মির্জা ফখরুল : খালেদার কিছু হলে দায় নিতে হবে সরকারকেই

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ইসির ‘এসিড টেস্ট’

পরের সংবাদ

ডুমুরিয়ায় বঙ্গবন্ধু ব্রি ধান ১০০ চাষে সাফল্যের হাতছানি

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া খুলনা থেকে : ডুমুুরিয়া উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে প্রথমবারের মতো সীমিত পরিসরে চাষ হয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান ১০০, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ধান’। ধানের আকার ছোট, যা নাইজারশাইল, জিরাশাইল, দাতখানি চাল বা কাটারির মতো। হালকা লালচে রংয়ের এ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। একর প্রতি ৩৬-৪০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে যা প্রচলিত জাত ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে বেশি।
ধানের দানা পুষ্ট এবং আকার কিছুটা গোলাকার। ঝরঝরে ভাত ঠিক কাটারিভোগের চালের মতো ছোট ও চিকন। এ চালে কেবল ঘ্রাণ নেই। তাছাড়া সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বিশেষ করে জিঙ্কের উপস্থিতি প্রচলিত সব জাতের ধানের চেয়ে বেশি। অ্যাইমাইলোজের পরিমাণও বেশি। ভাত সুস্বাদু। আতপ ও সিদ্ধ উভয় চালই আকর্ষণীয় আকারের। তবে যেহেতু চাষ হয়েছে সীমিত জমিতে তাই এ চাল এই বছরই বাজারে আসছে না।
বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে আরো ৩-৪ বছর সময় লাগবে। তবে যারা সৌখিন চাষি বা ক্রেতা তারা চুক্তিভিত্তিতে এ ধান চাষ করে চাল বানিয়ে বাজারে আসার আগেভাগেই স্বাদ নিতে পারেন বা পারিবারিকভাবে খেতে পারেন। এ চালের সবচেয়ে বড় উপকার জিঙ্কের বেশি উপস্থিতি। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, রোগ-প্রতিরোধ ও ক্ষিদে বাড়াতে এ চাল উপকারী।
খুলনার ডুমুুরিয়ায় নিজ পৈতৃক জমির এক বিঘা জায়গায় এ ধান চাষ করান সৌখিন ধানচাষি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান। এই কর্মকর্তা একই জমিতে ২০১০ সালে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৫০ ‘বাংলামতি’ চাষ করে সারাদেশে সাড়া ফেলেন। গত বছর আমন মৌসুমে পদ্মার এপার প্রথম ব্রি ধান ৯০ এবং লুপ্তপ্রায় বিন্নিধান চাষ করেন। এবার ব্রি ধান ১০০ বঙ্গবন্ধু ধান চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন উদ্ভাবিত এ ধান সম্পর্কে জেনে তিনি ব্রির সদর দপ্তর গাজীপুরে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে বীজের ব্যাপারে ব্রির গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিলে তিনি সেখানকার প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে ৫ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন। ওই বীজ দিয়েই ডুমুরিয়ার কার্তিকডাঙ্গা বিলে এক বিঘা জমিতে এ ধানের চাষ করেন।
শতকরা ৯৫ শতাংশের বেশি চাল অভাঙা রয়েছে যা সাধারণত ধান কেটে শুকিয়ে এত তাড়াতাড়ি এ রকম ভালো চাল পাওয়া যায় না। তিনি এ চালের ভাতের ব্যাপারে জানান নিঃসন্দেহে ব্রির এটা ভালো জাত হিসেবে কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় পাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসা শুরু হলে এটা ক্রেতার আগ্রহ অর্জন করবে। যারা আতপ ও সিদ্ধতে একটু চিকন ও ছোট আকারের চাল পছন্দ করেন তাদের জন্য এটা খুবই পছন্দের হবে।
জানা যায়, এ বছর ব্রি ধান ১০০ তথা বঙ্গবন্ধু ধানের সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে গোপালগঞ্জে এবং এর মধ্যে কোটালিপাড়ায়। ব্রির গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি এক হাজার কেজি বীজ কৃষকদের মাঝে দেন। তার মধ্যে অল্পকিছু নড়াইল ও বাগেরহাট এলাকাতেও গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তার প্রদত্ত বীজে ৫০০ একরেরও বেশি জায়গায় এ ধান চাষ হয়েছে যা সারাদেশে চাষকৃত জমির এক তৃতীয়াংশের বেশি। গোপালগঞ্জের চাষিরা সাধারণত মোটা ধান চাষ ও মোটা চাল খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ধানের চাষ করে তারা খুশি।
কারণ এ ধানের উৎপাদনও ভালো এবং রোগবালাই কম হয়েছে। বাজারে ধান বিক্রি করে দাম পেয়েছেন প্রচলিত ২৮ জাতের চেয়ে বেশি। ফলে এ ধান আগামী মৌসুমে ব্যাপক চাষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ব্রি ধান ২৮ বা অন্য অনেক ধানের আবাদের স্থান দখল করে নেবে বঙ্গবন্ধু ধান এমনটিই আশা করছেন ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন ওরফে তুহিন।
ভোরের কাগজকে তিনি জানান, এ ধানের জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ ধানের উচ্চতা ১০১ সেমি। প্রতিকেজি চালে জিঙ্কের পরিমাণ ২৫.৭ মিলিগ্রাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়