ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যশুরু

আগের সংবাদ

অর্থ পাচার উৎসাহিত হবে! পাচার হওয়া টাকা অর্থনীতির মূল¯্রােতে আনতে চান অর্থমন্ত্রী > বৈষম্যের শিকার হবেন সৎ করদাতারা : বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

ঘটনাস্থল কলকাতার পার্ক সার্কাস : এলোপাতাড়ি গুলিতে নারীকে হত্যার পর আত্মঘাতী পুলিশ

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : আগামী মাসেই বিয়ে স্থির ছিল হাওড়ার দাশনগরের ১৩৩ নম্বর ফকির মিস্ত্রি বাগানের বাসিন্দা রিমা সিংয়ের (২৮)। গতকাল শুক্রবার হবু বর প্রবীর রায় তাদের বাড়িতে এসেছিলেন দেখা করতে। বিয়ের তারিখও চূড়ান্ত করার কথা ছিল। বাইরে থাকা রিমা হবু বরকে ফোনে বলেছিলেন, অপেক্ষা করো, আমি আসছি। কিন্তু পার্ক সার্কাস থেকে আর ফিরলেন না রিমা। তাদের আর দেখা হলো না।
কলকাতা পুলিশ দাশনগরের বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিল গুলিতে মৃত্যু হয়েছে রিমার। কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের কাছে ভারতীয় এক পুলিশ কনস্টেবলের এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। রিমাকে হত্যার পর ওই পুলিশ সদস্যও নিজের বন্ধুকের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। রিমার মৃত্যু সংবাদে দাশনগরের বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আউটপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য চোডুপ লেপচার এলোপাতারি গুলিতে প্রাণ হারান রিমা সিংহ। আশপাশে রাখা গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং আরো কয়েকজন পথচারী আহত হয়। পুলিশ সদস্য চোডুপ লেপচা ছুটি থেকে ফিরে গত বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তার কাছে একটি সেলফ-লোডিং রাইফেল বা এসএলআর ছিল। সেটি দিয়েই তিনি গুলি চালান।
রিমার মা বলেন, আমার মেয়েটা যে এভাবে চলে যাবে তা ভাবতেও পারিনি। ও বেলা ১২টা নাগাদ হাসতে হাসতে বেরোল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কখন ফিরবি?’ বলল, ‘সন্ধ্যায়।’ এর কিছুটা পর আমাদের বাড়িওয়ালা আমাকে ডেকে বললেন, ‘রিমার মৃত্যু হয়েছে গুলিতে।’ ওর বিয়ে স্থির হয়েছিল। আমাদের হবু জামাই প্রবীরের বাবা মারা গিয়েছেন। আজ (গতকাল) বিয়ের দিন স্থির করার কথা ছিল। সেই জন্য প্রবীর এসেছিল।
রিমা তার পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন। রিমার মায়ের কথায়, ‘ওর বাবার পাঁচ বছর কারখানা বন্ধ। আমার মেয়েই সংসার চালাত। এছাড়া রয়েছে রিমার এক ভাইও। তার আকস্মিক মৃত্যুতে গোটা পরিবার শোকস্তব্ধ।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুপুর আড়াইটার দিকে লোয়ার রেঞ্জ রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট রিমা। সেই সময়ই চা খাওয়ার নাম করে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আউট পোস্ট থেকে বেরিয়ে আসেন

চোডুপ। কাঁধে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। কড়েয়া থানা এলাকার লোয়ার রেঞ্জ রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগোতে থাকেন তিনি। কাঁধের রাইফেল নেমে আসে হাতে, চালাতে শুরু করে গুলি। এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকেন চোডুপ। ৫ মিনিটের মধ্যে তিনি ১০ থেকে ১৫টি গুলি ছোড়েন। সেই সময় লোয়ার রেঞ্জ রোড ধরে এপিসি রোডের দিকে আসছিল একটি অ্যাপনির্ভর বাইক। চোডুপের গুলি গিয়ে লাগে বাইকের দুই আরোহীর গায়ে। পেছনের আসনে বসেছিলেন রিমা সিংহ। তার মাথা ফুঁঁড়ে গুলি বেরিয়ে যায়। রাস্তার উপরই লুটিয়ে পড়েন তিনি। রক্তে ভরে যায় চারপাশ। তাণ্ডবলীলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর তড়িঘড়ি রিমাকে নিকটবর্তী ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তারপর নিজের রাইফেল থেকে চোডুপ গুলি চালিয়ে দেন নিজের গলার কাছে। ঘটনাস্থলেই তারও মৃত্যু হয়।
কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, চোডুপ সম্ভবত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সেই কারণেই কি এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে নিজেও আত্মঘাতী? কালিম্পঙের বাসিন্দা চোডুপ লেপচা। কাজ করতেন কলকাতা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর পঞ্চম ব্যাটালিয়নে। সপ্তাহখানেক আগে আরো অনেকের সঙ্গে তাকেও বেকবাগানের কাছে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আউটপোস্টের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে বহাল করা হয়েছিল। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, চোডুপ লেপচা সম্ভবত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সেই কারণেই তিনি এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে নিজেও আত্মঘাতী হলেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়