ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যশুরু

আগের সংবাদ

অর্থ পাচার উৎসাহিত হবে! পাচার হওয়া টাকা অর্থনীতির মূল¯্রােতে আনতে চান অর্থমন্ত্রী > বৈষম্যের শিকার হবেন সৎ করদাতারা : বিশ্লেষকদের অভিমত

পরের সংবাদ

আসতে পারে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা : জামায়াত প্রশ্নে নতুন কৌশলে বিএনপি

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিগত ৬ বছরের কৌশলগত দূরত্ব আরো বাড়াতে চায় বিএনপি। ২৩ বছরের মিত্র জামায়াতকে দূরে রেখেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় দলটি। নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে রাজপথের আন্দোলন জোটবদ্ধভাবে আর কোনো কর্মসূচি পালন করবে না তারা। দুপক্ষের নীতিনির্ধারকরা আলোচনার মাধ্যমে এমন ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এমনকি শিগগিরই জায়ামাতের পক্ষ থেকে বিএনপি ছাড়ার কৌশলী ঘোষণাও আসতে পারে।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তাব নিয়ে বাম ও প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির চলমান সংলাপ জামায়াতের কারণেই। এবারের আন্দোলনের জামায়াতকে নিলে বা কোনো ধরনের সম্পৃক্তা থাকলে বাম দলগুলোর পাশাপাশি উদার প্রগতিশীল মতের দল ও ব্যক্তিরা সঙ্গে আসবে না। এটা জেনেই যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
সূত্র জানায়, বাম ও প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরুর আগেই জামায়াতের সঙ্গে সব বিষয়ে ফয়সালা করেছে বিএনপি। তবে বিষয়টি স্বীকার না করে ভিন্ন যুক্তি দিচ্ছেন নেতারা। তাদের ভাষ্য, আগে বৃহত্তর ঐক্য বা জোট গঠন করে আন্দোলনে যেতে দেরি হয়ে যাবে। এর চেয়ে কতগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে রাজপথে ঐক্য

গড়ে তোলাই যুক্তিযুক্ত।
প্রথম থেকেই ঐক্যজোট গঠনে তৎপর বিএনপির এমন নেতারা জানিয়েছেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, জোট সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গত ৩ মাস ধরে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন জোট নেতাদের সঙ্গে। ওইসব বৈঠকে প্রত্যেক দলকে নিজস্ব দলীয় শক্তির ভিত্তিতে সরকারবিরোধী কর্মসূচি প্রণয়নের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করলেও তাতে সমন্বয় থাকবে।
নেতারা জানান, পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে খুবই সচেতন। বিএনপির পক্ষে সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার। তাদের মতে, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণযোগ্য হবে না। তাছাড়া জামায়াত প্রশ্নে ঐক্যজোটের নেতাদেরও আপত্তি আছে। এজন্য কৌশলে জামায়াতকে দূরে রেখে এবার মাঠে নামবে বিএনপি।
জামায়াতকে বোঝানো হয়েছে যে, বিএনপির নেতাকর্মীদের চেয়ে জামায়াতের কর্মীরা বেশি কোণঠাসা। তাই এবার দল ক্ষমতায় যেতে না পারলে তাদের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। একসঙ্গে কর্মসূচি না থাকলে বিএনপি কেন জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করছে না? এমন প্রশ্ন করাও কারো সাহস থাকবে না। তাছাড়া অন্য ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে জামায়াত আলাদা প্ল্যাটফর্মে সরকারবিরোধী আন্দোলনও করতে পারবে। জামায়াতের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হবে। সব বিবেচনায় বিএনপির এসব বক্তব্যে ‘অনাপত্তি’ দিয়েছে জামায়াত।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, জামায়াত বিএনপির কোনো অংশ নয় এবং জামায়াতের সঙ্গে আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। ভোটের রাজনীতিতে ২০ দলীয় জোটে তারা আছে। তবে বিএনপির সঙ্গে বাস্তবে তারা নেই। কারণ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরে তারা তেমনভাবে সক্রিয় না।
তিনি বলেন, জামায়াত সব সময় রাজনীতিতে ছিল। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৯০-এর আন্দোলন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। সাইডলাইন থেকে তারা আন্দোলনে ছিল। তাই নির্বাচন ও আন্দোলন কেন্দ্রিক সম্পর্ক যে কোনো সময় যে কোনো দলের সঙ্গেই হতে পারে। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা খুবই সাধারণ বিষয়। একটু অপেক্ষা করুন। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত মেরুকরণ আরো স্পষ্ট ও পরিষ্কার হবে। তাছাড়া তাদের (জামায়াত) সিদ্ধান্ত তারা নেবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ মানুষের চিন্তার জায়গাটি বিবেচনা করলে বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি সামগ্রিক ‘ইনক্লিউসিভনেস’ এর জন্য এখনো প্রস্তত নয়। জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতিতে যে দ্ব›দ্ব, তা আরো কয়েক দশক চলবে। বৈশ্বিক বাস্তবতা, দেশের ভেতরের রাজনৈতিক চর্চা এবং ধর্মীয় কারণে জামায়াতের রাজনীতি টিকে থাকবে। তবে তাদের নিয়ে বর্তমান রাজনীতিতে যেমন ‘ইনক্লিউসিভনেস’ অসম্ভব, ঠিক তেমনি তাদের আদর্শের রাজনীতি ধ্বংস করাও সম্ভব নয়। কারণ, নির্বাচনের হিসাব যাই হোক, পার্শ্ববর্তী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও চায় জামায়াত একটি রাজনৈতিক দলের ছায়া তলে থাকুক। কারণ, আলাদা প্ল্যাটফর্মে রাজনীতির ক্ষেত্র তৈরি করতে পারলে সেটা হবে আরো বিধ্বংসী। তারা নতুন নতুন জঙ্গি সংগঠন তৈরি করবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে।
জামায়াত নেতারা বলছেন, আমরা ২০ দলীয় জোটেই আছি। তবে, যার যার অবস্থান থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কর্মসূচির বিষয়ে উভয়দল একমত হয়েছে। জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতার জন্য কৌশলগত কারণে যেটা উত্তম আমরা সেটাই করব। সেক্ষেত্রে নিজ-নিজ প্ল্যাটফর্মে থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আপত্তি নেই।
তিনি বলেন, এক দফার আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে বর্তমান সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও অবাধ নির্বাচন। এসব দাবি আদায়ে সফলতার জন্য কৌশলগতভাবে যেটা উত্তম সেটাই করা হবে। কৌশলগত কারণে যেভাবেই আন্দোলন হোক, ২০ দলীয় জোটের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সবার সম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাছাড়া জোটের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত জামায়াত। বিএনপি অস্বস্তি বোধ করলে আমাদের পক্ষ থেকেও জোট ছাড়ার ঘোষণা আসতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়