নাটোরে বন্ধুকে খুন : ১৪ মামলার আসামি রাসেল ঢাকায় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

সাক্কুর পরাজয় পাঁচ কারণে

পরের সংবাদ

নদনদীর পানি বাড়ছে : উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চার জেলার নিচু এলাকা ফের প্লাবিত

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে আবারো প্লাবিত হয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও নেত্রকোনা জেলার নি¤œাঞ্চল। এতে ফসলি জমির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
সিলেট : দুই দিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে আবারো ভেসে গেছে সিলেটের অন্তত পাঁচ উপজেলার নি¤œাঞ্চল। এতে ফসলি জমির পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ভারী বর্ষণের কারণে কোথাও নদীর ডাইক ভেঙে আবার কোথাও তীর উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করা শুরু করে। সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার সদর, পূর্ব ও পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, পূর্ব ও পশ্চিম আলিরগাঁও, রুস্তুমপুর, তোয়াকুল ও লেংগুড়া ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ রনিখাই এবং পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলা সদরের সরকারি অফিসেও পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলার দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন এমাদ জানান, তার ইউনিয়নের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এক মাসের মধ্যে দুই দফা বন্যায় এলাকার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। ত্রাণ তৎপরতাও অপ্রতুল।
এদিকে, মঙ্গলবার রাত থেকে কানাইঘাট পৌর শহরে পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। সুরমা নদীর পানি তীর উপচে পৌর শহরে ঢুকছে। এছাড়া উপজেলার পূর্ব-পশ্চিম ল²ীপ্রসাদ, সাতবাঁক, চতুল ও সদর ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারি ও পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলারও বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে গ্রামীণ যোগাযোগ।
একই সময়ে পানিতে প্লাবিত হয়েছে সিলেট সদর উপজেলার খাদিমনগর, জালালাবাদ, টুকেরবাজার ইউনিয়নসহ নদী তীরবর্তী ও নি¤œাঞ্চল। খাদিমনগর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, আলিনগর, ছয়দাগ ও সাতগাছিসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে সিলেট মহানগরীও। শহরের ছড়া ও খালের চেয়ে নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুরমার পানি উল্টোপথে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নগরীর সোবহানিঘাট, কালিঘাট, ঘাসিটুলা, উপশহর ও ছড়ারপাড়সহ বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার বিকাল

৩টা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে যথাক্রমে বিপদসীমার ১১৪ ও ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমলসিদ, শেওলা ও শেরপুরেও কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি। জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত বাড়ছে লোভা ও ধলাই নদীর পানি।
ছাতক ও শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) : ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতক ও শান্তিগঞ্জের সবত্রই দেখা দিয়েছে বন্যা। এক মাসের ব্যবধানে ফের বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন এ দুই উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তাুঘাট ও হাটবাজার। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট। সর্বত্রই এখন বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত এখানে সুরমা, পিয়াইন, চেলা নদীসহ সব নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলা সদরের সঙ্গে ১৩টি ইউনিয়নের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু সড়ক এলাকা থেকে রহমতবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত তলিয়ে গেছে ছাতক-সিলেট সড়ক। পানি বৃদ্ধির কারণে দুপুর থেকে সিলেটসহ সারাদেশের সঙ্গে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ছাতক-দোয়ারা সড়ক আমবাড়ি, জাউয়া, নোয়ারাই বালিউরা, নরশিংপুর, চৌমুহনীবাজার, কৈতক, হায়দরপুর, জালালপুর, লামারসুলগঞ্জ, জাউয়া, বড়কাঁপন মুক্তিরগাঁও, লাকেশ্বর বাজার, বুরাইয়া, দোলার বাজার, কান্দিগাঁও, হাদা চাঁনপুর, মাদ্রাসা বাজারসড়কসহ গ্রামীণ সব কটি সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ। গ্রামীণ হাটবাজার ছাড়াও ছাতক শহর, নোয়ারাই বাজার, ফকির টিলা, পেপার মিল, কুমনা, মুক্তিরগাঁও, রহমতবাগ, মণ্ডলীভোগ, ছোরাব নগর, চরেরবন্দ এলাকার শত শত বাসা-অফিস ও দোকানে বন্যার পানি ঢুকেছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ নতুন বাজার, আফজালাদ, দোলারবাজার, ধারণ বাজার, জাউয়াবাজার, আলীগঞ্জ বাজার, পীরপুর বাজার, কপলাবাজার, বুরাইয়াবাজার, জাহিদপুর বাজার, কামারগাঁও বাজার, হাজির বাজার, মাদ্রাস বাজার, হাদা বাজার, ল²ীবাউর বাজার, হাসনাবাদ বাজার, কালারুকা বাজার, আমেরতল বাজারসহ সব গ্রামীণ রাস্তাঘাট। অনেকেই দোকান ও বাসাবাড়ির মালামাল সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী তফিউল ইসলাম তুহিনের দেয়া তথ্যমতে বুধবার সকাল পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ১.৬৪ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আরো বাড়তে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
ছাতক-দোয়ারাবাজার এলাকার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় কিছু দিন আগেও বন্যায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারো বন্যায় মানুষের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। দোয়ারায় স্কুলে যাওয়ার পথে দুটি বাচ্চা মারা গেছে। তাদের আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি। শেখ হাসিনা সরকার সব সময় বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের পাশে আছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষকে সার্বিক সহায়তা দেয়া হবে। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকা ও অফিসে বন্যার পানি। পরিষদের অধিকাংশ বাসায়ও পানি ঢুকেছে। ছাতক পেপার মিল হাইস্কুল, বৌলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মণ্ডলীভোগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ পরিবার ইতোমধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রয়োজনে আরো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হবে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার উজ জামান বলেন, আমরা চারদিকে খোঁজখবর রাখছি। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যায় আবারো যাদের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাচ্ছে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম : বন্যার পানি প্রবেশ করায় কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখেছে শিক্ষা বিভাগ। টানা ৫ দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় এসব এলাকার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির ক্ষেত নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অন্যদিকে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে ওই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের পোড়ারচর ও পূর্ব তিন হাজারী গ্রাম প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে নিম্নাঞ্চলের দুই গ্রামের অন্তত শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষ নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছেন।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত সাত দিন ধরে একটু একটু করে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যাত্রাপুর ইউনিয়নের সব থেকে নিম্নাঞ্চল পোড়ারচর ও পূর্ব তিন হাজারী নামে দুটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পোড়ার চরের ৪০ পরিবার ও পূর্ব তিন হাজারী গ্রামের ৬৫টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুটি গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দির বিষয়টি স্বীকার করে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, বিষয়টি শোনার পর সরজমিন এলাকা দুটি পরিদর্শন করেছি। দুটি গ্রামে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি যে হারে বাড়ছে, এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে অন্যান্য এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়