নাটোরে বন্ধুকে খুন : ১৪ মামলার আসামি রাসেল ঢাকায় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

সাক্কুর পরাজয় পাঁচ কারণে

পরের সংবাদ

ফরিদপুরবাসীর জন্য নতুন দিগন্তের হাতছানি

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মশিউর রহমান খোকন ও বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর থেকে : আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এ সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় ক্ষণ গণনার সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের আশায় বুক বাঁধছে ফরিদপুরের মানুষ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের এই সেতু দেশের অর্থনীতিতে যুগান্তকারী প্রভাব ফেলবে স্বাভাবিকভাবেই। পদ্মা সেতু ফরিদপুরবাসীর জন্য নতুন দিগন্তের হাতছানি। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটবে। ইতোমধ্যে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হতে শুরু করেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থায় অভাবনীয় উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার চিত্র বদলে যাবে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ইতোমধ্যে সেতুকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর-মাদারীপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় অলিম্পিক ভিলেজ, শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী এবং ভাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।
ফরিদপুরের সর্ববৃহৎ পাটকলের মালিক ও করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, আমরা পাটজাতদ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করি। দৌলতদিয়া ও কাঁঠালবাড়ির ঘাটের কারণে আমাদের ৩-৫ দিন দেরি হয়ে যেত মালামাল পৌঁছাতে। ঘাটেই ট্রাক আটকে থাকত। সময়মতো পণ্য সরবরাহ দিতে পারতাম না। সরবরাহ দিতে না পারার কারণে বিদেশে ভাবমূর্তি নষ্ট হতো। এমনকি ক্রেতারা পদ্মা নদী পার হয়ে ফরিদপুরে আসতে চাইত না। এখন সেতু হয়ে যাওয়াতে বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আমরা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারব। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে এ সেতুর অবদান থাকবে

বলে জানান তিনি।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক ডা. আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটো, তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণবঙ্গের নেতা। সর্বোপরি তিনি বাংলাদেশে নেতা, সারা বিশ্বের নেতা। তিনি আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু করে দিয়েছেন এ জন্য তাকে অশেষ ধন্যবাদ। জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিটো বলেন, আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে ফরিদপুরেই রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করি। তারপরও মুমূর্ষু রোগীদের ঢাকা পাঠাতে হয়। রোগীদের ঢাকা পাঠাতে গিয়ে পদ্মার ফেরিঘাটে বিলম্বের কারণে অনেকে মৃত্যুবরণ করেন। তাই অনেক সময় এই ফেরির কথা চিন্তা করে রোগীকে বাধ্য হয়ে ফরিদপুরেই চিকিৎসা দিতে হয়েছে। এতে অনেক বিপত্তি হয়েছে। পদ্মা সেতু তৈরি হওয়ায় আর কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে না। দ্রুত রোগীদের ঢাকায় স্থানান্তর করা যাবে।
ফরিদপুর চেম্বার অব কর্মাসের সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, আগে উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করা হয়েছিল পদ্মার এপারে শিল্প-কারাখানা স্থাপন করতে। তখন তারা ধমকের সুরে তখন বলেছিলেন ওখানে কল-কারখানা করা যাবে না। এখন তারাই ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে এবং পদ্মাতীরবর্তী অঞ্চলে কল-কারখানা ও ভারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান করার জন্য কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছেন, শুধু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে। এতে আমাদের এই অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের এসব শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থান হবে এবং একটি অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিন চৌধুরী বলেন, শুধু পদ্মায় ফেরিঘাটের কারণে আমরা ট্রাক ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড নাজেহাল হয়েছি। ব্যবসায়ীদের মালামাল ট্রাকে করে নিয়ে ঘাটে ৪-৫ দিন আটকে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। তখন আমাদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হতো। কোনো কোনো মাসে আমরা যে ট্রাক থেকে আয় করব তা বন্ধ হয়ে যেত। আমরা ট্যাক্সের টাকা দিতে পারিনি, ফিটনেস করাতে পারিনি। নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে চালক-হেলপারের বেতন দিতে হয়েছে। মাঝে মাঝেই আমরা সিদ্ধান্ত নিতাম এই ব্যবসা বন্ধ করে দেব। এখন স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা ভালো থাকব। আমাদের শ্রমিকরা ভালো থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি এবং ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছিল তারাই এই দেশটাকে আফগানিস্তান বানিয়েছিল। আল্লাহর রহমত যে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ হওয়াতে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়াতে, এশিয়া মহাদেশের একজন নেত্রী হওয়াতে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে তিনি আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিলেন। ট্রাক মালিক পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রেজাউল করিম বাচ্চু বলেন, ফরিদপুর থেকে এয়ারপোর্টগামী গাড়িই বেশি চলাচল করে ফেরি দিয়ে। পদ্মার ফেরিঘাটের কারণে আমরা সময়মতো এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে পারিনি। ফ্লাইট মিস হওয়ার কারণে পার্টির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশি টাকা খরচ করে পরের দিনের এয়ার টিকেট কেটে তাদের বিদেশ যেতে হয়েছে। আমরাও ভাড়া পাইনি ঠিকমতো। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদেরও ছাড় দিতে হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে আমরা দৌলতদিয়া দিয়েই ঢাকা এয়ারপোর্টে যাব। কারণ তখন ঘাট ফ্রি হয়ে যাবে। যানজট যা হবে তা পদ্মা সেতু এলাকাতেই হবে।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু দাবি তুলে ধরেন। তার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফরিদপুরে একটি ইন্ডাস্ট্রি জোন তৈরি, গ্যাস পাইপ লাইন এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। নজরুল ইসলাম বলেন, এগুলো করা হলে ফরিদপুর একটি সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক জেলায় রূপান্তর হবে। ব্যবসায়ীরা তখন তাদের মূলধন বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন।
বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। তখন এই সড়কে দামি দামি গাড়ি চলবে, যা এতদিন কোনো বাস মালিক কিনতে সাহস পেত না। কারণ ফেরিঘাটে এসব গাড়ি উঠতে-নামতে পারত না। এখন আমরা এই রুটে একটি গাড়ি দিয়ে কমপক্ষে দুবার ট্রিপ দিতে পারব। আগে একটি গাড়ি ঢাকা গেলে একবারই ট্রিপ দেয়া যেত। পদ্মা সেতু চালু হলে যাত্রীদের পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়