসনের জন্য প্রায় ৫শ মনোনয়ন প্রার্থীর মধ্যে এবং প্রাদেশিক পরিষদে প্রায় ১ হাজার প্রার্থীর মধ্যে সঠিক মানুষটিকে মনোনয়ন দেয়া। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী আবেদনকারীদের অধিকাংশই উকিল, ডাক্তার, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সমাজসেবী। বাছাইয়ের কাজটা কঠিন, কারণ কোনো কোনো আসনে প্রার্থীর আধিক্য, কোনেটিতে যোগ্য প্রার্থীর স্বল্পতা। এছাড়া কাউকে কাউকে কেন্দ্রীয় সরকারে এবং প্রাদেশিক সরকারের ছায়ামন্ত্রী মনে করা শুরু হয়ে গেছে, তাদের সকলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ বা পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। মুজিব এবং তাঁর আওয়ামী লীগ সহকর্মীরা বলে আসছেন এই নির্বাচন আসলে ছয়দফার ওপর রেফারেন্ডাম। আর নির্বাচনী মৈত্রী এড়িয়ে তারা একা এগিয়ে যাওয়ার কথাই বলেছেন (যদিও নির্বাচনোত্তর মৈত্রীর সম্ভাবনার কথা একান্তে ইঙ্গিত দিয়েছেন)।

ন্যাপ (বাম)
আনোয়ার জাহিদ/মশিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন অংশ ২৫ থেকে ২৭ জুন লাহোরে তাদের পার্টিও কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশনে ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে কথা বলেছেন। পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের একটি শক্তিশালী অংশ আলাউদ্দিন/মতিনের পাবনাভিত্তিক নকশাল গ্রুপ এবং কাজী জাফর/মেননের টঙ্গিভিত্তিক গ্রুপ। নির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পর চট্টগ্রাম সিটি ন্যাপের দুজন নেতা ইয়াহিয়ার নির্বাচন ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছেন।
ওয়ালির (ন্যাপ) প্রাদেশিক প্রেসিডেন্ট মওলানা ভাসানী চাতুর্যের সঙ্গে লাহোরে সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে অনুপস্থিত রেখেছেন। যদিও তিনি যে নির্বাচনের বিরোধিতা করেন না- এ কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। লাহোর সিদ্ধান্তের আগে তিনি জানিয়েছেন তিনি কোনো ব্যক্তির পক্ষে নির্বাচন প্রচারণা চালাবেন না। ১৮ জুলাই ভাসানী বলেছেন তার পার্টি নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে আগ্রহী নয়। জনগণকে শিক্ষিত করা তার পার্টির লক্ষ্য। ঘটনাচক্রে একই সঙ্গে সাবেক এমএনএ মশিউর রহমানের কারামুক্তি মানুষের মনে এ ধারণার সঞ্চার করেছে যে, নিশ্চয়ই মার্শাল ল’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো ‘ডিল’ তার মুক্তি নিশ্চিত করেছে। ন্যাপপন্থি হলিডে সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান নির্বাচন সমর্থন না করার বিষয়টি অস্বীকার করেন সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ, বরং ন্যাপকে নিরুৎসাহিত করবে। যাতে ন্যাপের অনুপস্থিতির দোহাই দিয়ে দায়টা তার ঘাড়ে দিয়ে নির্বাচন বাতিল করে দিতে পারে। তোহায়ার মিত্র আবদুল হক কৃষক সমিতির মহাসচিব পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করলে ভাসানী কার্যত সেক্রেটারিবিহীন হয়ে পড়েন। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে ভাসানীর ‘জুন আন্দোলন’ কেন্দ্র করে তার পুত্রের লাগামহীন মন্তব্যের কারণে তাকে এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, তিনি তাতে স্বস্তিতে নেই।

ন্যাপ (ডান)
তারা একদিকে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থাকতে পছন্দ করছেন, আবার বামপন্থিদের ছায়াও ধরে রাখতে চাইছেন। আওয়ামী লীগের ছয়দফার প্রতি মৌন সমর্থন দিয়ে ছাত্রদের ১১ দফার ওপর জোর দিচ্ছেন, পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনও চাইছেন। ১২-১৬ জুন সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং কমিটিং বৈঠকে তাদের সিদ্ধান্ত; (১) লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন; (২) সব প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে একাত্ম হওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যানকারী (স্পষ্টতাই আওয়ামী লীগ) দলের নিন্দা জানান, (৩) দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদের দাবি জানান, (৪) যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এবং অর্থনৈতিক শোষণের বৈশ্বিক কৌশলের নিন্দা জ্ঞাপন করেন।

জামাত-ই-ইসলামি
২৮ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত মওলানা মওদুদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জামাত-ই-ইসলামি পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে নির্বাচনের জন্য ২০১ জন প্রার্থী বাছাই করেন। পূর্ব পাকিস্তানের আমির অধ্যাপক গোলাম আযম কনস্যুলার জেনারেলকে বলেন সমমনা অন্যান্য দলের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়ায় তার নাম প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছেন। তিনি জানান, পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) ৮ দফা তারা গ্রহণ করেছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় ও সংবিধান প্রণয়নে তারা এসবের ওপর জোর দেবেন।

কাউন্সিল মুসলিম লীগ
পূর্ব পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলিম লীগের নেতারা শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের ছয়দফার বিরুদ্ধে অবিরাম প্রচার চালাচ্ছেন। দলের মহাসচিব আবুল কাশেম বলেছেন ছয়দফার মানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্নতা। অবশ্য এই দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো তারা একটি ছাত্রফ্রন্ট খোলে, ৮ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি খাজা খয়ের উদ্দিন ছাত্রদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।

অন্যান্য রাজনৈতিক দল
পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) সম্মেলন ১১-১২ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় সমমনা দলগুলোর সঙ্গে একটি বৃহত্তর মৈত্র স্থাপন করে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে তারা কাজ করছেন। মাওলানা রাগিব আহসান, একদা ব্রিটিশবিরোধী নেতা পিডিপিতে যোগ দেয়ায় দল শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করছেন। কনডেনশন মুসলিম লীগের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী সদস্য যারা হয়েছেন তাদের কেউ তেমন পরিচিত নন। পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কাইয়ুম) নেতা খান পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছেন; আর্থিক সংকটের কারণে তার দল অর্ধেক সংখ্যক আসনে প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন। ১০-২৩ জুন পর্যন্ত আসগর খানের সফর (তেহরিখ-ই-ইশতিকলাল পার্টি প্রধান, সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান) রহস্যময় রয়ে গেছে। তিনি দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছেন। ৩০ জুন কৃষক শ্রমিক পার্টি প্রধান এ এস এম সোলায়মান একটি হাস্যকর বক্তব্য প্রদান করেছেন। কিছু পশ্চিম পাকিস্তানি শক্তি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নির্বাচনী জোট
বামপন্থি জোট বিভিন্ন বামপন্থি নেতা অসুস্থ মওলানা ভাসানীকে হাসপাতালে দেখতে যান এবং দৃশ্যত সেখানে দুই ন্যাপ, কে এসপি এবং এনপিএলের জোট হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং হাজারভিপন্থি জামায়াতুল ওলেমা-ই-ইসলামও এই জোটে থাকতে পারে, যদিও শেষ দুটি দলের তেমন কোনো সমর্থন এখানে নেই। ডানপন্থি জোট : পাকিস্তান মুসলিম লীগ পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি জামাত-ই ইসলামি যানভিপন্থি মারকাজি জামিয়াতুল ইসলাম নিজেদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জামায়াতের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো থাকলেও পরিচিত ব্যক্তিত্বের ঘাটতি তাদের রয়েছে, সেক্ষেত্রে পিডিপি ও মুসলিম লীগের ব্যক্তিত্বের প্রতি তারা আকৃষ্ট হতে পারেন। আবার তা জামায়াতের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সংগঠন নেতাদের জন্যও বিশেষ উপকারী হওয়ার কথা।

নির্বাচনোত্তর জোট
আওয়ামী লীগ সূত্র থেকে জানা গেছে তারা কোনো নির্বাচনী জোট গঠন করবে না বা জোটে যাবে না। তবে সংবিধান প্রণয়নের প্রশ্নে দুই অঞ্চলের দুটো বড় দলের মধ্যে ঐক্য আবশ্যক। এই দুটি দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পাকিস্তান পিপলস পার্টি যে মুসলিম লীগকে নাস্তানাবুদ করে ফেলবে মার্কিন কূটনীতিকরা তা ভাবতেও পারেননি।) তবে তাদের ঐক্য স্থিতিশীল হবে না। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্ররা মনে করে চাপ সৃষ্টি করে অন্যান্য দলকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মানতে এবং জাতীয় পরিষদে তাদের অনুসরণ করতে বাধ্য করা যাবে- এ ধরনের এককেন্দ্রিক ঐক্যের সম্ভাবনা নেই।

ছাত্র ও প্রচারণা : ধর্মনিরপেক্ষ তারুণ্য ও ধর্মপ্রাণ মুরব্বি
পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্রদের রাজনৈতিক সক্রিয়তার ইতিহাস অনেক পুরনো। দশকের পর দশক ধরে তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা চলে আসছে। শেখ মুজিবুর রহমানসহ পূর্ব পাকিস্তানের অনেক নেতা ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। রাজনীতি সম্পৃক্ত ছাত্ররা দেশ বিভাগ-পূর্ব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভাষা আন্দোলনে এবং গত বছর (১৯৬৯) আইয়ুব খানের পতনে তারা ভূমিকা রেখেছেন। আওয়ামী লীগ এবং ন্যাপ (ডান) তাদের শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং এপসুর (মতিয়া) ওপর নির্ভরশীল। তারা তরুণ উৎসাহী জনশক্তির জোগান দিতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানে সব গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বহীন দলের ছাত্র সংগঠন রয়েছে। আওয়ামী লীগ শুধু তাদের ওপর নির্ভরই করে না, তোফায়েল আহমেদ ও আবদুর রউফকে জাতীয় সংসদে যাওয়ার জন্য নির্বাচনে মনোনয়নও দিতে পারে। গ্রামাঞ্চলে ভোটার কব্জায় আনতে ছাত্ররাই কার্যকর হবে।

অন্যান্য বিষয়
উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করায় প্রতিবাদ হাঙ্গার মার্চ বাজেট-পরবর্তী ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি চতুর্থ পরিকল্পনা ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রতিরক্ষা বাজেট বৈদেশিক ঋণ ইত্যাদি নির্বাচনে প্রভাবিত করে।
নির্বাচনে আমেরিকার হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কয়েকটি দল নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে আসছে। নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ থাকলেও সংবিধান প্রণীত হতে পারবে কি-না এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। সন্ধিগ্ধরা মনে করেন পাঞ্জাবি অধ্যুষিত সেনাবাহিনী ও সিভিল সার্ভিস সংসদে পূর্ব পাকিস্তানকে কর্তৃত্ব করতে দেবে না। সে ক্ষেত্রে কাউন্টার ক্যু অভ্যুত্থান ঘটে যেতে পারে। ৩১ আগস্ট ১৯৭০ উইলিয়াম স্কট বুচার যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তার একাংশের অনুবাদ উপস্থাপন করা হচ্ছে :

আওয়ামী লীগ
(নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত তারিখ ছিল ৫ অক্টোবর। বন্যা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন পেছানোর রাজনৈতিক দাবি উঠে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৪-১৬ আগস্ট পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থান করেন এবং নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন এবং ১৫ আগস্ট নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোঘণা করেন। এই ঘোষণা অনুযায়ী ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ জাতীয় পরিষদের নির্বাচন। প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনও পিছিয়ে যায়।)
নির্বাচন পেছানোর দাবিতে আওয়ামী লীগ ছিল অগ্রগামী। তবুও ধারণা করা হয়েছিল নির্বাচন দেরিতে হলে আওয়ামী লীগ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে এই দলের তহবিলের অবস্থা ভালো হওয়ায় বর্ধিত নির্বাচন প্রচারণা পর্যন্ত টিকে যাওয়ার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্বাচন পেছানো নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান মুজিব ‘কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি’- অন্য কেউও তাকে ডিঙ্গিয়ে কিছু বলেননি। এতে বোঝা যাচ্ছে, অসন্তোষের সঙ্গে হলেও তারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে তাদের প্রার্থী পুনরায় চূড়ান্তকরণের কাজের উৎসাহ হ্রাস পেয়েছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষে আরো কিছু ঘটনা ঘটেছে, আদমজী জুট মিলে আওয়ামী লীগের শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ জয়লাভ করেছে। সামরিক আইন অমান্য করায় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (এম এ আজিজ ১৮ জুলাই গ্রেপ্তার) ১৫ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান। ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের ইংরেজি মুখপত্র ‘দৈনিক দ্য পিপল’ প্রকাশনা শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সমর্থক ও অন্যরা আশঙ্কা করছেন নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর দেরি করলে অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনায় নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যেতে পারে কিংবা বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
জুলাই রিপোর্ট অভ্যুত্থানের কথা স্পষ্ট করে বলা হলেও আগস্ট রিপোর্ট সামরিক অভ্যুত্থানেরই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়