নাটোরে বন্ধুকে খুন : ১৪ মামলার আসামি রাসেল ঢাকায় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

সাক্কুর পরাজয় পাঁচ কারণে

পরের সংবাদ

প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পাহাড় রক্ষা জরুরি

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রাচ্যের রানিখ্যাত ও সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমির অপর নাম চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল চট্টগ্রামকে ঘিরে গড়ে ওঠা পর্যটন খাত অপার সম্ভাবনাময় সাফল্য অর্জন করছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা চিন্তা না করে বর্তমান সময়ে পাহাড় কাটার ধুম লেগেছে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল ও গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে পাহাড় ধসের পথ সুগম হয়। পরিণতিতে প্রতিবারই প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। বরং কিছু অসচেতন মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে পরিবেশেও এর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে একের পর এক পাহাড় ধসের বীভৎস ঘটনা কোনোভাবেই থামছে না। চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাড়ের সম্ভাব্য ধস এবং ধসে প্রাণহানি এড়াতে একটি সুপারিশ করা হয়েছিল ২০০৭ সালে। ওই বছরের ১১ জুন চট্টগ্রামের পৃথক সাতটি স্থানে পাহাড় ধসসহ ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর গঠিত তদন্ত কমিটি এ সুপারিশ করে। সেই ভয়াবহ পাহাড় ধসের ১৫ বছর পূর্ণ হলেও ওই সুপারিশটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে পাহাড়টিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। ২০০৭ সালের ওই ঘটনার পর পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ওইদিন রেলওয়ে পাহাড়তলী এলাকার সীমানা প্রাচীর ভেঙে ১২ জনের মৃত্যুর জন্য গঠিত একটি কমিটি ১৪টি এবং নগর ও আশপাশের এলাকায় ভূমিধসে প্রাণহানির জন্য গঠিত কমিটি ৩৬টি সুপারিশ করে। একই ঘটনায় সিডিএমপির (সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি) পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যাপক মাকসুদ কামালকে প্রধান করেও গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। এ কমিটির ২২ দফা সুপারিশ ছিল। অর্থাৎ ২০০৭ সালের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনাকে ঘিরে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো ৭২টি সুপারিশ করে। যার বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি গত ১৫ বছরে। ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটে আরো ১১৬ জনের। সবমিলিয়ে গত ১৫ বছরে নগরে ও আশপাশে পাহাড় ধসে ২৪৩ জন প্রাণ হারায়। এদিকে সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করা। বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে যারা বসবাস করছেন তাদের স্থানান্তর ও পুনর্বাসন করা। ২০০৭ সালের পাহাড় ধসের পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) সদস্য সচিব করে গঠন করা হয় ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’। এ পর্যন্ত ২৭টি সভা করেছে ওই কমিটি। প্রতিটি সভায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যারা বসবাস করে তাদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। কমিটির সর্বশেষ সভা হয়েছে গত ২৭ মার্চ। ওই সভায়ও একই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এক্ষেত্রে নগরে বিদ্যমান পাহাড়গুলোর মালিকদের অবৈধ বসতিদের তালিকা পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ সাড়া দেয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধ বসতিদের তালিকা প্রস্তুত করাও সম্ভব হয়নি।
পাহাড় কেটে বনজঙ্গল উজাড় করার ফলে পরিবেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাহাড়ের গাছ-পালা অবাধে কেটে ধ্বংস করে ফেলায় অনেক বন্য পশু-পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। গাছপালা কাটার ফলে প্রাণী জগতের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে একদিকে পাহাড়ি অঞ্চল সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালিতে নগরীর নালা-নর্দমা ভরাট হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে, পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, পাহাড় রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠা ঘনবসতি সরিয়ে প্রাণহানি ও মহাবিপর্যয় থেকে বাঁচান।

আলতাফ হোসেন হৃদয় খান
লেখক ও সমাজকর্মী, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়