নাটোরে বন্ধুকে খুন : ১৪ মামলার আসামি রাসেল ঢাকায় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

সাক্কুর পরাজয় পাঁচ কারণে

পরের সংবাদ

ভালো ফলন ও ন্যায্যমূল্য : চলনবিল অঞ্চলে কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : ছোট ভ্যান, ট্রলি, নসিমন-করিমনে যে যার মতো করে কলা নিয়ে আসছেন হাটে। সাজিয়ে রাখা হচ্ছে হাটজুড়ে। দূরদূরান্ত থেকে ফড়িয়া মহাজনরা আসছেন সেই কলা কিনতে। যাবে বিভাগীয় শহর থেকে দেশের নানা প্রান্তে।
কৃষকের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। ভোর রাত থেকেই চলছে কলা কাটা আর গাড়িতে সাজানোর কাজ। যতদূর চোখ যায় শুধু কলা আর কলা। পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি কলাবাহী ট্রাক। শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহে ৫ দিনই হয় কলা বেচাকেনা। এমন চিত্র দেখা যায় চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর হাটে।
চলনবিল অঞ্চলের নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া উপজেলায় অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। অনেক কৃষকের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরেছে এ কলা চাষে। কলার বাম্পার ফলন সেই সঙ্গে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শ্রম ও খরচ খুবই কম। জৈবসার ব্যবহার করে কলা চাষ করার ফলে স্থানীয় বাজারে এ কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের কলাচাষি মো. আমিনুল ইসলাম লিটন বলেন, মাছের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে কলা চাষ করেছি। মাছে লাভ কম হলেও কলায় প্রচুর লাভ হয়েছে। একবার কলার গাছ লাগালে ৩-৪ মৌসুম বিক্রি করা যায়। এ বছর ৩০ বিঘার পকুর পাড়ে কলার চাষ করেছিলাম। খরচ বাদে শুধু কলাতেই ৪ লাখ টাকা লাভ হয়েছে।
বিলচন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের প্রভাষক কৃষিবিদ জহুরুল হক সরকার বলেন, আমি এক একর জমিতে কলা চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকার খরচ করে ৫০-৬০ হাজার টাকার কলা বিক্রি করেছি। এই এলাকার মাটি অত্যন্ত উর্বর। তাই ফসলের পাশাপাশি সব ধরনের ফল বাঙ্গি, তরমুজ, লিচু, আম ও কলা ভালো হয়। এ কারণে এই এলাকার কৃষকরা ফসলের সঙ্গে ফল চাষেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
নাজিরপুর হাট ইজারাদার নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ছাড়াও নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রাম থেকেও প্রচুর পরিমাণে কলা আসে এই হাটে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ ট্রাক কলা লোড হয়ে দেশে নানা প্রান্তে যাচ্ছে। প্রতি কাঁদি কলা আকার ভেদে ৩শ-৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক টন কলা আসে এই হাটে।
সফল চাষি মান্নান সরকার বলেন, জৈবসার ব্যবহার করার কারণে এখানে ফলন ভালো হয়। এছাড়াও অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি এবং খরচ কম হওয়ায় আমাদের এলাকার কৃষকরা এখন কলা চাষে ঝুঁকছে বেশি। আমি ৫ বছর ধরে কলা চাষ করে আসছি। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে সাগর কলা, অমৃত সাগর, মেহর সাগরসহ বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ৩শ-৪শ চারা রোপণ করা যায়।
বছর খানেকের মধ্যেই রোপণকৃত গাছ থেকে কলা পাওয়া যায়। আমার কলা চাষে সফলতা দেখে এলাকার কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জানান, গত বছর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হয়েছিল। এ বছর আরো ৫০ হেক্টর বেড়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কলা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়