মামলায় জিতে টাকা ‘ইনকাম’

আগের সংবাদ

ভোক্তার সুফল কোন পথে : বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

পরের সংবাদ

আর্থসামাজিক ও যোগাযোগ উন্নয়নে নবদিগন্ত উন্মোচন : দক্ষিণাঞ্চলের বিশিষ্টজনের অভিমত

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল থেকে : শত ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে অবহেলিত দক্ষিণ জনপদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ এবং দর্শন মেনে নানা চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের সড়কপথে যোগাযোগের ভিত্তি স্থাপন হলো। আর এ সেতু বাস্তবায়নের ফলে এই অঞ্চল তথা মানুষের ওপর কী প্রভাব পড়বে- এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল বিশিষ্টজনদের কাছে। জবাবে তারা এক বাক্যে জানিয়েছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। সেতুটি চালু হলে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে। বরিশাল হবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ও শিল্পাঞ্চল। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে দক্ষিণবঙ্গ।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলবাসী পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ¡সিত। এ সেতুটি আমাদের স্বপ্নের সেতু। একটা সময় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল ছিল অবহেলিত। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কারণে এখন আর বরিশাল অবহেলিত থাকবে না। এ সেতুকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। শিল্প উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। যা বাস্তবায়ন হলে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বরিশাল হবে শিল্প বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এ সেতুটি বাস্তবায়ন করেছেন- যা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হতো না।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. সাদেকুল আরিফিন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষ সারাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এছাড়া দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে এ সেতুটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলে আগামীর বরিশাল হবে বাণিজ্য ও শিল্পনগরী। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কুয়াকাটা সৈকত- এগুলোকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতা বাড়বে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির সহজলভ্যতার কারণে এক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে গতিশীলতা বাড়বে তাতে সড়কে চাপ বাড়বে; এ কারণে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক বিশেষ করে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত যে সড়ক রয়েছে তা প্রশস্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালের সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এ সেতুটির ফলে দক্ষিণাঞ্চল আর অবহেলিত থাকবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প নিয়ে নতুন নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে পদ্মা সেতুটি চালু হলে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এটি সহজলভ্য হবে এবং মানুষ কম মূল্যে বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য কিনতে পারবেন। এছাড়া

যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়ে। এ সেতুটি চালু হলে সারাদেশের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ করতে পারবেন এবং এ অঞ্চলের শিক্ষার মান আরো বাড়বে। পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়বে- এটা মাথায় রেখে সড়ক প্রশস্ত করার কথা বলেন তিনি।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, বরিশালে শিল্প উন্নয়ন সেভাবে ছিল না। পদ্মা সেতু চালু হলে সহজ যোগাযোগের কারণে শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। ফলে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব কমে যাবে। পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারক বরিশাল অনেক এগিয়ে যাবে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, পায়রা সেতু চালু হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সারাদেশের পর্যটকরা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পৌঁছতে পারবেন। ফলে মানুষ ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে কক্সবাজার না গিয়ে স্বল্প সময়ে কুয়াকাটায় আসতে উৎসাহিত হবেন। পর্যটন এলাকায় বিনিয়োগকারীরা তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাবেন। ফলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হবে, তেমনি ব্যবসারও প্রসার ঘটবে। সবমিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চল হবে পর্যটনকেন্দ্রিক একটি বড় জোন।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাস্টির সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ¡াস ততটাই বাড়ছে। ইতোমধ্যে সর্বস্তরে শুরু হয়েছে, ক্ষণগণনা। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বরিশালে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ বাড়বে। এতে মানুষের দুর্ভোগও বাড়বে। বিশেষ করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সরু সড়ক সবকিছু তালগোল পাকিয়ে দিতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের বেশিমাত্রায় ভাবিয়ে তুলছে।
শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু একটি আত্মমর্যাদার নাম, একটি সাহসের নাম, বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার নাম। পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে অহঙ্কার ও মর্যাদার জায়গায় নিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব?্যাংককে চ?্যালেঞ্জ করে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন- এজন্য আমরা গর্বিত। পদ্মা সেতুর কারণে বরিশাল হবে ভবিষ্যৎ শিল্প ও বাণিজ্য নগরী। এতে করে একদিকে যেমন সারাদেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে তেমনি বাড়বে কর্মসংস্থান। তবে এর পাশাপাশি সেতু চালু হওয়ার পর সরু সড়ক পথের কারণে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এজন্য খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফোরলেন সড়ক ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) প্রলয় চিসিম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাবে, সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে, উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজ যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানো যাবে। ফলে কৃষকরা লাভবান হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যানবাহনের চাপ বাড়লে ট্রাফিক বিভাগে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রাফিকের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়া হবে যাতে করে মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে না হয়।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় ইতোমধ্যে পায়রা সেতু চালু হওয়ায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ফেরিবিহীন যোগাযোগ শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে ঢাকাসহ সারাদেশের ফেরিবিহীন যোগাযোগ শুরু হবে। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে শুরু হবে নতুন অধ্যায়। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়