প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
এম কে রানা, বরিশাল থেকে : বরিশালের গ্রামীণ জনপদের বেশির ভাগ মানুষের চলাচল, পণ্য পরিবহন, জীবন-জীবিকা, নদী, খাল ও বিলের ওপর নির্ভরশীল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সড়কপথের উন্নয়ন ঘটলেও নদী, খাল ও বিলবেষ্টিত এ অঞ্চলে নৌযানের ওপর নির্ভরশীলতা কমেনি সাধারণের। তাই বৈঠার নৌকাসহ ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন নৌযানের চাহিদা বেড়ে চলছে এ অঞ্চলে। বর্ষার শুরু থেকেই এ অঞ্চলে নৌকার হাটগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি বেচা-বিক্রি হয়।
নৌকার হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, বর্ষাকালে নদী ও খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর থাকায় নৌকায় হয়ে ওঠে স্থানীয়ভাবে যাতায়াতের প্রধান চালিকাশক্তি। ফলে প্রতি বছর বর্ষা শুরু হওয়ার আগ থেকেই নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ক্রেতাদের চাহিদামতো স্ত্রী, সন্তান নিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে ছোট-বড় নৌকা তৈরি করেন এর কারিগররা, যা হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহও করছে এ অঞ্চলের অনেক পরিবার। সেই হিসাবে সারা বছর যেমন তেমন গেলেও বর্ষায় নৌকার বাজার জমজমাট থাকছে প্রতি বছর।
জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার মানুষের নৌকার চাহিদা মেটাতে নেছারাবাদের আটঘরে কৃষিপণ্যের ভাসমান হাট ও শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাটের গোড়াপত্তন ঘটে। আটঘর কুড়িয়ানা খালের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এ খালের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে কৃষিপণ্যের ভাসমান হাট বসলেও নৌকার হাট বসে শুধু আটঘরে। ১০০ বছরের পুরনো এ হাটকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট হিসেবে মনে করা হয়। নেছারাবাদ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বদিকে আটঘর বাজার। সকাল ৬টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে নৌকার হাট।
সরজমিন আটঘর-কুড়িয়ানার হাটে গিয়ে দেখা যায়, খালে ও রাস্তার দুধারে কেবল নৌকা আর বৈঠা। মেহগনি, চাম্বল, কড়াই ও রেইনট্রি গাছ দিয়ে নির্মিত এসব নৌকা দেখতে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ী আর উৎসুক মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো। যেদিকে চোখ পড়ে সেদিকেই দেখা যায় সারিবদ্ধ বিভিন্ন আকারের নৌকা।
এদিকে এসব নৌকার কাঠ ও আকার ভেদে রয়েছে দামের ভিন্নতা। চাম্বল কাঠ দিয়ে তৈরি একটি আট হাত দৈর্ঘ্যরে নৌকা বিক্রি হয় ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এছাড়া ৯, ১০ ও ১২ হাত সাইজ পর্যন্ত বাহারি ডিজাইনের নৌকাও আসে এখানে।
আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারাচাষি লিটন হাওলাদার জানান, বর্ষাকালে বাগান পরিচর্যা করতে ছোট ছোট খাল পেরিয়ে বাগানে যেতে নৌকার প্রয়োজন হয়। তাই এ বছরও বর্ষার শুরুতে পছন্দমতো নৌকা কিনেছি। আটঘর-কুড়িয়ানার হাটে নৌকা কিনতে আসা রমেশ চন্দ্র ও বিশ্বজিৎ হালদার জানান, বর্ষায় গো-খাদ্য সংগ্রহসহ চলাচলের জন্য আমাদের নৌকার প্রয়োজন হয়। দাম কিছুটা কম হওয়ায় প্রতি বছরই একটি করে ডিঙি নৌকা কেনেন। আর ডিঙি নৌকাটাও তৈরি হয় অনেকটা এক মৌসুম বা এক বর্ষার জন্য। তবে একাধিক মৌসুমে এক নৌকা ব্যবহার করতে চাইলে তার পেছনে খরচটাও বাড়াতে হয়। প্রতি হাটে আড়াইশ থেকে তিন শতাধিক নৌকা বিক্রি হয় এখানে। স্থানীয় কৃষক, জেলে ও গৃহস্থরা ছাড়াও বরিশালের বানারীপাড়া, উজিরপুর, ঝালকাঠি সদর, রাজাপুর ও পিরোজপুরের কাউখালী, নাজিরপুর উপজেলা থেকে নৌকা কিনতে মানুষ এ হাটে আসে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।