মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

সেমিনারে বক্তারা : আগামী অর্থবছরে বড় ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটছে। আমদানি কাঁচামালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বেড়েছে জাহাজ ভাড়াও। সামনে আসছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রার বন্যা। বিশ্বে দেখা দিচ্ছে মহামন্দা। এসব তথ্য একত্রিত করলে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেখা দিতে পারে বড় ধরনের মুদ্রাস্ফীতি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি ক্লাবে সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগের (সিআইডিডি) প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ বাজেটের ওপর একটি আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেন বক্তারা। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আরো উপস্থিত ছিলেন সিআইডিডির ম্যানেজিং ট্রাস্টি সৈয়দ নুরুদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিআইডিডির মহাসচিব ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এফ এম মফিজুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে সিআইডিডির মহাসচিব বলেন, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ এখন রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করতে পারছে না। রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে সার আমদানি করতে পারছে না। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। বিশ্বে মহামন্দা দেখা দিচ্ছে। আর তাতে আগামী অর্থবছরে বড় ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে।
ড. মফিজুল ইসলাম বলেন, এ বছর খাদ্যের দাম বাড়লেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আগামী বছর বাজারে খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে। যে পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র, কর্মহীন বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী, স্বামী পরিত্যক্তা, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কে নেবে এদের দায়িত্ব! নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেখা যায়, রাষ্ট্র কখনো এদের দায়িত্ব নেয়নি। মূলত, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র নাগরিকের কল্যাণে অধিকতর দায়িত্ব নিতে শুরু করে। তখনই বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার মতো কর্মসূচিগুলো চালু হয়। পরবর্তীকালের বাজেটগুলোতে এসব কর্মসূচির আওতা ও সুবিধার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সমাজের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নতুন নতুন কর্মসূচি যোগ হতে থাকে।
এবারে অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, দরিদ্র মানুষ কষ্টে আছেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১২২টি বিষয় বা কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে এবং মাত্র এক-দেড় বছরের ব্যবধানে ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বাজেটে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির এ রকম পদক্ষেপ কম কথা নয়।
অসন্ন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে ড. মফিজূল ইসলাম কতিপয় সুপারিশ রেখেছেন। বয়স্ক ব্যক্তি, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অক্ষম ও অসচ্ছল ব্যক্তির জনপ্রতি মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে। নইলে আসন্ন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কায় এরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় যেসব গরিব পরিবারকে ১০ টাকা কেজি চালের দর ১০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ টাকা করার প্রস্তাব বাজেটে রয়েছে, তা আগামী বাজেটে না করাটাই ভালো। কেননা, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা শুধু চালের ওপর নয়, ডাল, তেল, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুনসহ সব নিত্যপণ্যই বাড়তি দামে কিনে খেতে হবে।
তবে আগামী ২০২২-২৩ বাজেটের সবচেয়ে বড় সুখবর হলো অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বাজেটে নতুন করে যুক্ত হবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। ড. মফিজূল ইসলাম বলেন, পেনশন স্কিম চালুর জন্য রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে, তার জন্য বাংলাদেশকে ধীরে চলো নীতিতে অগ্রসর হতে হবে। ক্রমান্বয়ে রাজস্ব খাতকে শক্তিশালী করতে হবে এবং সবশ্রেণির মানুষের জন্যে স্কিমটি একসঙ্গে চালু না করে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদে সব শ্রেণির মানুষকে এই স্কিমের আওতায় নিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়