ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যশুরু

আগের সংবাদ

অর্থ পাচার উৎসাহিত হবে! পাচার হওয়া টাকা অর্থনীতির মূল¯্রােতে আনতে চান অর্থমন্ত্রী > বৈষম্যের শিকার হবেন সৎ করদাতারা : বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

সংস্কৃতির বাজেটে হতাশা : অনুদান নয়, বিনিয়োগ চান সংস্কৃতিকর্মীরা

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২২ , ১:৪০ পূর্বাহ্ণ

এবারো সংস্কৃতির বাজেট নিয়ে হতাশ হয়েছেন দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা। সংস্কৃতিজনরা বলছেন, জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতিকে অবহেলা করা হয়েছে। দেশব্যাপী সংস্কৃতিচর্চাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এই বাজেট অপ্রতুল। মূল বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ বরাদ্দ প্রত্যাশা করেছিলেন সংস্কৃতিকর্মীরা। অনুদানের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কৃতি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন দেশের খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণে মানুষের চিন্তায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক জাগরণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে ৬৩৭ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫৮৭ কোটি টাকা; যা সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ৫৭৯ কোটি টাকায়। গত অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে এবার ৫০ কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৫৮ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার বাঙালি সংস্কৃতির অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, নাটক ইত্যাদি সুকুমার শিল্পের সৃজনশীল উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে।
বাজেটের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, সংস্কৃতি খাতে যে বাজেট দেয়া হয়, সেটা তো বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় শেষ হয়ে যায়। তৃণমূলে সংস্কৃতিচর্চাকে এগিয়ে নিতে হলে রাষ্ট্রকে ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্রের অবহেলা আমাদের ভীষণ রকম হতাশ করে। সংস্কৃতি খাতকে গুরুত্ব না দিয়ে আমরা যে মানবিক রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখি, সেটা সম্ভব না। আমরা আশা করেছিলাম, মূল বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হবে সংস্কৃতি খাতে। সেটা বিগত এক দশক ধরে দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু সেটা করা হয়নি। এটা ভীষণ মর্মাহত হওয়ার মতো। রাষ্ট্রের পরিচয় যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে সংস্কৃতির ওপর, সেখানে অবহেলা দুঃখজনক। প্রতিবারই সংস্কৃতি খাতে কম বরাদ্দ দেয়া হয়। অথচ সারা বছরই সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে হবে বলে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা বক্তৃতায় বলেন। এখন বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হয়, সেটা কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়। সমাজের সুস্থ চর্চা অব্যাহত রাখতে হলে সংস্কৃতি খাতে অবশ্যই বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।
সংস্কৃতি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে উল্লেখ করে রামেন্দু মজুমদার বলেন, নামেমাত্র অনুদান দিয়ে সর্বগ্রাসী সংকট থেকে জাতিকে রক্ষা করা যাবে না। অনুদান প্রবণতা থেকে বেরিয়ে সংস্কৃতিতে সঠিক পরিকল্পনায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মানুষের চিন্তায় ও মননে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ, এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘সংস্কৃতিকর্মীরা এই বাজেটে খুবই হতাশ। সাংস্কৃতিক জোট সারাদেশের সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। শুধু এটুকু বলব, সংস্কৃতির প্রতি এই অবহেলা রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু হবে না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি সংস্কৃতি খাতে মূল বাজেটের এক শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হোক।
জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ বলেন, ‘সরকারকে বোঝা উচিত, সংস্কৃতির বাজেট শুধু সংস্কৃতির নয়। একটা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থাকে বজায় রাখার জন্য এবং মানুষের মানবিক বিকাশের জন্য জরুরি। সংস্কৃতিকে জাতির মনন বিকাশের সোপান বিবেচনা করে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ করতে হবে। এই বরাদ্দের এক বড় অংশ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, সংগঠনের অনুদান, শিল্পী সম্মানী এবং বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে। প্রতিটি উপজেলায় ৫০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ এবং উপজেলা সদরে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া অসচ্ছল শিল্পীদের মাসিক অনুদানের পরিমাণ বাস্তবতার নিরিখে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা এবং এ ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাই।
প্রতি বছরই বাজেট ঘোষণার পর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা প্রতিক্রিয়া জানালেও এবার আগে থেকে বাজেট বৃদ্ধির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন তারা। বাজেটের এক মাস আগেই সংবাদ সম্মেলন করে সেই দাবি তুলে ধরেছেন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও দাবিগুলো জানিয়েছেন।
সাংস্কৃতিক জোটের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে এক শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দাবির পাশাপাশি প্রত্যেক উপজেলায় ৫০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ, উপজেলা সদরে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ, একটি বিশেষ প্রকল্প নিয়ে প্রতি বছর অন্তত ১০০টি উপজেলায় এ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের সবকয়টি উপজেলায় সংস্কৃতি চর্চার নেটওয়ার্ক তৈরি হবে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ স্মরণে রেখে প্রত্যেক জেলায় ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মৃতিভবন’ নির্মাণ করা। এ ভবনে ৭০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন, মহড়া ও কর্মশালার কক্ষ, সেমিনার হল, পাঠাগার, ক্যান্টিন ও ৫ থেকে ১০ জন থাকার মতো কক্ষের ব্যবস্থা করা, যত দ্রুত সম্ভব এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। শিক্ষা কার্যক্রমে সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতি বছর সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা রাজধানীসহ প্রত্যেক জেলায় সরকারি উদ্যোগে একটি করে স্থায়ী যাত্রাপালার প্যান্ডেল নির্মাণ করা।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে হতাশার সুরে নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী বলেন, ‘সবাই বলে সংস্কৃতির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ কমানো সম্ভব। সমাজ সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব। সেখানে যে বাজেট দেয়া হলো সেটা খুবই ক্ষুদ্র। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ান। সংস্কৃতি আমাদের দেশের জন্য জরুরি। এই স্বল্প বাজেট দিয়ে কিছুই হবে না।’
নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা বলেন, ‘গতবারের তুলনায় যে পরিমাণ বরাদ্দ বেড়েছে সেটা একেবারেই অপ্রতুল। এর থেকেও বড় কথা হচ্ছে শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায় না। যেটুকু অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় সেই অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনাও দেখা যায় না। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কিছুর উন্নয়ন সম্ভব নয়।’ প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘শুধু এ বছর নয়, প্রতিবছরই সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ কম দেয়া হয়। এটা খুবই দুঃখজনক। কষ্ট নিয়েই বলতে হয় সরকার হয়তো চায় না শিল্প-সংস্কৃতির উন্নয়ন হোক।’
:: হেমন্ত প্রাচ্য

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়