নাটোরে বন্ধুকে খুন : ১৪ মামলার আসামি রাসেল ঢাকায় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

সাক্কুর পরাজয় পাঁচ কারণে

পরের সংবাদ

পাটুরিয়া ফেরিঘাট : রাতে বিক্রি হচ্ছে যমুনার লাখ লাখ টাকার বালু

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সুরেশ চন্দ্র রায়, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) থেকে : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ফেরিঘাটে রয়্যালিটির নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে যমুনা নদীর তীর কেটে বালু বিক্রি করছেন মো. মানিক ও মিন্টু মিয়া নামক প্রভাবশালী দুই মাটি ব্যবসায়ী। এতে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
পাটুরিয়া ঘাট এলাকার স্থানীয়রা জানান, এলাকার জনগণ ও জায়গা জমির দিকে না তাকিয়ে মোন্তাজ মাস্টারের ইশারায় মানিক এবং মিন্টু যেভাবে যমুনার তীর কেটে বালু বিক্রি করছেন তাতে বর্ষাকালে আমাদের এলাকা ধ্বংসের মুখে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা তাদের মাটি কাটতে নিষেধ করলে তারা আমাদের রয়্যালিটির মাটি বিক্রির দোহাই দিচ্ছেন। কিন্তু তারা মূলত রয়্যালিটির নাম ভাঙিয়ে যমুনার তীর ধ্বংস করছেন। এই দুই ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
মাটি ব্যবসা জগতে এই দুজনের গুরু নালী কৃষ্ণ বরড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোন্তাজ মাস্টার নামক একজন বিশিষ্ট মাটি ব্যবসায়ী। মানিকগঞ্জ জেলায় শিক্ষক হিসেবে তার পরিচিতির গণ্ডি সীমিত হলেও একজন সফল মাটি ব্যবসায়ী হিসেবে সর্বমহলে তিনি বিশেষ পরিচিত। অবৈধ মাটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে বহুবার জেল-জরিমানা করেছে। তবে এখন তিনি মাটি ব্যবসা না করার শর্তে উপজেলা প্রশাসনের কাছে মুচলেকা দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
স্থানীয়রা উপহাসের ভঙ্গিতে জানান, খাচিলত যায় না ধুইলে আর স্বভাব যায় না মইলে। মোন্তাজ মাস্টার প্রশাসনের কাছে যতই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোক আর মুচলেকা দিক না কেন তিনি মরার আগ পর্যন্ত এ অবৈধ মাটির ব্যবসা ছাড়তে পারবেন না। তবে এখন তিনি পর্দার অন্তরালে থেকে ব্যবসার কলকাঠি নাড়ছেন। আর বিশেষ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত তার দুই বিশ্বস্ত লোক মানিক আর মিন্টুকে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করাচ্ছেন।
গত জানুয়ারি মাসে র‌্যাব-৪ এর অভিযানিক দল এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি জমি দখল করে মাটি ব্যবসা করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল-জরিমানা করেছেন শিবালয় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল ইসলাম। সহকারী কমিশনার সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের ১৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময় বহু দিন পূর্বে অতিক্রান্ত হলেও এখনো বালু ব্যবসায়ীরা বীরদর্পে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত মার্চ মাসের শেষে নালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোন্তাজ উদ্দিনসহ তিনজনকে জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুল ইসলাম। এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রশাসন একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও অজানা কারণে বন্ধ হয়নি বালুখেকোদের তাণ্ডব। সম্প্রতি রাতের পর রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মিন্টু মানিক গং আরো মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাত হলেই মিন্টু মানিকদের পদচারণায় কম্পিত হয় যমুনা নদীর পাড়। আর বিলীন হয় যমুনা তীরের বালু।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও জেলা-জরিমানা সত্ত্বেও কীভাবে বালু ব্যবসা করছেন জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী মানিক ও মিন্টু জানান, আপনারা নিউজ করলে আমাদের কিছু বাড়তি টাকা খরচ হয়। বেশ কিছু দিন মাটির সাইড বন্ধ থাকে। তারপর আবার আগের মতই ব্যবসা চলে। আমরা সবাইকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করি।
পাটুরিয়া ঘাটের সবাই বলে আপনি এখন পর্দার আড়াল থেকে মাটির ব্যবসা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোন্তাজ মাস্টার জানান, আমি এখন মাটির ব্যবসা করি না। কিন্তু ব্যবসা না করলেও আগামী ১২ বছর পর্যন্ত আমার নাম থাকবে।
শিবালয় পোর্ট অফিসার সাজেদুর রহমান মোবাইলে জানান, পাটুরিয়া ঘাটে মাটির ব্যবসা আজ নতুন না। দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এটি যদি বন্ধ করতে চান তবে ডিসির কাছে একটি আবেদন দেন। ডিসি অফিসে আবেদন দেয়ার দায়িত্ব পোর্ট অফিসার হিসেবে আপনার নাকি একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি উত্তেজিত হয়ে মোবাইল কেটে দেন।
বরংগাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি জাকির হোসেন জানান, মাটির গাড়িগুলো হাইওয়ে রাস্তায় রাতে চলাচল করে। রাতে কোনো গাড়িকে মামলা দেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই।
গত কয়েক দিন আগে উপজেলার টেপড়া এলাকায় মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাকের চাপায় একজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত এবং দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করে মামলা দেয়া হয়েছে। ট্রাকের মালিক ও চালকের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান বলেন, যারা নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি-বালি কাটছে ও সরকারি জমি দখল করে বালু ব্যবসা করছে তাদের নামের তালিকা তৈরি করে দেয়ার কথা বলেছি বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের। তালিকা পেলে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়