ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি জায়েদ খানের

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ : পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার প্রস্তাবে সমর্থন

পরের সংবাদ

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা : অর্থ পাচারকারীদের দায়মুক্তির বিরুদ্ধে সব এমপি

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাজেটে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দেয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন সরকারি ও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, অর্থ পাচারকারীদের দায়মুক্তির সুযোগ দিলে সৎ ব্যবসায়ী এবং প্রকৃত করদাতারা নিরুৎসাহিত হবে। পাচারকারীরাই শ্রেষ্ঠ করদাতা হবে। গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, শহীদুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির রুমিন ফারহানা, গণফোরামের মোকাব্বির খান প্রমুখ।
বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দেয়াকে এক ধরনের দুর্নীতি বলে মন্তব্য করে ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, যারা অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার করে তারা ভালো মানুষ নয়। সুতরাং এ সুযোগ একবার দিলে বছরের পর বছর অসাধু ব্যবসায়ীরা বিদেশে অর্থ পাচার করবে এবং স্বল্প ট্যাক্স দিয়ে তা সাদা করবে।
পাচারকারীদের দায়মুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, বিষয়টি মানুষ ভালোভাবে দেখছেন না। পাচারকারীরা ভালো মানুষ হলে অবৈধ টাকা দেশেই রাখত, বিদেশে পাচার করত না। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ ট্যাক্সের আওতায় থাকলেও তারা দিচ্ছে না। জরিমানা না করে তাদের ট্যাক্সের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিমা করতে পারি, কেননা আমাদের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী স্বাস্থ্য ভাতা পান। স্বাস্থ্যসেবার মান যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। এজন্য মাছ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সবাই যাতে ক্লিনিকের লাইসেন্স না পায় সেদিকে মন্ত্রণালয়কে যতœবান হতে হবে।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, করোনাকালে বৈশ্বিক বিপর্যয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাত ও গণমানুষকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন। যে কারণে সম্পূরক বাজেট প্রস্তাবিত বাজেট থেকে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।
এই সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে এ বৈশ্বিক মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ, গৃহহীনদের ঘর দেয়ায় সরকারের সফলতা এখন বিশ্ব স্বীকৃত। এই সফলতা অব্যাহত থাকলে দেশ অচিরেই বঙ্গবন্ধুর সুখী-সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশে পরিণত হবে।
শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, বাংলাদেশ আরো দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম সাহসী বাজেট দিয়েছে সরকার। করোনার মহামারিকালে সরকার বিশাল অঙ্কের টাকা ভর্তুকি দিয়ে একদিকে দেশের মানুষের জীবনকে রক্ষা করেছেন, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন।
পৃথিবীর অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে, কিন্তু সেই পরিস্থিতি হতে দেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বের মতো আমাদের এখানেও জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।
দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনায় বিশ্বের সব দেশ যখন বিপর্যস্ত, সে সময় শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখে গণমানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে নিন্দুকরা এখনো সমালোচনা করছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আগে সরকারের উন্নয়ন চোখে দেখতেন না। কারণ চোখে অসুখ ছিল। এখন সেই অসুখ মাথায় উঠেছে। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে সরকারি উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করে পীর ফজলুর রহমান বলেন, বিদেশে টাকা পাচার করা অর্থ দেশে নিয়ে আসলে দায়মুক্তি দেয়া হবে।
এটিকে আমি সমর্থন করি না। যারা অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মানিলন্ডারিং আইনের কোনো দরকার নেই।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সরকার সফল হয়েছে। কিন্তু এই মহামারির সময় বিপুল সংখ্যক মানুষ যেমন নিঃস্ব হয়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে কোটিপতির
সংখ্যাও বেড়েছে।
অর্থমন্ত্রী দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচাররোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ এখন যারা চুরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, তাদের আবার দায়মুক্তি দিতে চাচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, বিদেশে অর্থ পাচার করে সেটাকে আবার যদি ট্যাক্স দিয়ে বৈধ করা যায় তাহলে অনেকে সন্দেহ করছেন, আরো বিশাল একটি গোষ্ঠী হয়তো টাকা বিদেশে পাচার করে বৈধভাবে দেশে আনবে। এই দায়মুক্তি দিলে মানুষ উৎসাহিত হবে অবৈধ টাকা রোজগারের জন্য।
যেখানে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ দিন-রাত পরিশ্রম করে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য করছেন সেখানে কিছু মানুষ অবৈধভাবে লুটপাট করবে আর সেটা বিদেশে পাঠাবে, পরে আবার বিদেশ থেকে নিয়ে এসে সামান্য একটা ট্যাক্স দিয়ে তিনি আবার সমস্ত কিছু বৈধ করে ফেলবেন। পরে দেখা যাবে শ্রেষ্ঠ করদাতা পুরস্কার পেয়ে যাবেন এই অর্থ চোরেরা। চোরেরা হয়ে যাবে শ্রেষ্ঠ করদাতা।
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার ক্ষেত্রে দায়মুক্তির বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ব্যাংক ডাকাতি করে, দুর্নীতি করে যারা বিদেশে টাকা পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে না? প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ থেকে আনা অর্থ সাদা করার যে সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তাতে দুর্নীতি বাড়বে।
রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে দরিদ্রের হার কমেছে বলে সরকার যে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় টিসিবির গাড়ির পেছনের লাইন দেখলে। সেখানে ক্যান্সারের রোগী থেকে ৫ বছরের শিশুও লাইনে দিনভর দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য না পেয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে। দেশে চিকিৎসা ব্যয় এমনভাবে বাড়ছে যে কোনো পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে সে সংসারের দুর্যোগ নেমে আসে।
তিনি বলেন, ২৭ মন্ত্রণালয়ের সম্পূরক বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যা এডিবির ৫৮ শতাংশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার বরাদ্দের ৪১ শতাংশ ১১ মাসে ব্যয় করতে পারেনি।
অথচ এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের কোনো জবাবদিহি চাওয়া হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ মন্ত্রণালয় সবচেয়ে আশ্চর্যজনকভাবে দ্রব্যমূল্য বিশেষ করে ভোজ্যতেলের দাম আকাশছোঁয়া করেছে। কয়েকজন তেলমিল মালিক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে ভোজ্যতেলেই শুধু কয়েক মাসে ১ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। দেশে যদি একজন বড় দুর্নীতিবাজকে ধরে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা যেত, তবে একদিনে দেশে দুর্নীতি ৫০ ভাগ কমে যেত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়