কাগজ ডেস্ক : সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিক ম্যাস শুটিংয়ের পর কঠোর অস্ত্র আইনের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সমাবেশ করেছে লাখো বিক্ষোভকারী। বিবিসি জানাচ্ছে, গত শনিবারও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে এসব বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ‘গুলিবিদ্ধ হওয়া থেকে মুক্তি চাই’ স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বিক্ষোভে সমর্থন দেন। তিনি কংগ্রেসের প্রতি ‘অস্ত্র নিরাপত্তায় কাণ্ডজ্ঞানমূলক আইন’ প্রণয়নেরও আহ্বান জানান। তবে শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকানদের আপত্তি থাকায় অস্ত্র আইন কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা কম।
গত মাসে টেক্সাস ও নিউইয়র্কের বাফেলোতে দুটি ম্যাস শুটিংয়ের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র আইন কঠোর করার আলোচনাকে ফের সামনে নিয়ে এসেছে। টেক্সাসের ওই ঘটনায় একটি প্রাইমারি স্কুলে ১৮ বছর বয়সি এক তরুণের গুলিতে ১৯ শিশু ও দুই শিক্ষক নিহত হয়। বাফেলেতো সুপারমার্কেটে বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিতে প্রাণ যায় ১০ জনের। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকদের অস্ত্র বহনের অধিকার দেয়া হয়েছে। দেশটিতে গত কয়েক বছরে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সামান্য কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা যে ম্যাস শুটিং বন্ধে কার্যকর নয়, মাস দুয়েকের মধ্যে একাধিক ম্যাস শুটিংয়ে কয়েক ডজন নিহতই তার প্রমাণ। সমাবেশের আয়োজক ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস (এমএফওএল)’ জানায়, অস্ত্র আইন কঠোর করতে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস ও শিকাগোসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় সাড়ে চারশ বিক্ষোভের আয়োজন করেছে তারা। মানুষের মৃত্যু অব্যাহত থাকবে আর রাজনীতিকরা ‘বসে থাকবে’ তা হতে দেয়া হবে না, বলেছে ২০১৮ সালে পার্কল্যান্ড স্কুলে গুলোর ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের নেতৃত্বে সৃষ্ট এমএফওএল গোষ্ঠীটি। ওয়াশিংটন ডিসিতে এক বিক্ষোভে পার্কল্যান্ডে গুলির ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের অন্যতম ডেভিড হগ বলেন, টেক্সাসের স্কুলে শিশুমৃত্যুতে আমাদের ক্রোধে অন্ধ হওয়া উচিত এবং পরিবর্তনের দাবি তোলা উচিত। অন্তহীন বিতর্ক নয়, পরিবর্তন দাবি তোলা উচিত, এখনই।
বাফেলোতে হামলায় নিহত ৮৬ বছর বয়সি এক নারীর সন্তান গারনেল হুইটফিল্ড বলেন, আমরা এখানে বিচারের দাবি নিয়ে এসেছি। আমরা এখানে তাদের সঙ্গে দাঁড়াতে এসেছি- যারা যুক্তিসঙ্গত অস্ত্র আইনের দাবি তোলার মত সাহসী।
অন্য কিছুর পাশাপাশি এমএফওএলের দাবির মধ্যে রয়েছে, আধা-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র কিনতে ইচ্ছুকদের সামগ্রিক ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেক’ এবং একটি জাতীয় নিবন্ধন ব্যবস্থা, যেখানে অস্ত্রের মালিকদের তথ্য থাকবে। ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে মার্জোরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে ১৪ শিক্ষার্থীসহ ১৭ জন নিহত হওয়ার কয়েকদিন পর এমএফওএলের প্রথম বিক্ষোভ হয়। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে বাইরে এসে অস্ত্র আইন কঠোর করার দাবিতে হওয়া কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেয়। দেশটির ইতিহাসে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে একদিনে এতজনকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে আর কখনোই দেখা যায়নি বলে আয়োজকরা সেদিন দাবিও করেছিলেন।
আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, ‘ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের’ আওতা বাড়ানো এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আরো নানান ব্যবস্থা কার্যকরের আহ্বান জানানো প্রেসিডেন্ট বাইডেন শনিবারের বিক্ষোভে সমর্থন দেন। টুইটারে তিনি বলেন, আমি তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের প্রতি আমার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করতে চাই: কিছু করুন। স¤প্রতি মার্কিন সেনেটে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের যৌথ একটি গ্রুপ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থার বিষয়ে চুক্তির অঙ্গীকার করলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। গত কয়েকদিন ধরে অস্ত্র বিক্রি নিয়ন্ত্রণে একাধিক ব্যবস্থার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ভোটে গৃহীতও হয়েছে। তবে সেগুলো সিনেটে পাস হবে কিনা, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ বিরাজমান বিশ্লেষক মহলে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।