ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যশুরু

আগের সংবাদ

অর্থ পাচার উৎসাহিত হবে! পাচার হওয়া টাকা অর্থনীতির মূল¯্রােতে আনতে চান অর্থমন্ত্রী > বৈষম্যের শিকার হবেন সৎ করদাতারা : বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

বাজেট পর্যালোচনায় সিপিডি : অর্থ পাচারের প্রবণতা আরো বাড়বে

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** অর্থমন্ত্রী রোগ চিহ্নিত করেছেন; কিন্তু ওষুধ ঠিকমতো হয়নি **
কাগজ প্রতিবেদক : বাজেটে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির মতে, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরতের সুযোগ দিলে টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা কম। বরং পাচারের প্রবণতা বাড়তে পারে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ এবং সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সিপিডি বলেছে, বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ ছয়টি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, তিনি রোগ চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু সেই রোগ সারাতে ওষুধ ঠিকমতো হয়নি। নতুন বাজেট যে লক্ষ্য নিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে তা পূরণে নেয়া পদক্ষেপগুলো পরিপূর্ণ নয়। নীতিকৌশলের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ অসম্পূর্ণ এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তা অপর্যাপ্ত।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান

বলেন, সুযোগের ফলে পাচারকৃত অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আসার সম্ভাবনা কম। বরং এতদিন ধরে যারা টাকা পাচারের চিন্তা করেননি, তারা উৎসাহিত হবেন। তারা ভাববেন, এখানে সর্বোচ্চ কর দিতে যাব কেন! যেহেতু ১৫% ট্যাক্স দিয়ে ফেরত আনা যাবে।
তিনি বলেন, এ সুযোগ নৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। কারণ টাকা বাইরে দুর্নীতি আর অবৈধভাবে নিয়ে গেছেন। এটা নৈতিকভাবে যৌক্তিক নয়। আর বৈধভাবে টাকা বাইরে নেয়ার সুযোগ নেই। এর আগে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল সেটাতে খুব বেশি রাজস্ব বাড়েনি। অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে এতে উপকার নেই।
বাজেটে ধনী ও অর্থ পাচারকারীদের জয় হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন সিপিডি সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে যাদের টাকা-পয়সা আছে, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী, যারা টাকা পাচার করে তাদের জয় হয়েছে। গরিবের জন্য বাজেটে তেমন কিছু নেই। সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়েছে মধ্যবিত্ত।
তিনি বলেন, সরকার ধরেই নিয়েছে করোনা চলে গেছে। করোনার সামগ্রীর ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। কোনো কারণে করোনা মহামারি আবার ফিরে এলে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা করবে। শিক্ষার অন্যতম উপকরণ ল্যাপটপের দাম এই মুহূর্তে বাড়ানো ঠিক হয়নি।
মূলপ্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, পাচার করা টাকা কর দিয়ে দেশে আনার সুযোগে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা হয়; এটা অনৈতিক। এটা থেকে কোনো অর্থ আসবে না। কারণ যারা দেশের বাইরে টাকা পাচার করে, তারা দেশে ফিরে আসার জন্য টাকা পাচার করে না।
তিনি বলেন, একদিকে অর্থ পাচারের সুযোগ দিয়ে আবার অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেব; অন্যদিকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য করছাড় থাকবে না। সেটা সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, ডালসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দরকার ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। সিপিডির পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে কর কমানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটিও রাখা হয়নি বলে জানান ফাহমিদা খাতুন।
ড. ফাহমিদা বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি রয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আগামী এক বছরে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমবে? কারণ পৃথিবীর অনেক দেশ অর্থনৈতিক মন্দায় চলে যাবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে জনজীবনের ওপর চাপ রয়েছে। বাজেটে প্রত্যাশা ছিল নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেয়া হবে, কিন্তু দেয়া হয়নি। উল্টো বিত্তবানদের কর কমানো হয়েছে। কর কাঠামোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কর প্রত্যাহারের প্রস্তাবনা যথেষ্ট নয়। অনেক পণ্যেই কর রয়ে গেছে। বাজেটে গম ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যে করছাড় নেই। বাড়ন্ত মূল্যস্ফীতির এ সময়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি, ভর্তুকি ও সামাজিক সুরক্ষার আওতাও ওই অর্থে বাড়েনি। তাহলে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন কীভাবে?
ড. ফাহমিদা বলেন, আমরা শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর নজর না দিয়ে আমাদের বর্তমান অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতির যে চাপ, তার পরিপ্রেক্ষিতে যারা দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগণ আছেন, তাদের কীভাবে সুরক্ষা দেয়া যায় এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কীভাবে রক্ষা করা যায় সেগুলোর ওপর জোর দিতে বলেছিলাম। সেটি করতে গিয়ে যা প্রয়োজন আর্থিক বা মুদ্রা পদক্ষেপ, সেটির মধ্যে সমন্বয় করা খুবই প্রয়োজন। আমরা প্রায়ই দেখি, এগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় থাকে না।
এ সময় তিনি মোটাদাগে সিপিডির ৪টি সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকে কর তুলে দেয়া কিংবা কর কমিয়ে ফেলা। সেই সঙ্গে মধ্যম ও নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষকে করের বোঝা থেকে কিছুটা অব্যাহতি দেয়া। ভর্তুকির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ রাখা, যাতে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় এবং কিছু দিনের জন্য সেখানে ভর্তুকি চালিয়ে যাওয়া। জনগণের জন্য বিশেষ করে দরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রসার, এর আওতা বাড়ানো এবং পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়