মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

জন্মদিনে কেক-চকোলেট নয় চোখের জলে পূজাকে স্মরণ

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রতি বছর জন্মদিন এলেই রঙিন আলো ও বিভিন্ন ধরনের বেলুন দিয়ে সাজানো হতো পুরো বাসা। নিমন্ত্রণ করা হতো সব আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের। সন্ধ্যা থেকেই এক অন্য রকম উৎসবের আমেজ পুরো বাসায়। আনা হতো বড় আকারের কেক। রান্না হতো হরেক রকমের খাবার। দিনটি যেন হয়ে উঠত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের পুনর্মিলনী। গতকাল ১১ জুন পূজা সরকারের জন্মদিনে এই বাসাটিতে সুনসান নীরবতা যেন চারদিকে হাহাকার। যে স্বামী স্ত্রীর পছন্দের চকোলেট কেক ও উপহার কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, তিনিও অশ্রæসিক্ত চোখে ব্যস্ত সময় পার করেছেন অসহায়দের সহায়তা করে। মেয়েকে ছাড়াই মেয়ের স্মরণে কেক কেটেছেন বাবা। সেইসঙ্গে বুক ভাসিয়েছেন বেদনার নোনা জলে।
শুধু স্বামী আর বাবা নয়, সাভারে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পূজা সরকারের জন্মদিনটি পালন করতে না পারার আক্ষেপ পুড়িয়েছে সব আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সন্তান সম্ভবা হওয়ায় এ বছর পূজার জন্মদিন ঘিরে বড় ধরনের পরিকল্পনা ছিল সবার। কিন্তু সড়ক দানব সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। ফিঁকে হয়ে গেছে সব আয়োজনও। পূজার জন্মদিনে পরিবারের সদস্যদের একটিই চাওয়া- আর কোনো মেধাকে, আর কারো সন্তানকে যেন সড়কে এভাবে প্রাণ দিতে না হয়।
পূজা সরকারের স্বামী তন্ময় মজুমদার আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের পরিবারে জন্মদিন মানেই সবাই মিলেমিশে উদযাপন করা। এই জুন মাসে পূজার জন্মদিন, আমার বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকী এবং বড় ভাইয়ের জন্মদিন হওয়ায় এই মাসকে আমরা পারিবারিক মাস বলে থাকি। এখন থেকে জুন মাস আমাদের জন্য বেদনার কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। কত পরিকল্পনা করেছিলাম, পূজার পছন্দের চকোলেট কেক কিনব, শাড়ি উপহার দেব। কিছুই হলো না। ওর হাসিখুশি মুখ আর কেক

কাটার স্মৃতিগুলো বারবার মনে পড়ছে। কত স্বপ্ন ছিল আমাদের, সব শেষ। আগত সন্তানের নামও ঠিক করে রেখেছিলাম, ছেলে হলে ‘তপুু’ আর মেয়ে হলে ‘তনুজা’ রাখব। তাও হলো না। ছোটবেলায় পূজা তার মাকে হারায়। এজন্য ও সব সময় বলত, সন্তানদের অনেক আদর করবে। তার আগেই আমাকে একা করে দিয়ে চিরবিদায় নিল।
তন্ময় আরো বলেন, বিয়ের পরে গত ২ বছর রাজধানীর ওয়ারীর হাটখোলা এলাকায় আমাদের নিজেদের বাড়িতে পূজার জন্মদিন পালন করা হয়েছে। আমাদের সব আত্মীয়স্বজন ও পূজার সব বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করা হতো। এখন তো পূজা নেই, এজন্য বাসায় শুধুই হাহাকার। ওর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে অসহায়দের সহায়তা করছি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, বিয়ের সময় পিরোজপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আর পূজা থাকত পরমাণু শক্তি কমিশনের কোয়ার্টার বাইপাইলে। আমাদের তেমন দেখা হতো না। পরে আমি পোস্টিং নিয়ে মানিকগঞ্জের একটি হাসপাতালে চলে আসি। মাত্র ২ মাস ধরে আমরা নিয়মিত একসঙ্গে থাকা শুরু করেছিলাম। সুখ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। আমাকে একা করে চলে গেছে পূজা। ওর জন্মদিনে একটিই চাওয়া, সড়ক দানব যেন আর কোনো পূজাকে কেড়ে না নেয়। সড়কের নৈরাজ্য যেন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
পূজার বাবা অতুল সরকার ভোরের কাগজকে বলেন, ছোটবেলায় পূজার মা মারা যাওয়ার পর আমি নিজ হাতে ওর জন্মদিন উদযাপনের আয়োজন করতাম। বিয়ের পর দুই বছর শ্বশুর বাড়িতে জন্মদিন পালন করেছে। এবার ভেবেছিলাম বড় আকারে উদযাপন করব। পূজা সন্তান সম্ভবা হওয়ায় এমনিতেই আমরা আনন্দিত ছিলাম। ভেবেছিলাম এবারের খুশিটা দ্বিগুণ হবে। কিছুই হলো না। তবুও পূজার স্মরণে কেক কাটব। অহায়দের খাবার খাইয়ে পূজার জন্য আশীর্বাদ চাইব। পুরনো ছবির অ্যালবামে ওকে খুঁজার চেষ্টা করব। পূজার বড় ভাই বিজয় বলেন, পূজার জন্মদিন এভাবে কাটাতে হবে কখনো ভাবিনি। ওকে জন্মদিনে উইশ করাটা খুব মিস করছি।
পূজা পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। পূজার সেখানকার বান্ধবী ও রুমমেট নিলুফা ইয়াসমিন স্মৃতিচারণ করে বলেন, একই বেডে থাকায় পূজা আমাকে বেডু বলে ডাকত। ঝড়ের রাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম আমরা। যখন মেঘ ডাকত তখন পূজা আমাকে বলত, ভয় পাস না লাজুক, আমিতো আছি। পূজার হাসিমাখা মুখ দেখে সব সময় বলতাম, তুই একটা খরগোশ। কিন্তু কী এমন হয়ে গেল যে, ওর রক্তমাখা মুখটা দেখার সাহস পেলাম না। নিলুফা ইয়াসমিন আরো বলেন, প্রতি জন্মদিনে পূজা ওর স্বামী তন্ময়ের সঙ্গে তোলা ছবি আমাকে পাঠাত। আর জন্মদিনে কী কী করছে সেগুলো মেসেজে জানাতে থাকত। এখন পূজা নেই, তবুও ওর হাসিমাখা মুখ ও চাঞ্চল্যতার স্মৃতি থাকবে চিরকাল।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের বলিয়ারপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস ও ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে পূজাসহ পরমাণু শক্তি কমিশনের ৪ কর্মকর্তা নিহত হন। এছাড়া নিহত হন দুই বাসের চালক। দুর্ঘটনার পরে ঘাতক বাসটির চালকের সহকারী মো. তানভীর সাংবাদিকদের বলেন, বাসের চালক মারুফ দুর্ঘটনার আগে ক্লান্ত ছিলেন এবং ঢুলুঢুলু চোখে বাস চালাচ্ছিলেন। ঘাতক বাসের রুট পারমিট, ফিটনেস ও ট্যাক্সের মেয়াদ ছিল না বলে জানায় বিআরটিএ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়