মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

কুসিক ভোটে জটিল সমীকরণ : রিফাতের উভয় সংকট হিসাব মেলাচ্ছেন সাক্কু

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের বাকি ৩ দিন। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও প্রচারণায় জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনে না থাকলেও বিএনপি থেকে সরে গিয়ে হেভিওয়েট দুজন নেতা এই ভোটে মেয়র পদে শক্ত প্রতিদ্ব›দ্বী। তাদের পেছনে আছেন বিএনপির অনেকে। দলাদলিতে বিভক্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পড়েছেন বেকায়দায়। তার বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানের পৃষ্ঠপোষকতার তালিকায় শীর্ষস্থানে নাম থাকা এবং টাকা দিয়ে মনোনয়ন কেনার অভিযোগ মুখে মুখে। এর মধ্যে মনোনয়নবঞ্চিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের ১৩ নেতা ভোটের মাঠে নীরব। বেগতিক পরিস্থিতিতে রিফাতের ‘বস’ কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে, এলাকা না ছেড়ে আছেন কুমিল্লায়। বাতাস আঁচ করতে পেরে মনোনয়নবঞ্চিত ১৩ নেতাকে ঢাকায় শুক্রবার সকালে রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে নৌকার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাহার কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নৌকার প্রার্থী রিফাত সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ অন্যসব

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিম যেভাবে এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে বৈঠক, পথসভা ও গণসংযোগ করেছে কুমিল্লায় এর প্রতিফলন নেই। মনোনয়নবঞ্চিত ১৩ নেতাকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৪১ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতেও রাখা হয়নি। তারাও প্রচারণায় নামেননি। নৌকার প্রার্থী রিফাত যেমন এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠ; তেমনিভাবে সদ্য সাবেক মেয়র সাক্কুও বাহারের ঘনিষ্ঠ। বাহার ও রিফাত এবার ভোটের মাঠে প্রতিদ্ব›দ্বী হলেও টানা ১০ বছর তারা ছিলেন একাট্টা। গত দুই সিটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাহার ও রিফাত আওয়ামী লীগ প্রার্থী আফজাল খান ও তার মেয়ে সীমার বিরুদ্ধে সাক্কুকে সায় দিয়েছেন। এরপর সিটি করপোরেশনে রিফাতের ঠিকাদারিতে আধিক্য ছিল ওপেন সিক্রেট। মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা সদর দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দুবারের মেয়র। এবারো মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অন্য মেয়র প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দলের কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে অব্যহতি পাওয়া মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সারকে ঘিরেও কুমিল্লা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেকে কাজ করছেন। তারা সাক্কুর বিরুদ্ধে বিএনপির ছায়ায় থেকে রিফাত ও বাহারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন। ভোটের যোগ-বিয়োগে বাহার ও রিফাতে সঙ্গে মিলেমিশে থাকা সাক্কু আওয়ামী লীগের ভোটেও ভাগ বসাবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত ১৩ নেতার সমর্থকদের নীরব সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। আবার বাহারের প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা অধ্যক্ষ আফজাল খানের অনুসারিরা রিফাতকে মেনে নিতে পারছেন না। তবে, ভোটের মাঠে বাহার কী খেলা খেলবেন তা নিয়ে আগ্রহ সবার। তিনি কী পুরনো সাক্কুকেই গুডবুকে রাখবেন; নাকি ছায়াসঙ্গী রিফাতকে টেনে তুলে পাশে বসাবেন- এ নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠেছে। গুঞ্জন আছে, সাক্কু এবার জয়ী হলে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কুমিল্লার একটি হোটেলে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরিপ্রক্ষিতে শুক্রবার সকালে ১৩ নেতা ও এর বাইরে শ্রমিক নেতা মনির হোসেন ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীনুল ইসলামকে ঢাকায় তলব করে কেন্দ্রীয় কমিটি। শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে কুমিল্লার নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মনোনয়নবঞ্চিত সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও মো. ওমর ফারুক, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম শিকদার, মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নুর উর রহমান মাহমুদ, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শ্যামল চন্দ্র ভট্টাচার্য, ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মাহবুবুর রহমান ও মহি উদ্দিন মাহী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী।
বৈঠক সম্পর্কে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেছি- আওয়ামী লীগের মনোনয়নের পদ্ধতি পরিবর্তন করার জন্য। কারণ দল যখন মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেছে তখন আমরা সংগ্রহ করে জমা দিয়েছি। এখন দেখা যাচ্ছে মনোনয়ন চাওয়ার কারণে আমরা শত্রæ হয়ে গেলাম। যিনি মনোনয়ন পেলেন, তিনি তো একদিনের জন্যও কাজ করতে বললেন না। তিনি কাজ করত না বললেও আমার নেতাকর্মীরা নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করছে।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেছেন, আমি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন আচরণবিধির কারণে প্রচারে অংশ নিতে পারব না। আমার নেতাকর্মীরা কাজ করছেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর বলেন, দলে প্রতিযোগিতা থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। যারা মনোনয়ন পাননি তারা সবাই যোগ্য নেতা। তাদের মান-অভিমান ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারাও কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ কাউন্সিলর ১০৮ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন, ভোটকেন্দ্র ১০৫টি। ১৩ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত প্রচারের সুযোগ পাবেন প্রার্থীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়