ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি জায়েদ খানের

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ : পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার প্রস্তাবে সমর্থন

পরের সংবাদ

সিইসির আক্ষেপ : এমপি বাহার কথা না শুনলে করার কিছু নেই

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কুমিল্লা সিটি নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হলেও ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা তাতে কান না দেয়ায় দৃশ্যত অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। আইনবিধির কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ সদস্যের জন্য ইসির অনুরোধই ‘যথেষ্ট’।
গতকাল রবিবার নির্বাচন ভবনে সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকরা কুমিল্লায় বাহারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। সিইসি বলেন, তাকে বলাটাই এনাফ। তাকে আমরা যদি বলে থাকি, কাইন্ডলি আপনি যদি…. আচরণবিধিতে এটা আছে আপনি যদি সরে থাকেন, তাহলে নির্বাচনটা ভালো হয়। সেটা আমরা প্রকাশ্যে দিয়েছি। এটাই এনাফ একজন সংসদ সদস্যের জন্য সেটাকে অনার করা। যদি সেটি তিনি অনার না করেন, সেক্ষেত্রে আমাদের তেমন করার কিছু নেই। আমরা শুনেছি, তিনি আদালতে মামলা করেছেন। মামলার ফলাফলটা না পেলে আমরা যখন কাউকে রিকোয়েস্ট করি, আমাদের এমন কোনো ক্ষমতা নেই জোর করে একজন সংসদ সদস্যকে (বের করে দিতে)। কমিশনের অনুরোধই একজন সংসদ সদস্যের এলাকা ত্যাগ করার জন্য যথেষ্ট বলে মত দেন সিইসি।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে শুধু ভোট দিতেই নির্ধারিত কেন্দ্রে যেতে পারেন।

কিন্তু কুমিল্লা ৬ আসনের সংসদ সদস্য বাহার আইন ভেঙে দলীয় প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠলে তাকে সতর্ক করে নির্বাচন কমিশন। তাতে কাজ না হওয়ায় গত বুধবার তাকে এলাকা ছাড়তে নির্দেশ দেন ইসি।

এদিকে মতবিনিময়ের সময় সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের সমর্থন প্রয়োজন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, এবারের নির্বাচনে সব দল যদি না আসে, তাহলে এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সুতরাং কীভাবে আনবেন, তা আপনারা কী অফার করবেন, তার ওপর নির্ভর করবে। তিনি আরো বলেন, ভালো নির্বাচন করতে গেলে যা করতে হয়, তাই আমরা করেছি। যেহেতু অন্য রকম সরকার (সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার) ছিল, সে সময় নতুন নতুন সবই পেয়েছি। তাই কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় নেই। আমি বহুবার দেশের বাইরে গিয়েছি। কোনো কিছু করতে হলে অন্যান্য দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। ভারতেও লাগে। কিন্তু আপনারা (বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন) সম্পূর্ণ স্বাধীন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এনআইডির কোনো বিকল্প নেই। ড. হুদা বলেন, একটা প্রকল্পে ৪০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন ডলার বেঁচে গেল, ব্রিটিশ সরকার, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ডোনার ছিল। তাদের বলা হলো। এরপর অফিস করা হলো। এখনো এনআইডি অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতে চায়। আমি একটি আইন করেছি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন। এই আইন থাকা অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেন, আর যাই বলেন, নিতে পারবে না। এখানে স্পষ্ট বলা আছে, জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সবকিছু নির্বাচন কমিশন করবে।

আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে কোনো কাজ হয় না। তিনি নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাংলাদেশের নির্বাচনে যেভাবে মোতায়েন করা হয়, পৃথিবীতে তা বিরল। বন্দুক দিয়ে যুদ্ধের মতো অবস্থা হয়। এগুলোর আসলে প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনীর একেবারেই প্রয়োজন নেই। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ অর্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পেছনে ব্যয় হয়। এখন আর্মি, এয়ার ফোর্স, র‌্যাব, বিজিবি নামে। একটা কেন্দ্রে যে পরিমাণ সশস্ত্র ফোর্স থাকে, তা একটা থানার সমান। তিনি বলেন, অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ৯৫ শতাংশ লোকবল চেষ্টা করে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য। কিছু কিছু লোক তো থাকেই।
১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ। তিনি প্রার্থীভিত্তিক না হয়ে দলভিত্তিক নির্বাচনের সুপারিশ করে বলেন, এতে যে দল যতটি আসনে প্রার্থী দেবে এবং যত সংখ্যক ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দলের আসন সংখ্যা নির্ধারণ হবে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে আরো অংশ নেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ, আবু হাফিজ ও মাহবুব তালুকদার, সাবেক ইসি সচিব ড. সাদিক ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ও মোখলেছুর রহমানসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের ওপর জোর দেন। এছাড়া তাদের প্রায় অধিকাংশই ইভিএমে ভোট করার পক্ষে মত দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়