মির্জা ফখরুল : খালেদার কিছু হলে দায় নিতে হবে সরকারকেই

আগের সংবাদ

কুমিল্লায় ইসির ‘এসিড টেস্ট’

পরের সংবাদ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা আসবেন কি

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আগামী ২৫ জুন ডানা মেলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। স্মরণকালের জমকালো উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে সেতু প্রকল্পে বাধাদানকারীদেরও। ইতোমধ্যে আমন্ত্রণপত্রও তৈরি হয়ে গেছে। এখন শুধু আমন্ত্রণ জানানোর পালা। তবে তারা আসবেন কি? ইতিহাসের সাক্ষী থাকবেন; নাকি অতীতের মতো বিমুখতার রাজনীতি নিয়েই পরে থাকবেন? বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ তার নেতাকর্মীরা পদ্মা সেতু নিয়ে একাধিকবার নেতিবাচক মন্তব্য করলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে দলটি। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের চিঠি প্রস্তুত করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা যোগ দেবেন কিনা- এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় মন্ত্রণালয়।
মূলত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই তুমুল আলোচনা পদ্মা সেতু নিয়ে। দুই বছর পর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করার পর থেকে একদিকে যেমন

তৈরি হয় আশাবাদ; তেমনি বিশ্বব্যাংক দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর শুরু হয় রাজনৈতিক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। অভিযোগ করা হয়েছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তারা ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশের সেতু কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রীত্ব ছাড়তে হয়, জেলে যেতে হয় যোগাযোগ সচিব মোশারফ হোসেনকে। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে পদ্মা সেতুতে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি ঋণচুক্তি বাতিল করে বাকি দাতা সংস্থাগুলোও। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ২০১২ সালের ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে। তারা কোনো দুর্নীতির প্রমাণ না পাওয়ার প্রতিবেদন দিলেও বিশ্বব্যাংক তা গ্রহণ করেনি। অভিযোগ ওঠে, বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় আলোচনা না করে এবং বোর্ড সভার অনুমোদন না নিয়েই নিজ উদ্যোগে কারো অন্যায্য নির্দেশে প্রভাবিত হয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করেন। এরপর কানাডার আদালতও পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দেয়। পরে অবশ্য পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক ফের আগ্রহ দেখালেও ততদিনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে দেয় বাংলাদেশ।
এদিকে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের পর অভিযোগ ওঠে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে। অবৈধভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধানের পদে থাকতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি- এমন অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু নিয়ে ঘরে-বাইরে নানা প্রশ্ন, নানা সমালোচনা সামলাতে হয়েছে সরকারকে। বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই বলে আসা হয়েছে, পদ্মা সেতু করতে পারবে না আওয়ামী লীগ। তবে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত বক্তব্যটি আসে বিরোধী দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছ থেকে। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনায় বিএনপি নেত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।
চেয়ারপারসনের বক্তব্যের রেশ টেনে ১২ জানুয়ারি পল্টন কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের ওপরে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো খালেদা জিয়া ভুল বলেননি। বরং তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন। তোমরা এখনো এলার্ট হও, চেঞ্জ দ্য ডিজাইন এবং সেটা সঠিকভাবে নির্মাণ হতে হবে। পরে বিএনপির বক্তব্য ও পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি এবং স্বচ্ছতার সামান্যতম ঘাটতিও ছিল না।
তবে ঘরে-বাইরে হাজারো চাপ সামলে সফল সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। ২৫ জুন শনিবার জমকালো অনুষ্ঠানে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল, পদ্মা সেতু বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল তারাও স্বপ্নের এই সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানাবে সরকার। আমন্ত্রণপত্র ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। বিদেশিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর খালেদা জিয়াকে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হবে।
এদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, বিএনপির সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিরূপ বক্তব্যের পর আবার আমন্ত্রণ জানানোকে রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি মনে করছে দলটি। জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা আমি বলতে পারব না। এটা তো পার্টির সিদ্ধান্ত। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে তারা এত রাজনীতি করছেন কেন? বিএনপি সরকারের সময় যমুনা সেতু হয়েছে, আমরা সেগুলো নিয়ে এত মাতামাতি করিনি। আগে আমন্ত্রণ আসুক তারপর দেখা যাবে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ বলেন, পদ্মা সেতুর মতো জাতীয় ইস্যুতে অবশ্যই বিএনপি থাকতে চায়। কিন্তু সরকার সেই পরিবেশ নষ্ট করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে মন্তব্য করেছেন, তাতে প্রমাণ হয় সরকার চায় না বিএনপি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকুক। আমন্ত্রণ পেলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির যোগ দেয়া উচিত হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে পদ্মা সেতুর সরাসরি উপকারভোগী অঞ্চল গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান বলেন, দলীয় হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমরা সমর্থন করি। খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ড বলেন, এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে বিএনপির যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ইউনূস সেন্টারের টেলিফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়