ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যশুরু

আগের সংবাদ

অর্থ পাচার উৎসাহিত হবে! পাচার হওয়া টাকা অর্থনীতির মূল¯্রােতে আনতে চান অর্থমন্ত্রী > বৈষম্যের শিকার হবেন সৎ করদাতারা : বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

৬ দিনের রিমান্ডে শুটার মুসা : ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড ধামাকা’ দেখাতেই টিপু খুন

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** খুনের নির্দেশ দেয়া হয় ফেব্রুয়ারিতে ** মাস্টারমাইন্ড ফ্রিডম মানিক ও জিসান **

ইমরান রহমান : রাজধানীর মতিঝিল ও শাহজাহানপুর এলাকায় কমে এসেছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিক ও জিসানের দাপট। ঠিকাদারি কাজে কর্তৃত্ব কমে যাওয়ার পাশাপাশি পাচ্ছিলেন না চাঁদার ভাগও। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড ধামাকা’ দেখানোর সুযোগ খুঁজছিলেন বিদেশে পলাতক পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ ২৩ সন্ত্রাসীর দুজন মানিক ও জিসান। এরই মধ্যে ক্যাসিনোকাণ্ড ও টেন্ডারবাজিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া কারাগারে যাওয়ার পর চাঁদাবাজির কর্তৃত্ব চলে যায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুর হাতে।
ফলে আন্ডারওয়ার্ল্ড ধামাকা দেখানো ও চাঁদাবাজির কর্তৃত্ব ফিরে পেতে প্রধান টার্গেটে পরিণত হয় টিপু। পরিকল্পনা মোতাবেক জিসান ও ফ্রিডম মানিক মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন মুসার সঙ্গে। মুসাই প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কিলার ভাড়া করেন এবং টিপু কিলিং মিশনের পরিকল্পনা সাজিয়ে দুবাই পাড়ি দেন। ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের

হত্যার দায় স্বীকার করে এসব তথ্য জানিয়েছেন সুমন শিকদার ওরফে শুটার মুসা। তবে হত্যাকাণ্ডের জন্য চুক্তির টাকার উৎসের বিষয়ে এখনো মুখ খোলেননি তিনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ফ্রিডম মানিক ফোন দিয়ে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করতে বলেন। এরপর ফোন করেন জিসানও। তারা দুজনই মুসাকে বলেন, বোঁচা বাবু হত্যাকাণ্ড নিয়ে টিপু তোর (মুসা) সঙ্গে যেটা করেছে ঠিক করেনি। ওর (টিপুর) জন্য আমরাও সুবিধা করতে পারছি না। ওরে সরিয়ে দে। যত ঝামেলা আমরা দেখব। মূলহোতা হিসেবে আমাদের নাম এলেও কোনো সমস্যা হবে না। কারণ আমরা দেশের বাইরে রয়েছি। দীর্ঘক্ষণ আরো নানা বিষয় নিয়ে কথা হওয়ার পর টিপুকে হত্যা করতে রাজি হয়ে যায় মুসা।
পরে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া শুটার আকাশকে ঠিক করে কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করেন মুসা। পুলিশ যাতে তাকে (মুসা) গ্রেপ্তার করতে না পারে সেজন্য কিলিং মিশনের ১২ দিন আগে দুবাই চলে যান। সেখানে জিসানের ছত্রছায়ায় থাকার পর গত ৮ মে দুবাই থেকে ওমানে যান। ওমানের সালালায় অবস্থিত হযরত আইয়ুব (আ.)-এর মাজার জিয়ারত করে ১২ মে আবারো দুবাই ফেরার সময় ওমান পুলিশ তাকে আটক করে। সূত্র আরো জানায়, ওমান পুলিশ ঠিক কী কারণে তাকে আটক করেছে তা বুঝতে পারছিলেন না মুসা। ওমানের জেলখানার পরিবেশ ভালো না হওয়ায় এবং সেখানকার পুলিশের আচরণে খুব চিন্তিত ছিলেন তিনি। ডিবির টিম ওমান কারাগারে গিয়ে দেখা করার সময়ও মুসা বুঝতে পারেননি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে বিমানে ওঠার পরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন মুসা।
সূত্র জানায়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, রেলওয়ে, কমলাপুর আইসিডি ডিপো, বিদ্যুৎ ভবন ও গণপূর্তের টেন্ডারবাজির একটি কমিশন বিদেশে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও ফ্রিডম মানিককে দিতে হতো। গত কয়েক বছর ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছে এসব টেন্ডারবাজির কোনো কমিশন দেয়া হয়নি। পাশাপাশি শাহজাহানপুর ও মতিঝিল এলাকার মার্কেট নিয়ন্ত্রণ ও বাড়ি নির্মাণের চাঁদাবাজির পুরোটাই একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন টিপু। শাহজাহানপুরের চাঁদার ভাগ কারাগারে থাকা খালেদের কাছে পৌঁছালেও ফ্রিডম মানিক পাচ্ছিলেন না। এতে তার ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। জিসানেরও ক্ষোভ জন্মায় চাঁদার ভাগ না পাওয়ার কারণেই। পাশাপাশি বোঁচা বাবু ও যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যাও মোটিভ হিসেবে কাজ করেছে টিপু হত্যার পেছনে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, শাহজাহানপুরে ডাবল মার্ডারের ঘটনায় বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশের স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হিসেবে মুসার নাম আসে। পরে জানা যায়, মুসা ঘটনার আগেই ১২ মার্চ দেশ ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত চলে যান। তার সন্ধান পেতে ৬ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখায় যোগাযোগ করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর ৮ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে। এর মধ্যে ৮ মে জানা যায়, মুসা দুবাই থেকে ওমানে প্রবেশ করেছেন। ইন্টারপোলের ওমান পুলিশ এনসিবির সহযোগিতায় গত ১২ মে মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম ওমানে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনে। ডিবিপ্রধান বলেন, মুসাকে না পেয়ে মামলার তদন্তে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এখন মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকাণ্ডে কার কার দায় আছে, কার নেই অথবা কে বাদ বা যুক্ত হবে, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মুসাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আমরা মামলাটি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলে আশা করছি।
ঘটনার সঙ্গে মোল্লা শামীম নামে একজনের সংশ্লিষ্টতা আলোচনায় এসেছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আগে আমরা নিশ্চিত হব তিনি কোথায় ও কীভাবে পালিয়েছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের এবার মুসার মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর ঘটনার কার কী সংশ্লিষ্টতা, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
৬ দিনের রিমান্ডে মুসা : টিপু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শুটার মুসার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দার আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর আমতলায় ইসলামী ব্যাংকের সামনে টিপুর গাড়ি লক্ষ্য করে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে। গুলিতে টিপু, তার গাড়িচালক মুন্না ও রিকশা আরোহী রাজধানীর বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় টিপু ও প্রীতির মৃত্যু হয়। ঘটনার পরদিন নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়