কাগজ প্রতিবেদক : দেশের আর্থিক খাত যেন অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়াখানায় পরিণত হয়েছে। তফসিলি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিধি বাড়ছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও (এনবিএফআই)। যাচাই-বাছাই না করে নামে-বেনামে ঋণ দেয়ায় খেলাপি ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, অনুমোদিত ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। হাতেগোনো কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের অবস্থা নাজুক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় রয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফারইস্ট ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও ফাস ফাইন্যান্স। কারণ এই তিন প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণের পরিমান ৩ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠান তিনটির মোট ঋণের স্থিতি ৩ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতিষ্ঠান তিনটির গড় খেলাপি ৯০ দশমিক ৯৯ শতাংশের বেশি। এককভাবে বিআইএফসির খেলাপি ৯৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৮৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও ফাস ফাইন্যান্সের ৮৯ দশমিক ২২ শতাংশ।
একইভাবে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ৮৭ দশমিক ৩০ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৭৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ফনিক্স ফাইন্যান্সের ৫৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এর প্রতিবেদনে এসব পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে খেলাপি ঋণ ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকা বা ৯.৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এটি গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা। যা তিন মাসে বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক গ্রাহককে ঋণ দেয়ার সময় যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খুবই খারাপ অবস্থানে।
এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫০-৯০ শতাংশের মধ্যে। এসব প্রতিষ্ঠানের আমনাতকারীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তারা জানান, করোনার কারণে ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরাও নানা সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু সুবিধা শেষ হওয়ার পর যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে সে ধরনের মানসিকতা তারা দেখাচ্ছন না। অনেকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হচ্ছে। ঋণ খেলাপিদের থেকে রক্ষা পেতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি না করলে ঋণগ্রহীতারা অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণ পরিশোধে করতে চাইবেন না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।