ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি জায়েদ খানের

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ : পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার প্রস্তাবে সমর্থন

পরের সংবাদ

নওগাঁয় বিদেশি মালবেরি ফল চাষে সফল সোহেল রানা : বাণিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : পুরো গাছজুড়েই থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ, লাল এবং কালো লম্বাটে ছোট ছোট আকারের বিদেশি উচ্চমূল্যোর পুষ্টিগুণসম্পন্ন মালবেরি ফল। পাতার চেয়ে যেন ফল বেশি। গাছের পাতা ডিম্বাকার, চমৎকার খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সুচাল। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড় এই মালবেরি ফল। সারা বছর এই ফল ধরে। প্রথম অবস্থায় সবুজ পরে লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো রঙ ধারণ করে। দেখতে খুবই সুন্দর ও আকর্ষণীয়। পাকা ফল রসাল এবং টক-মিষ্টি। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি সংগ্রহ করা যায়। এই গাছের চারাও তৈরি করা যায়। খুব সহজেই ছাদে এর চাষ করা সম্ভব।
দুই বছর আগে বিভিন্ন দেশের ৮টি জাতের ১০টি গাছ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে লাগান। প্রথম বছরেই সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো’ পার্কের উদ্যোক্তা সোহেল রানা। প্রথমবারেই ভালো ফলন দেখে ব্যাণিজ্যিকভাবে এই ফল চাষের পরিকল্পনা করে ইত্যেমধ্যেই তিনি ৪০০ চারা তৈরি করেছেন। দ্রুত এক বিঘা জমিতে লাগানো বড়ই গাছ কেটে মালবেরি লাগাবেন। ফলে তিনি বেশি লাভবান হওয়ার আশা ব্যক্ত করছেন।
সরজমিন দেখা গেছে, এ ফল চাষে রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশকও তেমন লাগে না। উৎপাদন খরচও কম। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারা বছরই এই ফল পাওয়া যায়। মালবেরি আমদানিনির্ভর ফল, তাই বাজারেও এই ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই ফল ঢাকা শহরের সুপার শপগুলোতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উদ্যোক্তা সোহেল রানা জানান, বিদেশি উচ্চমূল্যের পুষ্টিগুণসম্পন্ন মালবেরি ফল বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় এবং বাজারজাত করা হয়। এই ফলটি আমি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের ৮টি জাত ১০টি সংগ্রহ করে চাষ করে সফল হয়েছি। প্রতিটা গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। সোহেল রানা জানান, এ ফল চাষে রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশকও তেমন লাগে না। উৎপাদন খরচও কম। কলম চারা লাগানো হলে দুই-চার মাসের মধ্যেই এ ফল ধরে। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারা বছরই এই ফল পাওয়া যায়।
বাণিজ্যিকভাবে এই মালবেরি ফল চাষের কথা জানিয়ে এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, আগামী বছর চারা তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে এই মালবেরি ফলের চাষ করব। এরই মধ্যে ৪টি জাত পছন্দ করেছি। এক বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ৪০০ গাছ লাগাব।
আমাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশি ফল দেখতে আসছে। বাণিজ্যিকভাবে মালবেরির চাষ করলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে বাজারজাত করা যাবে। আমদানিনির্ভর এই ফলের দাম বেশি। ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করলে মানুষ এই পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল কিনে খেতে পারবে। মালবেরি ফল দেখতে আসা প্রদীপ পাল জানান, ফলটি খুবই আকর্ষণীয় ও খেতেও সুস্বাদু। শুনলাম ছাদে নাকি এই গাছ লাগানো যাবে। তাই আমিও সোহেল রানার কাছ থেকে চারা নিয়ে গিয়ে আমার ছাদে লাগাব।
বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কে ঘুরতে আসা উম্মে সোহেলী সুলতানা বলেন, মালবেরি গাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। থোকায় থোকায় ধরে থাকা ফল দেখতেই ভালো লাগছে। একটা ফল খেয়েও দেখলাম, বেশ ভালো। আমিও ছাদে লাগাব বলে নিয়ত করেছি।
কৃষক জয়নাল বলেন, আমার বাড়ি জয়পুরহাটে। সোহেল ভাইয়ের এই বাগান ঘুরতে এসে দেখি মালবেরি গাছ। কয়েকটি ফল খেলাম, খুব সুন্দর লাগছে। এখান থেকে আমি মালবেরি কয়েকটি চারা কিনলাম। লাগানোর পর ভালো ফল ধরলে, বেশি পরিমাণে এই মালবেরি চাষ করব।
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ জানান, সোহেল রানা একজন সফল চাষি। দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন ফল, ফুল, আমসহ নানা ধরনের বাগান আছে তার। সম্প্রতি তিনি ৮ রকম জাতের মালবেরি গাছ পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়েছেন। বর্তমানে গাছ থেকে ফল তোলার উপযোগী হয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৮-১০ কেজির মতো ফল পাওয়া যাবে। এখানকার মাটিও মালবেরি চাষের উপযোগী। এছাড়া বাড়ির ছাদে ও টবেও এর চাষ করা যাবে। এই প্রথম সোহেল রানা বেশিসংখ্যক মালবেরি গাছ লাগিয়েছেন। নওগাঁতে মালবেরি চাষ যেন আগামী আরো বাড়ে সেজন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়