নাটোরে বন্ধুকে খুন : ১৪ মামলার আসামি রাসেল ঢাকায় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

সাক্কুর পরাজয় পাঁচ কারণে

পরের সংবাদ

অচিরেই ফোর লেন সড়ক চায় বরিশালবাসী

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। পদ্মা সেতু চালু হলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। যানবাহনের চাপ বাড়লে এ অঞ্চলের সরু সড়কপথে দুর্ঘটনার পাশাপাশি ভোগান্তি বাড়বে মানুষের। যদিও পরিকল্পিত নগরায়নের লক্ষ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নগরীর বুক চিরে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার সড়কে ফোর লেন নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা আর পরিবহনের দখলদারত্বের কারণে এ সুফল ভোগ করতে পারেননি বরিশালবাসী। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ অঞ্চলে ফোর লেন সড়ক এখন সময়ের দাবি।
জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের আমতলার মোড় থেকে কাশিপুর সুরভী পেট্রলপাম্প পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়ক ফোর লেনে উন্নীত করা হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল ২৫ কোটি টাকা। কথা ছিল ফোর লেনের বর্ধিত দুই পাশের লেনে চলাচল করবে হালকা বা ছোট যানবাহন। আর মূল সড়কে চলবে ভারী বা দূরপাল্লার যান। কিন্তু কথা অনুযায়ী হচ্ছে না কাজ। মূল সড়কেই চলছে সব ধরনের যানবাহন। আর ফাঁকা থেকে যাচ্ছে বাকি দুই লেন।
হালকা যানবাহন অর্থাৎ অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার এবং রিকশাচালকরা বলছেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে একেবারেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে আছে দুটি লেন। ভাঙাচুরা সড়কে যানবাহন চলাচলে অস্বস্তি, দুর্ঘটনা আর যানবাহনের ক্ষতির ভয়ে মূল সড়কই ব্যবহার করতে হচ্ছে ছোট যান চলাচলে। মহাসড়কে এসব ছোট যান চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। আর বরিশাল সিটি করপোরেশন বলছে, খুব দ্রুতই ফোর লেন সড়কের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তারা।
সরজমিন দেখা গেছে, ফোর লেনের কালু খাঁ সড়ক সংলগ্ন ?সিএন্ডবি ১ নম্বর পুল (দরগাবাড়ী সড়ক সংলগ্ন), সদর উপজেলা পরিষদের বিপরীতে, টিটিসির সামনের অংশ, টেক্সটাইল কলেজের সামনের অংশ, সুরভী পাম্প এলাকা এবং কলেজ রোডের সংযোগ মুখের বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। তাছাড়া নগরীর নথুল্লাবাদ অংশে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড, পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন সড়কে বাস এবং মালবাহী ট্রাক রেখে রাস্তা আটকে রাখা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের মালামাল রাস্তায় নামিয়ে ও বড় যানবাহন প্রবেশ করিয়ে রাস্তা আটকে দিচ্ছে।
আর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ চালকরাও। থ্রি-হুইলার চালক মোসলেম বলেন, সিএন্ডবি রোড ফোর লেনের সড়ক বলা ঠিক না। দুই পাশের রাস্তার যা অবস্থা তাতে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। অনেক সময় পুলিশ মামলা দেবে এই ভয়ে সেখান থেকে বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয়।
আল-আমিন নামে আরেক থ্রি-হুইলার চালক বলেন, পাশের দুই লেনে চালাতে গেলে লোহা-লক্কড় সব খুলে পড়ে যায়। গাড়ি উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীরাও অসন্তুষ্ট হন। তাই বাধ্য হয়েই রিকশা নিয়ে মূল সড়কে উঠে যাই। তবে পুলিশ দেখলে কিছু সময়ের জন্য ভাঙাচুরা রাস্তাতেই চালাই।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, আর কয়েকদিন পর পদ্মা সেতু চালু হবে।

সেই সময়ে আমাদের এই সড়কে যানবাহনের আরো চাপ বাড়বে। তার আগেই বিকল্প ও টেকসই সড়ক প্রয়োজন। না হলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি সড়কের অবস্থা আরো বেহাল হয়ে যাবে।
পরিবহন মালিক শামিম আহম্মেদ বলেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন বিলাসবহুল পরিবহন আসবে বরিশালে, যা বরিশাল নগরী পেরিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশ করবে। কিন্তু বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক এতটাই সরু যে, এতে দুর্ঘটনার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অচিরেই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তথা ফোর লেন সড়ক চালু করার দাবি জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোপূর্বে নগরীর ফোর লেন সড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। ৪ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দিয়ে নজরদারি করা হয়। পাশাপাশি সড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা এবং দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারা। কিন্তু এর পরেও যানবাহন চালকরা ওই সড়ক ব্যবহারে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পুলিশের। সড়ক উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে, সিটি করপোরেশন আছে। তারা সংস্কারের উদ্যোগ নিলে ফোর লেন যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা যাবে। তবে পদ্মা সেতুর কারণে যানবাহনের চাপ বাড়লে প্রয়োজনে ট্রাফিক বিভাগের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে।
এদিকে পদ্মা সেতুর কারণে সড়কে যানবাহনের চাপের বিষয়টি মাথায় রেখে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালকে কাশিপুর নবনির্মিত ট্রাক স্ট্যান্ডে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়