মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

বিএনপির প্রতিক্রিয়া : এই বাজেট সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্য

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘বাস্তবতা বর্জিত’ অভিহিত করে বিএনপি বলেছে, এটা কেবল সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্য করা হয়েছে। এই বাজেট কোনো অর্থেই সাধারণ মানুষের বাজেট নয়। এটা স্রেফ ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। গতকাল শনিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও নাসের রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পাচারকারীরদের অর্থকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোগ করার বৈধতা দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আরো পরিষ্কার অর্থে বললে সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী স্বজনদের অর্থ পাচার করার সুযোগ করে দিতেই এটা করা হয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহৃত চাল, ডাল, লবণ, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য হ্রাসের কোনো কার্যকরী কৌশল না নিলেই শুধু নিজেদের বিত্তবৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বাজেট প্রণীত হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। বাজেট ঘোষণার দুদিন পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরাতে ‘কর ছাড়’ এর প্রস্তাবকে আইনের পরিপন্থি অভিহিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমতো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে ক্ষমা ঘোষণার শামিল। এতে বর্তমানে চলমান অর্থ পাচারের মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। অর্থ পাচারকারীরা আরো উৎসাহিত হবে, টাকা আরো পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। এটা অন্যায়, অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, যেখানে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনাই আইনগতভাবে প্রত্যাশিত সেখানে পাচারকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অসাংবিধানিক। গত ১৪ বছরে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। এখন এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকার ওই সব পাচারকারীর অবৈধ অর্থ বৈধ করার ঢালাও সুযোগ দিল যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক যে কোনো মানদণ্ডে অগ্রহণযোগ্য। আমরা পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এটি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অবিলম্বে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং পাচারকারীদের অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিকের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট। জনকল্যাণের কোনো কথা এতে স্থান পায়নি। মূল্যস্ফীতিতে জনমানুষের যখন নাভিশ্বাস, তাদের স্বস্তি দেয়ার কোনো কথা নেই। করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, স্বস্তি পায়নি মধ্যবিত্তরা। বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি কর বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর ভোক্তা মূলত মধ্যবিত্তরাই। মেডিটেশনের ওপরও ৫% কর আরোপ করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের কাছে ১০ টাকা দরে যে সামান্য কিছু চাল বিক্রি হতো তার দাম ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সয়াবিন তেল এখন সরকারই নির্ধারণ করে দিল ২০৫ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় এ নিয়ে দুই দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল। সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি খাতে ব্যয় বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
ডিজিটাল মদ্র্রা চালুর বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটি একান্তই রেগুলেটরি ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির বিষয়। অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেগুলেটরি এখতিয়ারে হাত দিতে পারেন না। অথচ দুষ্ট চক্রের কবলে বন্দি ব্যাংক খাত নিয়ে অর্থমন্ত্রী কোনো কথা বাজেট বক্তৃতায় বলেননি। মুদ্রাস্ফীতির কথা স্বীকার করলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা নেই। বলা হচ্ছে, দুই বছরে করোনার পরিপ্রেক্ষিতে লাখো হাজার টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। আমাদের প্রশ্ন সে টাকা গেল কৈ?
তার মধ্যে একটা টাকাও কী পরিশোধ হয়েছে, জনগণ জানতে চায়। শুনি রপ্তানি নাকি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেনো? কারা কারা প্রণোদনা পেয়েছে এবং এই পর্যন্ত কি পরিমাণ টাকা পরিশোধ করেছে তার উপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়