মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

পুরান ঢাকার ঐতিহ্য : ইতিহাসপ্রেমীদের খোরাক মেটাচ্ছে ‘ঢাকাকেন্দ্র’

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রকি আহমেদ : থরে থরে সাজানো ১০ হাজার বই। বেশির ভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে। রয়েছে পুরান ঢাকার জমিদারি জিনিসপত্র। তাই পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্যের খোঁজ করতে ইতিহাসপ্রেমীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা পুরান ঢাকার মোহিনী মোহন দাস লেনে অবস্থিত ঢাকাকেন্দ্র।
এখানে রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ সংগ্রহ। পুরান ঢাকার অনেক বনেদি জমিদার পরিবারের ওপর রয়েছে আলাদা গ্যালারি। তাদের দুর্লভ ছবি থেকে শুরু করে ব্যবহৃত দৈনন্দিন জিনিস যেমন-রান্নার তৈজস, হুক্কা, শাড়ি-কাপড়, পানের কৌটা, লবণদানিসহ নানা জিনিস। এছাড়া ঢাকায় প্রথম স্থাপিত মোটর সারাই করা কারখানার যন্ত্রাংশ, প্রাচীন মানচিত্র, পুরনো ভবনের ইট-নকশা, পুরান ঢাকার পঞ্চায়েত সরদার পরিবারের ইতিহাস-ঐতিহ্যও। সংগ্রহশালায় রয়েছে ১৮৯৬ সালে তৈরি একটি জমির দলিল, যার ভাষা গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয় বিষয়। এছাড়া রয়েছে-ঢাকাকেন্দ্র লাইব্রেরি, কমরেড ওসমান গণি মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, মুনতাসীর মামুন ঢাকা কর্নার, মিলি শিশু চত্বর, পল্লীকবি জসীম উদ্দীন স্মৃতি চত্বর, ফওজুল করিম সংস্কৃতি চত্বর, সুদৃশ্য বাগান, সাহিত্য আড্ডা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য। ঢাকাকেন্দ্র পূর্বে ছিল একটি

পারিবারিক লাইব্রেরি। পরে ১৯৯৭ সালে পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে মাওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অধীনে ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রকল্প নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকাকেন্দ্র। লাইব্রেরিতে একদিকে রয়েছে ঢাকাকেন্দ্রিক নানা দুষ্প্রাপ্য বই যা গবেষকদের অন্যতম ভরসাস্থল। পাশাপাশি পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে নানা সংগ্রহশালার প্রদর্শনীও রয়েছে এখানে।
ঢাকাকেন্দ্রের চেয়ারম্যান আজিম বখ্শ বলেন, পুরান ঢাকার জমিদার বাড়িগুলোতে সবারই একটা করে পাঠাগার ছিল। সেখানে ছিল পুরাতন সব বই ও সংগ্রহশালা। সেসব নিয়ে আমাদের পরিবারের লাইব্রেরিতে ১৯৯৭ সালে ঢাকাকেন্দ্র গড়ে তুলি। তবে আমাদের লাইব্রেরি অনেক পুরনো। পূর্বে এর নাম ‘ঢাকাকেন্দ্র’ ছিল না। আমরা ১৯৯৭ সালে মূলত এটাকে শুধমাত্র ঢাকাকেন্দ্রিক স্পেশালাইজড করে ‘ঢাকাকেন্দ্র’ নামকরণ করেছি।
তিনি আরো বলেন, এখন এখানে শুধুমাত্র ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে লেখা বইসহ ঢাকার পুরাতন জিনিসপত্র ও ঐতিহ্যের অংশ সংগ্রহ করে রাখা হয়। মূলত আমাদের ঢাকাকেন্দ্রের কাজ হলো ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্যকে লালন করা। অনেক সময় ঢাকার অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংক্রান্ত বই পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। তখন অনেকেই এখানে এসে সেসব বইয়ের সন্ধান করেন। পেয়ে যান তাদের কাক্সিক্ষত বই।
এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই ঢাকাকেন্দ্রের ঐতিহ্যপ্রেমী ও পাঠকদের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। বই আর নানান নিদর্শনের সঙ্গে ছাদে ছোট ছোট অসংখ্য বৃক্ষ দোলানো বাতাসে যে কেউ হবেন মুগ্ধ। শতাধিক দুর্লভ প্রজাতির গাছও সবুজপ্রেমীদের আকর্ষণ করবে। ঢাকাকেন্দ্রে ঘুরতে আসা সুপ্রিয়া সরকার বলেন, থাকি পুরান ঢাকায়। নিয়মিত বৃক্ষরাজির ভিতর বই পড়তে ও ঢাকাকে জানতে চলে আসি এখানে। ঢাকা সম্পর্কিত নানা সংগ্রহ জানার ইচ্ছাটাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। যারা গবেষণা করেন তারাও এখানে আসেন। এছাড়া সাহিত্যের নানা দিকের দুষ্প্রাপ্য বই এখানে রয়েছে। মূলত ঢাকাকে জানতে ঢাকাকেন্দ্রে আসা।
বিইউপি (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস) থেকে ঢাকাকেন্দ্রে আসা মিনা হক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য বইয়ের খোঁজ করতে এখানে আসা। এখানে এসে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ঢাকা সম্পর্কিত এত সব সংগ্রহ। জানার জন্য বার বার এখানে আসতে হবে। পুরান ঢাকার সংগ্রহগুলো আসলেই মুগ্ধকর।
এদিকে কেউ ঢাকাকেন্দ্রে আসতে চাইলে নামতে হবে বাহাদুর শাহ পার্কে। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে পুরান ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্যের দালানকোঠা পার করে বা কেউ চাইলে রিকশা নিয়ে ঢাকাকেন্দ্র বললে সহজেই যেতে পারবেন। বৃহস্পতিবার বাদে পাঠাগার ও প্রদর্শনী কক্ষ খোলা থাকে সপ্তাহে ছয়দিন। গবেষকদের জন্য নির্ধারিত সময় সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা। অন্যদিকে সাধারণ পাঠকদের জন্য বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়