মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

ধোপাদীঘিতে ওয়াকওয়ে উদ্বোধনকালে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী : সমতা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সারাদেশে উন্নয়ন কাজ চলছে

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সিলেট ব্যুরো : সিলেট বিভাগজুড়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতা থাকলেও সিলেট শহরের ভেতর হৃদয়-মনকে সতেজ করার মতো উন্মুক্ত জায়গার খুবই অভাব। সেই সঙ্গে পুকুর-দীঘি দখল করা আর আবর্জনায় ভরাটের হিড়িক চলছে। এমন প্রতিকূল পরিবেশের মাঝে সিলেটের নাগরিকদের জন্য খানিকটা সুসংবাদ হলো- দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে থাকা নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধোপাদীঘিতে সিটি করপোরেশন নির্মিত নান্দনিক ওয়াকওয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকালে ওয়াকওয়ের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
গতকাল ৬ তলা বিশিষ্ট চারাদীঘিরপাড় স্কুল ও কাস্টঘর ক্লিনার কলোনির উদ্বোধন করেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সবগুলো প্রকল্পই ভারত সরকারের অর্থায়নে সিলেট সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন করেছে। তিনটি প্রকল্পে ২৪ কোটি ২৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অর্থায়ন করেছে ভারত সরকার।
প্রকল্পসমূহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সরকারের ধারাবাহিক ও সমতার উন্নয়নে সিলেট সিটি করপোরেশন যথাযথ ভূমিকা রাখছে। সময়মতো প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন এবং দূরদর্শী ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে সিলেট মহানগরবাসী নানা সুবিধা পাচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, সরকার উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় রাজনৈতিক বিবেচনা করে না। সারাদেশে সমতা ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন কাজ চলছে। সিলেটের উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কথাও বলেন তিনি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের রাস্তাঘাট মেরামতে বিশেষ সহযোগিতার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
ভারত সরকারের অর্থায়নে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধোপাদীঘি, ক্লিনার কলোনি ও চারাদীঘিরপাড় স্কুলের উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দেশ। প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র হিসাবে ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেটে ভারত সরকারের এই প্রকল্পগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। সময়মতো প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন হওয়ায় তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানান।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটের উন্নয়নে ভারত সরকারের এই প্রকল্পসমূহ মাইলফলক হয়ে থাকবে। ধোপাদীঘি উদ্ধার ও সংরক্ষণ সংস্কারের ফলে সিলেট মহানগরের দীঘির শহরের অন্যতম স্মারক রক্ষা পেল। সিসিক মেয়র, সিলেটের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
সিসিক সূত্র জানায়, দখল-দূষণ আর ভরাটে ধোপাদীঘি পড়েছিল অস্তিত্ব সংকটে। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনায় নতুন রূপ পেয়েছে ধোপাদীঘি।
নগরীর মানুষকে নির্মলতার স্বাদ দিতে এই দীঘিকে বদলে দেয়া হয়েছে নান্দনিকতায়। দীঘির চারপাশে প্রায় ৫০০ মিটার দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। দীঘিতে নামার জন্য রয়েছে সুদৃশ্য দুটি ঘাট। দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য রাখা হয়েছে টাইলস বসানো বেঞ্চ, রয়েছে টয়লেটও। ধোপাদীঘি এলাকায় সিটি করপোরেশনের মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবেশের পথ রাখা হয়েছে। সন্ধ্যায় দীঘি এলাকায় থাকছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। তবে শিশুদের খেলার জায়গা ও দীঘির পানিতে প্যাডেল বোট রাখার কথা রয়েছে।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, সিলেটের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়াল ঘেঁষা নগরীর প্রাচীনতম দীঘি ধোপাদীঘির নামেই ওই এলাকার নামকরণ হয় ধোপাদীঘিরপাড়। একসময় ধোপা সম্প্রদায়ের লোকজন এই দীঘির পানি ব্যবহার করতেন। প্রায় ৬ একর জমি রয়েছে ধোপাদীঘিতে। এর মধ্যে ৫ একরের মালিকানা সিসিকের, আর ১ একর জমি ধোপা সম্প্রদায়ের লোকজনের নামে রয়েছে। এই দীঘির উত্তর ও পূর্বাংশে মার্কেট, দোকানপাট গড়ে উঠেছে; দক্ষিণে আছে ওসমানী শিশুপার্ক। দখল আর অবৈধ স্থাপনায় দীঘিটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল। ২০১৮ সালে দীঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। ‘বিউটিফিকেশন অব ধোপাদীঘি’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সিসিক। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ২০১৮ সালের শেষদিকে ধোপাদীঘি দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় সিসিক। কিন্তু পরবর্তীতে ওই প্রকল্পের কাজ গতি হারায়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার পুরোদমে শুরু হয় এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় উদ্বোধন করা হলো নান্দনিক ধোপাদীঘি।
কাশমির রেজা ও ফাতেমা রশিদ সাবার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রকল্পের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ তৌফিক বকস, সালেহ আহমদ সেলিম, মখলিছুর রহমান কামরান, আজম খান, ইলিয়াসুর রহমান, আফতাব হোসেন খান, রাশেদ আহমদ, রকিবুল ইসলাম ঝলক, আব্দুল মোনিম, সিকন্দর আলী, আব্দুল মুহিত জাবেদ. কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ ও এসএম শওকত আমীন তৌহিদ প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব নূরে আলম সিদ্দীকি, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশারফ হোসেন, সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, ডিআইজি প্রিজন কামাল হোসেন, সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়